মহানগর লাগোয়া দেশের সব থেকে ঘিঞ্জি পঞ্চায়েত এলাকাগুলির চেহারাও সহজেই পাল্টে যেতে পারে। এলাকার পুকুরগুলির সংস্কারই বয়ে আনতে পারে ফুসফুস ভরা তাজা হাওয়ারমুক্তি। দেশে নগরায়ণের বাড়বাড়ন্তের দিনে কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েতিরাজ মন্ত্রকের কাছে এই দাওয়াই পেশ করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের সব থেকে জনবহুল গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির পরিবেশ রক্ষা এবং সুষম বিকাশ পরিকল্পনায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহায্য নিচ্ছে কেন্দ্র। পঞ্চায়েত ধরে ধরে জিআইএস ম্যাপ নির্মাণ এবং উন্নয়নপরিকল্পনার প্রকল্পটিতে যাদবপুরের গবেষণা নতুন দিশা খুঁজেছেসব থেকে কঠিন পরিস্থিতিতে।
উত্তর ২৪ পরগনায় নিউ টাউনের কাছে রাজারহাট-বিষ্ণুপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার হরিহরপুর অঞ্চল দু’টিকে সামনে রেখে যাদবপুরের সমীক্ষা ও পরিকল্পনা মেলে ধরা হয়েছে। কেরল, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া এত জনসংখ্যাদেশের অন্য রাজ্যের পঞ্চায়েতে তেমন নেই বলেই দাবি। যাদবপুরের স্থাপত্যবিদ্যা, সিভিলইঞ্জিনিয়ারিং এবং ভূগোল বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা এই গবেষণারশরিক।
কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রাম পঞ্চায়েত স্পেশিয়াল ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান নামের প্রকল্পটি দেশের ১৪টি রাজ্যের ৩৬টি পঞ্চায়েত এলাকায় কার্যকর করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দিল্লিতে গিয়ে এই পরিকল্পনার কথা শুনিয়েএসেছেন যাদবপুরের শিক্ষক, ছাত্রেরা। আর কয়েক দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা পড়বে। যাদবপুরের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপিকা মধুমিতা রায়বলছিলেন, ‘‘এই প্রকল্পে আমাদের জন্য নির্দিষ্ট পঞ্চায়েতগুলিতে কাজ করা বেশ কঠিন ছিল। কারণ, এর জনসংখ্যা। দেশের অনেক রাজ্যেই পঞ্চায়েতগুলির যাজনসংখ্যা, পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি পঞ্চায়েতে তা জনঘনত্বের পরিমাণ। অনেক পঞ্চায়েতের দশ গুণ ৪০-৪২ হাজার জনসংখ্যার পঞ্চায়েতেই আমরা কাজ করেছি। সেই সঙ্গে কংক্রিটের জঙ্গল, ওই সব পঞ্চায়েত এলাকাতেও ছেয়ে গিয়েছে।নিকাশির সমস্যায় জল জমা, জঞ্জাল বা বর্জ্য সংস্কারের দুর্বলতায় পরিস্থিতি বেশ ঘোরালো হয়ে আছে।’’ মধুমিতা এবং পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক অনিমেষ রায়, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অনুপম দেব সরকার, ভূগোলের দেবজিৎদত্তরা মিলে বললেন, এক-একটি পঞ্চায়েতে ১০০০টি লোকের বসতি এলাকা ধরে ‘পঞ্চ নীড় পল্লি’ গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।এক-একটি পল্লিতে পাঁচটি করে থাকবে পুকুর। তাতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, জলশোধন ও নিকাশি, বর্জ্য সংস্কার, মাছ চাষ ও জীববৈচিত্র রক্ষা করে অবসর যাপনের পথও খুলবে। মধুমিতার কথায়, ‘‘গ্রামসভাগুলির সঙ্গে বৈঠকে পুকুরনিয়ে এত পরিকল্পনা শুনে ওঁরা উৎসাহে ফুটছেন। সৌরশক্তির প্রসার ও গ্রামীণ হাট গড়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।’’
যাদবপুরের সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত বলেন, ‘‘গবেষণায় দেশের অগ্রগণ্য প্রতিষ্ঠানযাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। গ্রাম পঞ্চায়েতের উন্নয়নের গবেষণা প্রকল্পটি যাদবপুরের সুনামের প্রতি সুবিচার করছে।’’ একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের স্পার্ক প্রকল্পের (স্কিম ফর প্রোমোশন অবঅ্যাকাডেমিক অ্যান্ড রিসার্চ কোলাবরেশন) আওতায় বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে গাঁটছড়ায় গুরুত্বপূর্ণগবেষণা প্রকল্প যাদবপুর এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে সহ-উপাচার্যজানান।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)