E-Paper

জিডি-র ভরসায় ‘টাকা উদ্ধার’, মামলার মুখে পড়ে সতর্ক পুলিশ

এফআইআর করে এগোনোর জন্য কেন সময় লাগছে, সে ব্যাপারে যেন অভিযোগকারীর মধ্যে কোনও ধোঁয়াশা তৈরি না হয়, সেই দিকটিও দেখতে বলেছেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:১৭
MOney

তড়িঘড়ি টাকা উদ্ধার করতে গিয়ে নিয়ম মেনে এফআইআর রুজু করছে না পুলিশ। প্রতীকী ছবি।

সাইবার প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তির টাকা রাতারাতি উদ্ধার করে দিয়ে প্রশংসা কুড়োনো পুলিশকেই শেষে অপদস্থ হতে হচ্ছে আদালতে! মুখোমুখি হতে হচ্ছে মামলার! কারণ, দেখা যাচ্ছে দ্রুত তদন্তে নেমে টাকা উদ্ধারের তাড়নায় বহু ক্ষেত্রেই তদন্তকারীরা হাঁটছেন স্রেফ একটি জেনারেল ডায়েরির (জিডি) ভরসায়। আগে টাকা আটকাই, পরে এফআইআর হবে, এমন ভাবনায় এগিয়ে শেষে মুখ পুড়ছে বেশ কিছু ক্ষেত্রেই। এই প্রেক্ষিতেই কলকাতা নগরপাল বিনীত গোয়েল এ বার কড়া হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে খবর।

নিয়ম মেনে এগোনোর পাশাপাশি তিনি অভিযোগকারীদের সঙ্গে আরও বেশি করে যোগাযোগ স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন বলে খবর। এফআইআর করে এগোনোর জন্য কেন সময় লাগছে, সে ব্যাপারে যেন অভিযোগকারীর মধ্যে কোনও ধোঁয়াশা তৈরি না হয়, সেই দিকটিও দেখতে বলেছেন তিনি। কিন্তু তড়িঘড়ি টাকা উদ্ধার করতে গিয়ে কেন নিয়ম মেনে এফআইআর রুজু করে এগোনোর পথ ছেড়ে অন্য পথে হাঁটা হবে, সেই প্রশ্ন যাচ্ছে না।

সাইবার প্রতারণার শিকার হয়ে টাকা খোয়া গেলে দ্রুত অভিযোগ দায়ের করার জন্য বলেন পুলিশকর্তারা। যত দ্রুত অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামা যাবে, টাকা উদ্ধারের সম্ভাবনাও তত বেশি থাকবে বলে তাঁরা প্রচার করেন। পুলিশের একাংশের দাবি, অভিযোগ পেয়েই তড়িঘড়ি কাজ করতে গিয়ে ঘটছে বিপত্তি। এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘কেউ সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে পুলিশের দ্বারস্থ হলে প্রথমে সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারীর বয়ানের ভিত্তিতে একটি জেনারেল ডায়েরি করা হয়। নিয়ম হল, এর পরে প্রাথমিক তদন্ত করে প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে নিশ্চিত হলেই নির্দিষ্ট ধারা যুক্ত করে এফআইআর দায়ের করতে হয়। কিন্তু সাইবার প্রতারণায় টাকা খোয়া যাওয়ার বিষয়টি একটু আলাদা। যে হেতু দ্রুত পদক্ষেপ না করলে টাকা নানা মাধ্যমেছড়িয়ে যেতে পারে এবং ফেরানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, তাই প্রথমেই টাকা কোথায় গিয়েছে তা খোঁজ করতে হয়। হদিস মিললে সেটিকে দ্রুত আটকাতে হয়। অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রেই এই পদক্ষেপের পরে এফআইআর দায়ের না করেই টাকা বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া হচ্ছে এবং প্রতারিতকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ কলকাতা পুলিশের সাইবার মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবী এবং পুলিশকর্মীরা জানাচ্ছেন, এর পরে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে আদালতে মামলা হয়ে যাচ্ছে। এক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘ধরা যাক খোয়া যাওয়া টাকার খোঁজ করে কোনও বহুজাতিক ই-কমার্স সংস্থা পর্যন্ত পৌঁছল পুলিশ। এর পরে সেই সংস্থাকে জানানো হল, খোয়া যাওয়া টাকা তাদের ওয়ালেটে পড়েছে, সেটি বাজেয়াপ্ত করা হবে। পরে দেখা যাচ্ছে, এই বাজেয়াপ্ত টাকা নিয়েই আদালতে মামলা হচ্ছে। কারণ, এ ক্ষেত্রে প্রতারিতের টাকা নিয়ে ওই ই-কমার্স সংস্থা থেকে হয়তো কিছু কিনেছে প্রতারক। বদলে জিনিস দিয়েছে সংস্থা। কিন্তু টাকা দিয়ে দিতে হচ্ছে ওই ই-কমার্স সংস্থাকেই। যেটা আদতে তাদের জিনিস বিক্রির মূল্য। পরে এই নিয়েই চ্যালেঞ্জ করে মামলা হচ্ছে আদালতে।’’ লড়তে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, তাড়াহুড়োয় পুলিশ এফআইআর-ই করেনি!

কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাইবার) অতুল ভি যদিও বলেন, ‘‘আইন অনুযায়ী টাকা উদ্ধার করে পাইয়ে দেওয়ার জন্য এফআইআর জরুরি। জিডি করে টাকা বাজেয়াপ্ত করা গেলেও আদালতের পথে প্রতারিতকে টাকা ফিরিয়ে দিতে অবশ্যই এফআইআর থাকা প্রয়োজন। তাড়াহুড়ো না করে আইনের পথে কাজ করতে কেন প্রয়োজনীয় সময় লাগছে, সেটা অভিযোগকারীকে বোঝাতে হবে। বোঝানো গেলেই সমস্যা থাকবে না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kolkata Police Money Laundering

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy