n (বাঁ দিকে) ফুটনানি চেম্বারের দৈন্য দশা। (ডান দিকে) ভিতরের সিঁড়িতে ফাটল। নিজস্ব চিত্র
বৌবাজারে মেট্রোর সুড়ঙ্গ-বিপর্যয় ‘ধস’ নামিয়েছে এস এন ব্যানার্জি রোডের ফুটনানি চেম্বারেও। তিন বছর আগে ওই বিপর্যয়ের সময়ে মাটির উপরিভাগে এতটাই নড়াচড়া হয়েছে যে, তার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফুটনানি চেম্বারের ভিত। ওই ভবনে আগেই থাকা ফাটলগুলি যে ভাবে মেট্রোর বিপর্যয়ের কারণে আরও বড় আকার নিয়েছে, তাতে গোটা ভবনটিই বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। এই মর্মে কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষের কাছে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে ফুটনানি চেম্বার সংস্কারের পরামর্শদাতা হিসাবে নিযুক্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুই বিশেষজ্ঞ, প্রফেসর গোকুল মণ্ডল এবং ভিজ়িটিং প্রফেসর বিশ্বজিৎ সোমের তরফে পুর কর্তৃপক্ষের কাছে কিছু দিন আগে জমা পড়েছে ওই রিপোর্ট। তাতে আরও বলা হয়েছে যে, এগুলি গুরুতর ফাটল। যা ভিতের নড়াচড়ার ফলে এবং ভবনের একদম শেষ প্রান্তে তৈরি হয়েছে। সেই কারণে এই ফাটলের সম্প্রসারণ রুখতে জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ পদক্ষেপ করা দরকার।
পুরসভা সূত্রের খবর, ওই রিপোর্টে এ-ও বলা হয়েছে যে, এমনিতে ফুটনানি চেম্বারের ভিত এমন মাটির উপরে তৈরি যা জলীয় পদার্থ শোষণ করে নরম, প্রসারিত হয়ে যায়। আবার জলীয় পদার্থের পরিমাণ কমে গেলে সেই মাটি শুকিয়ে সঙ্কুচিত হয়। যার অবশ্যম্ভাবী প্রভাব পড়ে ভিতের উপরে। এর ফলে ভিতে ফাটল তৈরি হয়। যা এ ক্ষেত্রেও হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘বৌবাজারে সুড়ঙ্গ-বিপর্যয়ের কারণে মাটির যে ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়েছিল, তার প্রভাব পড়েছে ফুটনানি চেম্বারের ভিতেও। বিশেষ করে ভবনটির উত্তর প্রান্ত সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’ গোকুল বলছেন, ‘‘মেট্রোর সুড়ঙ্গে কাজ চলার সময়ে মাটির ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়েছিল তিন বছর আগে। তাতে বৌবাজার এলাকার বাড়িগুলি তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেই, বাদ পড়েনি ফুটনানি চেম্বার বা তার সংলগ্ন ভবনগুলিও।’’ বর্তমানে ওই ভবনের অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, নিরাপত্তার কথা ভেবে উপরের দু’টি তল ভেঙে ফেলার সুপারিশও করা হয়েছে রিপোর্টে। বিশ্বজিতের কথায়, ‘‘রিপোর্টে ফুটনানি চেম্বারের জায়গায় নতুন কিছু ভাবনাচিন্তা করার সুপারিশ করা হয়েছে। অর্থাৎ, সার্বিক নিরাপত্তার কথা ভেবে পুরো ভবনটিই ভেঙে যদি নতুন ভাবে করা যেত আর কী। যদি তা সম্ভব না-ও হয়, তা হলেও উপরের দু’টি তল ভাঙতেই হবে।’’
এর কারণ ব্যাখ্যা করে বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এমনিতে দীর্ঘদিন ফুটনানি চেম্বারের সংস্কার হয়নি। চূড়ান্ত অবহেলায় পড়ে রয়েছে শহরের প্রায় মধ্যস্থলে থাকা এই কাঠামো। তা ছাড়া, ভিতরের কাঠামোয় ইচ্ছামতো হস্তক্ষেপ করেছেন সেখানকার বাসিন্দারা। কেউ একাংশ সম্প্রসারণ করেছেন, কেউ আবার নতুন কোনও নির্মাণ তুলেছেন নিজের সুবিধা অনুযায়ী। এ সবের ফলেওই প্রাচীন ভবনের ভারসাম্যপুরোপুরি বিঘ্নিত হয়েছে। পুরো ভবনটাই বর্তমানে বিপজ্জনক অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।
প্রসঙ্গত পুর নথি জানাচ্ছে, ১৯১০-’১১ সালে ‘হিন্দুস্থান কোম্পানি ইনসিয়োরেন্স’ নামে একটি সংস্থাকে ৯৯ বছরের জন্য ফুটনানি চেম্বার লিজ়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন পুর কর্তৃপক্ষ। লিজ়ের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও অন্য একটি সংস্থা নিজেদের ‘সাব লিজ় হোল্ডার’ হিসাবে দাবি করে সংশ্লিষ্ট ভবনটি তাদের দখলে রেখেছিল। শেষমেশ ২০১৮ সালে আদালতের রায়ে ফুটনানি চেম্বার পুরসভার দখলে আসে। তার পর থেকেই ফুটনানি চেম্বারের সংস্কারের জন্য উদ্যোগী হয়েছেন কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy