Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Ashok Bhattacharya

Subrata Mukherjee Death: মেয়র সুব্রতের ফাইল আটকানোয় অফিসারকে বদলি করেছিল সরকার

সতীর্থ: তখন কলকাতার মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়। অশোক ভট্টাচার্য রাজ্যের পুরমন্ত্রী। শহরের উন্নয়ন নিয়ে মেয়র পারিষদদের সঙ্গে পুর ভবনে এক বৈঠকে দু’জন।

সতীর্থ: তখন কলকাতার মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়। অশোক ভট্টাচার্য রাজ্যের পুরমন্ত্রী। শহরের উন্নয়ন নিয়ে মেয়র পারিষদদের সঙ্গে পুর ভবনে এক বৈঠকে দু’জন। ফাইল চিত্র

অশোক ভট্টাচার্য (রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী ও শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র)
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৩০
Share: Save:

সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় ‘নাটের গুরু’। আর তাঁর সঙ্গী প্রিয়-সুব্রত। এঁদের কালো হাত ভেঙে দেওয়ার ডাক সঙ্গে নিয়েই আমাদের রাজনীতির শুরু। সিদ্ধার্থ-জমানার বিশ্বস্ত মন্ত্রী, এই পরিচয়ই জানতাম ওঁর।

কিন্তু এই পরিচয়ের বাইরেও যে অন্য সুব্রত মুখোপাধ্যায় আছেন, জানতে পারলাম বিধানসভায় গিয়ে। ওঁর সঙ্গে আলাপ বিধানসভায় গিয়েই। আমাদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক হত। তবে গোটাটাই রাজনৈতিক। বিভিন্ন বিলের উপরে যতটা দেখেছি, যুক্তি দিয়েই কথা বলতেন। আমি পুরমন্ত্রীর দায়িত্বে তখন। কোনও সিদ্ধান্ত বা বিলের বিরোধিতা করছিলেন সুব্রতবাবু। অধিবেশনের বাইরে ওঁকে এক বার বললাম, ‘‘আপনি নিজে তো পুরমন্ত্রী ছিলেন। আপনি বিষয়টার গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না?’’ উনি হেসে জবাব দিলেন, ‘‘আমি তো মন্ত্রী ছিলাম হরপ্পা-মহেঞ্জোদড়োর আমলে! তা-ই দিয়ে কী হবে! কী আর এমন বুঝি?’’ নিজের সম্পর্কে এই রসিকতা থেকেই সম্পর্কটা সহজ হয়ে গেল।

তার পরে সেই সুব্রতবাবু কলকাতা পুরসভার মেয়র হলেন। তৃণমূল কংগ্রেসের পুরবোর্ড। রাজ্যের সরকারে আমরা মানে বামফ্রন্ট। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেখা করতে এলেন পুরমন্ত্রীর সঙ্গে। তাঁকে সে দিনই বলেছিলাম, পুর ও নগরোন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে আপনি যা বলবেন, সেটাই অগ্রাধিকার হবে। কোনও ভাবে এমন ধারণা তৈরি হতে দেওয়া যাবে না যে, আপনি বিরোধী দলের মেয়র বলে আপনার মত বা আপনার দাবি গুরুত্ব পাচ্ছে না। সুব্রত জানালেন, প্রয়োজন হলেই তিনি যোগাযোগ করবেন।

এর পরে একটা ঘটনা বিশেষ করে মনে পড়ছে। কলকাতা পুরসভার একটা প্রকল্পের জন্য এডিবি-র কাছ থেকে প্রায় দু’হাজার কোটি টাকা ঋণ পাওয়ার কথা ছিল। শর্ত ছিল, রাজ্য সরকারের সম্মতি লাগবে। কিন্তু আমাদের প্রশাসনের এক জন আধিকারিক পুরসভার সেই ফাইল আটকে দিলেন। বিষয়টা জেনে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বললাম। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সেই আইএএস অফিসারকে বদলি করে দেওয়া হল। বিরোধী দলের হাতে পুরসভা আছে বলে প্রশাসনিক কর্তারা রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে প্রকল্প আটকে দেবেন, এটা হতে দেওয়া যাবে না— এই বার্তাই সে দিন দিতে চেয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। মন্ত্রী হিসেবে রাজভবনের কোয়ার্টারে থাকতাম তখন। মনে আছে, একটা রবিবার ছিল। পুরসভার অফিসার সঙ্গে নিয়ে সুব্রতবাবু এলেন আমার ওখানে। প্রকল্পের কাজ শুরু করে দেওয়ার আলোচনা হল।

সুব্রতবাবু মেয়র থাকার ওই পাঁচটা বছর নানা অনুষ্ঠানে একত্রে গিয়েছি। পুরসভার একটি জল-প্রকল্পের উদ্বোধনে উনি আমাকে আমন্ত্রণ করলেন। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হওয়ার কথা তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যেখানে তিনি থাকবেন, সেখানে আমার যাওয়া শোভন হবে কি না ভাবছিলাম। সুব্রতবাবুই বললেন, ‘‘আপনার যাতে কোনও অসম্মান না হয়, সেটা দেখা আমার দায়িত্ব।’’ নির্বিঘ্নেই অনুষ্ঠানটা হয়ে গিয়েছিল।

সময়ের জল গড়িয়ে পরে আমি বিরোধী দলের বিধায়ক এবং শিলিগুড়ির মেয়র হয়েছি। সুব্রতবাবুর হাতে তখন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। বলতে খারাপ লাগছে, দরবার করেও শিলিগুড়ির জন্য একটা জল-প্রকল্পের কাজে সরকারি সহায়তা মেলেনি। ব্যক্তি সুব্রতবাবু প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ব্যাপারটা তাঁর হাতে নেই।

আমাদের মধ্যে রাজনীতিতে প্রবল বিরোধ। কিন্তু সম্পর্ক ছিল তার ঊর্ধ্বে। সুব্রতবাবুর বিদায়ের কালে মনে পড়ছে সেই সব দিনের কথা, যখন শাসক ও বিরোধীর মধ্যে আদানপ্রদানের সম্পর্ক ছিল। বিরোধী বলে শাসক তাকে উপেক্ষা বা বৈষম্য করত না, বিরোধীও নির্দ্বিধায় সরকারের কাছে সমস্যার কথা নিয়ে আসত। আজকের বাংলায় যে সংস্কৃতিটা প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বললেও অতিশয়োক্তি হয় না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE