E-Paper

লোপাটের উদ্দেশ্যেই দেহ টুকরো টুকরো করে অভিযুক্ত 

ভোরে দেহাংশ ফেলার পরে বিশ্রাম নিতে কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়েও নিয়েছিল আতিউর। গল্ফ গ্রিনে কাটা মাথা উদ্ধারের ঘটনায় ধৃত আতিউর লস্করকে জেরা করে এমনই তথ্য হাতে পেয়েছেন তদন্তকারীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৪০
ভোরে বস্তায় ভরে মুণ্ড ফেলে আসার পরে সিসি ক্যামেরার নজরে পড়ে যাওয়ার ভয়ে পরিকল্পনা বদলায় অভিযুক্ত।

ভোরে বস্তায় ভরে মুণ্ড ফেলে আসার পরে সিসি ক্যামেরার নজরে পড়ে যাওয়ার ভয়ে পরিকল্পনা বদলায় অভিযুক্ত। —প্রতীকী চিত্র।

শ্বাসরোধ করে খুনের পরে দেহ লোপাট করতেই সেটি টুকরো টুকরো করার পরিকল্পনা করেছিল আতিউর। টুকরো দেহাংশ বস্তায় ভরে আলাদা আলাদা জায়গায় ফেলার পরিকল্পনা করেছিল সে। কিন্তু ভোরে বস্তায় ভরে মুণ্ড ফেলে আসার পরে সিসি ক্যামেরার নজরে পড়ে যাওয়ার ভয়ে সেই পরিকল্পনা বদলায় অভিযুক্ত। যেখানে সে রঙের কাজ করছিল, তার পিছনে পরিত্যক্ত অংশে ফেলে দেয় বাকি দেহাংশ। ভোরে দেহাংশ ফেলার পরে বিশ্রাম নিতে কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়েও নিয়েছিল আতিউর। গল্ফ গ্রিনে কাটা মাথা উদ্ধারের ঘটনায় ধৃত আতিউর লস্করকে জেরা করে এমনই তথ্য হাতে পেয়েছেন তদন্তকারীরা। শনিবার রাতে অভিযুক্তকে নিয়ে ফের এক বার ঘটনাস্থলে যান তাঁরা। তবে পূর্ব পরিকল্পনা করেই যে এই খুন, তা নিয়ে এক প্রকার নিশ্চিত তদন্তকারীরা।

গ্রাহাম রোড থেকে এক মহিলার কাটা মুণ্ড উদ্ধারের ঘটনায় শনিবারই গ্রেফতার করা হয়েছিল আতিউরকে। রবিবার তাকে আলিপুরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের আদালতে পেশ করা হয়। সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল ধৃতের ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘‘নৃশংস ভাবে এক জন মহিলাকে খুন করে খণ্ড খণ্ড করে কাটা হয়েছে। খুনের ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কিনা, তা জানার জন্য অভিযুক্তকে পুলিশি হেফাজতে রাখা প্রয়োজন।’’ বিচারক ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত আতিউরকে পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছেন বলে আদালত সূত্রের খবর।

খাতেজা বিবি।

খাতেজা বিবি। -নিজস্ব চিত্র।

শুক্রবার সকালে ওই কাটা মাথা উদ্ধারের পরে তদন্তে নেমে শনিবার মহিলার পরিচয় জানতে পারে পুলিশ। জানা যায়, উদ্ধার হওয়া কাটা মুণ্ডটি খাতেজা বিবি নামে এক মহিলার। বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের টানাপড়েনের জেরে খাতেজাকে তাঁরই বোনের স্বামী আতিউর খুন করেছে বলে তদন্তে উঠে আসে। পুলিশের দাবি, শনিবার আতিউরকে গ্রেফতারের পরে জিজ্ঞাসাবাদে সে খুনের কথা স্বীকার করে নেয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’বছর ধরে বিবাহ বিচ্ছিন্না খাতেজার সঙ্গে আতিউরের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সম্প্রতি সেই সম্পর্কে চিড় ধরে। বিবাদের কারণে দু’দিন আগে আতিউরের ফোন নম্বর ব্লক করে দিয়েছিলেন খাতেজা। সেই রাগেই তাঁকে খুনের পরিকল্পনা করে আতিউর, এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, খাতেজা কলকাতার কোথায় কোথায় কাজ করতেন, তা জানত আতিউর। সেই মতো ঘটনার দিন বিকেলে কাজ শেষে খাতেজার কাজে চলে গিয়েছিল সে। টালিগঞ্জের মালঞ্চ সিনেমার কাছে দু’জনে দেখা করে। এর পরে খাতেজাকে বুঝিয়ে সন্ধ্যার দিকে যেখানে আতিউর রঙের কাজ করছিল, সেখানেই তাঁকে ডেকে আনে সে। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় বাকি শ্রমিকেরা চলে গিয়েছিলেন। ফ্ল্যাটে তখন কেউ ছিল না। এর পরে সেখানেই শ্বাসরোধ করে খাতেজাকে খুন করে অভিযুক্ত। ময়না তদন্তের রিপোর্টেও পুলিশ প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছিল, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাত ন’টার মধ্যে খাতেজাকে খুন করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, প্লাস্টার অব প্যারিসের কাজে ব্যবহৃত ধাতব পাত দিয়ে খাতিজার গলা ও বাকি দেহাংশ কেটে টুকরো করে বস্তাবন্দি করে আতিউর।

শনিবার রাতে ঘটনাস্থল থেকে সেই ধাতব পাত উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে এই খুনের ঘটনায় আতিউরকে কেউ সঙ্গ দিয়েছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘আতিউরের বয়ানের সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। ধৃতকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাকে জেরা করে খুনের ঘটনায় আরও কেউ যুক্ত ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

police Death Investigation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy