Advertisement
E-Paper

ডেঙ্গি-মৃত্যুর দায় এড়াতে অনড় কলকাতা পুরসভা

স্বাস্থ্যভবনের কর্তারা যাই বলুন না কেন, ডেঙ্গিতে মৃত আনিসা খাতুন কলকাতার বাসিন্দা নন বলে শনিবারও দাবি করল কলকাতা পুরসভা। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী শুক্রবার জানিয়েছিলেন, যে সব তথ্য মিলেছে তাতে জানা গিয়েছে মৃত ওই তরুণী কলকাতার বাসিন্দা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৬ ০০:৫৬
ডেঙ্গি-সচেতনতা অভিযানে মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। শনিবার, দক্ষিণ কলকাতায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

ডেঙ্গি-সচেতনতা অভিযানে মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। শনিবার, দক্ষিণ কলকাতায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

স্বাস্থ্যভবনের কর্তারা যাই বলুন না কেন, ডেঙ্গিতে মৃত আনিসা খাতুন কলকাতার বাসিন্দা নন বলে শনিবারও দাবি করল কলকাতা পুরসভা। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী শুক্রবার জানিয়েছিলেন, যে সব তথ্য মিলেছে তাতে জানা গিয়েছে মৃত ওই তরুণী কলকাতার বাসিন্দা। তা মেনে নেয়নি পুর-প্রশাসন। শনিবার পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্য স্বাস্থ্য ভবন বলার পরে ফের আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি যে ওই তরুণী কলকাতার বাসিন্দা নন। আনিসা খাতুন নার্সিংহোমে যে ঠিকানা দিয়েছিলেন, সেখানেও

খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন পুরসভার কর্মীরা। সেই বাড়ির বাসিন্দারাই জানিয়েছেন, সেখানে আনিসা নামে কেউ থাকতেন না।’’ ওই বাড়ির বাসিন্দাদের দেওয়া লিখিত তথ্য স্বাস্থ্য দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে এ দিন জানান অতীনবাবু।

কিন্তু মৃতার ঠিকানা নিয়ে কেন এত টানাপড়েন? রাজ্যেরই একাধিক চিকিৎসকের কথায়, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে প্রত্যেকেই একে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপাতে ব্যস্ত। তাই মৃত ওই তরুণীর ঠিকানা নিয়ে দড়ি টানাটানি চলছে। কিন্তু এখন ওই দ্বন্দ্বে না গিয়ে পরিষেবার প্রতি আরও নজর দেওয়া উচিত বলে মত ওই চিকিৎসকের।

শনিবার তিন নম্বর বরোতে মশা নিধন অভিযানে নামেন পুরসভা এবং জঞ্জাল অপসারণ দফতরের কর্মীরা। অতীনবাবু জানান, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রাক্তন ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিবারের একটি ছাপাখানা রয়েছে। সেখানে নিকাশি নালা এবং ভেঙে যাওয়া পাঁচিলের পাশে জমা জলে ডেঙ্গিবাহী মশার লার্ভা মিলেছে। পুরসভার দল যখন যায়, তখন সেখানে ছিলেন সৌরভবাবুর দাদা স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। পুরসভার পক্ষ থেকে সমস্ত সাফ রাখার জন্য স্নেহাশিসবাবুকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া, ওই ওয়ার্ডের
একটি স্কুলে নির্মাণ কাজ চলছিল। সেখানেও মেলে এডিস ইজিপ্টাই মশার লার্ভা। স্থানীয় বরো চেয়ারম্যান অনিন্দ্য রাউত জানান, ওই স্কুল-কতৃর্পক্ষকে নোটিস ধরানো হয়েছে। কিন্তু পুরসভার নজরে আগে তা আসেনি কেন জানতে চাইলে অনিন্দ্যের দাবি, দিন কয়েক আগেও পুরসভার একটি দল গিয়ে ওই স্কুলকে সতর্ক করে এসেছিল। তাতেও কাজ না হওয়ায় এ দিন নোটিস ধরানো হয়েছে।

এ দিন কলকাতা পুরসভার এক নম্বর বরোতে মশাবাহী রোগ নিবারণে স্থানীয় কাউন্সিলর ও পুরসভার আধিকারিকদের নিয়ে এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। পুরসভা সূত্রে খবর, কর্মশালায় স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের প্রতিদিন সকাল সওয়া ৮টার মধ্যে স্বাস্থ্য শিবিরে হাজির হতে বলা হয়েছে। ওয়ার্ডের কোথাও মশার আঁতুড় রয়েছে কি না, তা-ও ঘুরে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই বৈঠকেই অনেক কর্মী জানান, স্থানীয় একাধিক থানার সামনে পুরনো গাড়ি ডাঁই হয়ে রয়েছে। সেখানে রীতিমতো মশার চাষ হচ্ছে। অথচ গাড়িগুলি বছরের পর বছর পড়েই থাকে। পুলিশকে বলেও কোনও কাজ হয় না। এ ছাড়া, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে একটি
মাঠকে পুরনো গাড়ির ডাম্পিং গ্রাউন্ড করে রেখেছে পুলিশ। যা মশার আড়ত হয়ে রয়েছে বলে মত পুরকর্মীদের। অতীনবাবুর কাছে এ সব নানা বিষয় নিয়ে কথা তোলেন ওই বরোর স্বাস্থ্যকর্মীরা। অতীনবাবু জানান, খুব শীঘ্রই বিষয়টি
নিয়ে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলা হবে।

এ দিকে, ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে এ দিন গড়িয়াহাটে সাউথ পয়েন্ট, পাঠভবন-সহ একাধিক স্কুলের পড়ুয়ারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জমা জল না রাখার আবেদন জানায়। স্কুলের ভিতরেও সেই কাজে নামে তারা। তাদের উৎসাহ দিতে হাজির ছিলেন এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং স্থানীয় কাউন্সিলর সুদর্শনা মুখোপাধ্যায়। দক্ষিণ কলকাতার পাটুলিতেও এ দিন ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে অভিযান চালায় পুরসভার কর্মীরা। স্থানীয় কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী জানান, তাঁদের এলাকায় দুজন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এঁদের একজন কুয়েত থেকে জ্বর নিয়েই এসেছেন। আক্রান্ত দুই রোগীর বাসস্থানের আশপাশে মশা নিবারণের সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

KMC Dengue
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy