Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Kumortuli

Durga Puja 2021: দেবীপক্ষের সূচনায় বাড়ল বিক্রিবাটা, তৃপ্ত কুমোরটুলি

পটুয়াপাড়ার আর এক শিল্পী অমল পাল জানান, করোনা পরিস্থিতির কথা ভেবে তিনি কম ঠাকুর গড়েছিলেন।

আগমন: মহালয়ার মেঘলা দুপুরে কুমোরটুলি থেকে মণ্ডপের পথে দুর্গাপ্রতিমা। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

আগমন: মহালয়ার মেঘলা দুপুরে কুমোরটুলি থেকে মণ্ডপের পথে দুর্গাপ্রতিমা। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৩৬
Share: Save:

এক দিকে অতিমারির তৃতীয় ঢেউয়ের শঙ্কা, অন্য দিকে লাগাতার বৃষ্টি। এই জোড়া সমস্যায় কুমোরটুলির মুখ ছিল ভার। অবশেষে মহালয়ার দিনে বিক্রিবাটা কিছুটা হলেও হাসি ফোটাল সেখানকার অধিকাংশ মৃৎশিল্পীর মুখে। তাঁরা
জানাচ্ছেন, করোনাকালে যতটা মন্দা বাজারের আশঙ্কা করা গিয়েছিল, ততটা মন্দা আসেনি। শিল্পীদের আরও বক্তব্য, দুর্গাপ্রতিমা বানানোর সরঞ্জামের দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা খুব বেশি প্রতিমা এই বছর তৈরি করতে পারেননি ঠিকই। তাই ঠাকুর বিক্রি করে তেমন লাভের মুখ দেখা না গেলেও শেষবেলায় বিক্রি তাঁদের অন্তত আশাহত করেনি। ‘কুমোরটুলি প্রগতিশীল মৃৎশিল্পী ও সাজশিল্পী সমিতি’ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাভাবিক সময়ে যেখানে কুমোরটুলিতে প্রায় ছ’হাজারের কাছাকাছি প্রতিমা তৈরি হয়, সেখানে গত বছর অতিমারির আবহে তৈরি হয়েছিল তার অর্ধেক। এ বছর অবশ্য সেই সংখ্যা খানিকটা বেড়ে সাড়ে চার হাজার দাঁড়িয়েছে।

‘কুমোরটুলি প্রগতিশীল মৃৎশিল্পী ও সাজশিল্পী সমিতি’র সম্পাদক অপূর্ব পাল বলেন, “গত কয়েক দিনে বেশি করে বরাত আসতে শুরু করেছে। যে ক’টি ঠাকুর তৈরির অর্ডার আগে পেয়েছিলাম, তার থেকে কিছু বেশি বানিয়ে রেখেছিলাম বলে জোগান দিতে পেরেছি। তা না হলে সামলানো যেত না।’’ তবে অপূর্ববাবুর মতে, প্রতিমা তৈরি থাকলেও তার সাজ শেষ বেলায় অন্য জায়গা থেকে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়েছে। ফলে প্রতিমা বিক্রি হলেও লাভ খুব বেশি হয়নি। তবে তাঁর ২২টি প্রতিমাই বিক্রি হয়ে গিয়েছে জানালেন অপূর্ববাবু।

পটুয়াপাড়ার আর এক শিল্পী অমল পাল জানান, করোনা পরিস্থিতির কথা ভেবে তিনি কম ঠাকুর গড়েছিলেন। অন্য বার যেখানে ৩০টির মতো ঠাকুর তৈরি করেন, এ বার সেখানে বানিয়েছিলেন ১৫টি। সবগুলিই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। অমলবাবু বলেন, “শেষ বেলায় যা চাহিদা দেখলাম, বেশ কয়েক জনকে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। কারণ, এখন অর্ডার নিয়ে তো কাজ শেষ করতে পারব না।’’ ওই শিল্পীর দাবি, প্রতিমা বিক্রি হলেও দাম বেশি ওঠেনি। দু’-তিন বছর আগে ঠাকুরের যা দাম ছিল, এ বছর প্রায় সেই দামেই অধিকাংশ প্রতিমা বিক্রি করতে হয়েছে। অথচ, আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে অনেকটাই।

এ বছর ৩৫টির মতো প্রতিমা বানিয়েছিলেন ‘কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সংস্কৃতি সমিতি’র সম্পাদক বাবু পাল। তিনি বলেন, “সাধারণত আমি যতগুলি বরাত পাই, তত সংখ্যক ঠাকুরই বানাই। কিন্তু এ বার শেষ দিকে বেশি অর্ডার আসতে শুরু করায় দু’টি প্রতিমা বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। সেগুলি কিনে আমি নিজের মতো করে কিছুটা বানিয়ে নিয়েছি।’’

শেষ দিকে বাজার খানিকটা চাঙ্গা হওয়ার কারণ হিসেবে শিল্পীরা জানাচ্ছেন, আপাতত করোনার প্রকোপ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। ফলে পুজো করা-না করার দ্বন্দ্বে যাঁরা ভুগছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ ছোট করে হলেও পুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তা ছাড়া, কলকাতা হাই কোর্ট ঠাকুর দেখা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেনি। সেটাও অনেক শিল্পীকে অক্সিজেন জুগিয়েছে।

কুমোরটুলির আর এক শিল্পী মন্টু পাল বলেন, ‘‘প্রতিমা বানানোর সরঞ্জামের দাম এতই চড়া যে, বেশি প্রতিমা এ বার বানাতে পারিনি। সেই সঙ্গে করোনাকালে কত প্রতিমা বিক্রি হবে, সেটা নিয়েও অনিশ্চয়তা ছিল। তবে
গত বছরের তুলনায় ভাল বিক্রি হয়েছে।’’

সব শিল্পীই এখন চাইছেন, আগামী বছর করোনা কেটে যাক। শরতের ঝলমলে আকাশের মতো সমাজ করোনামুক্ত হোক। তা হলে তাঁরা আগের মতোই নিশ্চিন্ত হয়ে প্রতিমা গড়তে পারবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kumortuli Durga Puja 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE