Advertisement
E-Paper

‘ইরান থেকে এখনও বেরোতে পারিনি, বোমায় মরব না নিশ্চিত, তবে কলকাতা কী ভাবে ফিরব জানি না’

যুদ্ধ বিধ্বস্ত তেহরান থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি, তবে মঙ্গলবার রাতটা ইরানেই কাটাতে হবে। এখন সামনে এক নতুন সঙ্কট। শরীর একেবারে ভেঙে পড়েছে।

ফাল্গুনী দে, অধ্যাপক, উইমেন্স ক্রিশ্চিয়ান কলেজ, কলকাতা

ফাল্গুনী দে, অধ্যাপক, উইমেন্স ক্রিশ্চিয়ান কলেজ, কলকাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২৫ ০১:৩৭
রাতেও তেহরানে জ্বলছে আগুন।

রাতেও তেহরানে জ্বলছে আগুন। ছবি: রয়টার্স।

ইরানের আস্ত্রা সীমান্তে গাড়ি থেকে যখন নামলাম, মনে হচ্ছিল এ বার মুক্তি পাব। গত কয়েক দিন তেহরানের হোটেলে কী ভাবে বন্দিদশা কাটিয়েছি সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়ছিল। তবে, একটু ভয়ও লাগছিল। কারণ, এখনও তো ইরানেই রয়েছি। যত সময় গড়াল সেই ভয়টা তত বাড়ল। জানি, বোমায় হয়তো আর মরব না। কিন্তু কলকাতায় ফিরব কী ভাবে? সামনে তো এক নতুন সঙ্কট।

মঙ্গলবার ভোরে যখন এজেন্সির ঠিক করা গাড়িতে বেরিয়েছিলাম, তখনই বুঝেছিলাম সামনে এক কঠিন লড়াই। রাস্তায় বার বার গাড়ি দাঁড় করাতে হচ্ছিল। কখনও খাওয়ার জন্য, কখনও বা তেল ভরানোর জন্য। ইরানে এখন তেলের এত সঙ্কট যে এক বারে বেশি তেল গাড়িতে ভরতে দিচ্ছে না। তবে আমার গাড়ির চালক ও তাঁর স্ত্রীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমি যাতে ঠিকমতো আস্ত্রা সীমান্তে পৌঁছোতে পারি, তার সব ব্যবস্থা তাঁরা করেছেন। চা, জল, খাবার— কোনও কিছুরই অসুবিধা হয়নি।

তবে আস্ত্রা সীমান্তে পৌঁছে যে এই দৃশ্যের সাক্ষী হতে হবে তা আমি ভাবিনি! কাতারে কাতারে লোক। সকলে নিজের দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন। আমিও করেছিলাম। কিন্তু তা আজ রাতে সম্ভব নয়।

আপাতত এখানেই রয়েছেন অধ্যাপক ফাল্গুনী দে।

আপাতত এখানেই রয়েছেন অধ্যাপক ফাল্গুনী দে। ছবি: সংগৃহীত।

তেহরানের হোটেলে বসেই খবর পেয়েছিলাম, আজ়ারবাইজানে ঢুকতে গেলে ই-ভিসা লাগবে। সেই মতো অনলাইনে আবেদনও করেছিলাম। ই-ভিসা পেয়েওছি। তার জন্য ২৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। তবে এখানে পৌঁছে শুনলাম ই-ভিসা দেখিয়ে আমি আজ়ারবাইজানে ঢুকতে পারব না। ওই ভিসায় শুধু বিমানে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া যায়। সড়কপথে সীমান্ত পেরোতে দরকার আজ়ারবাইজান সরকারের অভিবাসন (ইমিগ্রেশন) দফতরের দেওয়া একটা ‘মাইগ্রেশন কোড’।

জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে সেটার আবেদনও করলাম। ইরান সরকার বলছে, আমাকে তারা যেতে দেবে। কিন্তু আজ়ারবাইজানে ঢুকতে দেবে না। কথা বলে জানলাম, ওই মাইগ্রেশন কোড পেতে ১৫ দিন সময় লাগবে। এই ১৫ দিন আমি কী করব? কোথায় থাকব? হাতে টাকা প্রায় নেই। শরীর একেবারে ভেঙে গিয়েছে। এ বার মনের জোরও কমছে। ১৫ দিনের মধ্যে ইরানের যুদ্ধ পরিস্থিতি তো ঠিকও হয়ে যেতে পারে! তা হলে কেন এত কষ্ট করে তেহরান থেকে ৮০০ কিলোমিটার দূরে এলাম?

ভেবেছিলাম, বুধবারই আজ়ারবাইজানের বাকু থেকে দেশে ফেরার চেষ্টা করব। পরিবার, বন্ধুবান্ধবদের সে কথা বলেছি। ওরা ওখান থেকেই বাকুতে হোটেল ভাড়া করে দিয়েছিল। মুম্বইয়ে ফেরার বিমানের টিকিটও কাটা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বাকুতে তো যেতেই পারলাম না! তার মধ্যেই খবর পেলাম মুম্বই যাওয়ার সেই বিমানও বাতিল হয়ে গিয়েছে। যুদ্ধের তেহরান থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি বটে, কিন্তু এখন সামনে এক অন্য লড়াই।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শান্তা দত্ত ম্যাডাম, পর্বতারোহী দেবাশিস বিশ্বাস প্রথম থেকেই আমাকে সব ধরনের সাহায্য করেছেন। কেমন আছি, কী ভাবে এখান থেকে বেরোব, সেই সব খোঁজ নিচ্ছেন। তেহরানে ভারতের রাষ্ট্রদূত গৌরব শ্রেষ্ঠর সঙ্গেও যোগাযোগ আছে। তাঁদের সাহায্যেই আজ়ারবাইজান সরকারের কাছে আবেদন করেছি, যাতে গুরুত্ব দিয়ে আমার বিষয়টা একটু দেখা হয়। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তো একটু তাড়াতাড়ি মাইগ্রেশন কোড দিয়ে দিতে পারে। এখনও কি সেই পুরনো নিয়ম মেনে সব করতে হবে? ভাবতেই অবাক লাগছে।

রাস্তায় আসতে আসতেই আলোচনা করছিলাম, ইরান থেকে বার হওয়ার অন্য কোনও পথ আছে কি না। বিকল্প পথ একটাই। আর্মেনিয়া হয়ে ভারতে ফেরা। কিন্ত আর্মেনিয়ার সীমান্তে যেতে গেলে আরও ৮-১০ ঘণ্টা সময় লাগবে। তাই আপাতত আস্ত্রা সীমান্তেই রাতটা কাটাব। কী ভাবে কলকাতা ফিরব বুঝতে পারছি না।

(টেলিফোনে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখন: দেবার্ক ভট্টাচার্য)

Iran-Israel Conflict
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy