মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কলকাতায় হকারদের সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছিল বছর দেড়েক আগে। অভিযোগ, দেড় বছর পার হতে চললেও এখনও সেই হকার সমীক্ষার রিপোর্ট কলকাতা পুরসভার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়নি। নিয়ম মতো, শহরের বৈধ হকারদের এত দিনে ভেন্ডিং শংসাপত্রও হাতে পাওয়ার কথা। কিন্তু সেই শংসাপত্র না পাওয়ায় অনেক হকার কলকাতা পুর ভবনে নিয়মিত এসে হতাশ হয়ে ঘুরে যাচ্ছেন।
হকারদের দৌরাত্ম্য দেখে ২০২৪ সালের জুন মাসে প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে নবান্নে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সে দিন ভর্ৎসনা করে জানিয়েছিলেন, নতুন করে হকার বসালে গ্রেফতার হতে হবে। রাস্তা দখলের জন্য দায়ী পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতারা। নবান্নে সেই বৈঠকের পরেই হকার নিয়ন্ত্রণে অভিযানে নামে পুলিশ। শহরের নানা প্রান্তে হকারদের সমীক্ষার কাজ শুরু হয়। পুর সচিবালয় সূত্রের খবর, সমীক্ষা অনুযায়ী কলকাতায় প্রায় ৫৪ হাজার বৈধ হকারের তালিকা পাওয়া গিয়েছে। এঁদের মধ্যে ৮,৭২৭ জন হকারকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাঁরা সমস্ত বিধি মেনে ব্যবসা করছেন।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও হকারদের তালিকা প্রকাশের কাজ নিয়ে কেন এত উদাসীন পুর কর্তৃপক্ষ?
এ প্রসঙ্গে হকার সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক শক্তিমান ঘোষের অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পরে দেড় বছর পার হতে চললেও এক জন হকারকেও শংসাপত্র প্রদান করা হল না। ৮,৭২৭ জন বৈধ হকারের নাম পুরসভার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হল না। ৫৪ হাজার হকার কবে শংসাপত্র পাবেন, তা নিয়ে আমরা যথেষ্ট সন্দিহান।’’ শক্তিমান নিজে টাউন ভেন্ডিং কমিটির সদস্য। হকারদের সমীক্ষার কাজটি যে কলকাতা পুরসভা সম্পূর্ণ দায়সারা ভাবে করেছে, তা জানাতে দ্বিধাবোধ করেননি তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে তড়িঘড়ি যে ভাবে হকারদের সমীক্ষার কাজ করা হয়েছিল, তাতে বিস্তর ত্রুটি রয়েছে। পুরকর্মীরা নিজেদের খুশি মতো হকার সমীক্ষায় গিয়েছেন। যে সময়ে হকারেরা থাকেন, সেই সময় বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে ৫৪ হাজারের যে হকার তালিকার কথা বলা হচ্ছে, তাতে বিস্তর ফাঁক আছে।’’ ১৯৯৬ সালের ২৫ নভেম্বর কলকাতা পুরসভা হকার উচ্ছেদে সামিল হয়েছিল। ওই দিনটি স্মরণে রেখে হকার সংগ্রাম কমিটি আগামী ২৫ নভেম্বর রাস্তায় নামবে। শক্তিমান জানান, শহরের হকারদের দ্রুত ভেন্ডিং শংসাপত্র যাতে প্রদান করা হয়, সে বিষয়ে মেয়র ও পুর কমিশনারকে হলফনামা দেওয়ার কথা রয়েছে তাঁদের।
প্রশ্ন উঠেছে, শহরে বৈধ হকারদের ভেন্ডিং শংসাপত্র প্রদান না করা, পুর ওয়েবসাইটে হকারদের তালিকা প্রকাশ না করার বিষয়টিতে কি পুর সচিবালয় দফতরের গড়িমসিই প্রকট হয়ে উঠেছে? প্রসঙ্গত, পুর সচিবালয় দফতরের অধীনে হকার পুনর্বাসন নিয়ে আলাদা একটি বিভাগ রয়েছে। পুর আধিকারিকদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, হকার নিয়ে আস্ত একটা বিভাগ থাকা সত্ত্বেও কাজে এত শিথিলতা কেন? সেই প্রশ্নের সদুত্তর অবশ্য মেলেনি।
কেন দেড় বছর পরেও হকারদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা পুর ওয়েবসাইটে প্রকাশ হয়নি? কেন বৈধ হকারেরা এখনও শংসাপত্র পাননি? এর উত্তরে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (হকার পুনর্বাসন কমিটি) দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘কিছু জনকে দেওয়া হয়েছে। বাকিদের দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সবটা খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)