Advertisement
E-Paper

কাদেরের বাড়ি ক্ষুব্ধ, স্বস্তি সুজেটের ঘরে

এক বাড়ি ক্ষুব্ধ। খানিকটা হতবাকও। অন্য বাড়িতে আবার যেন ফিরে এল কিছুটা আশার আলো। একই ঘটনার এমনই দুই অভিঘাত। চার বছরের বেশি ফেরার থাকার পরে গ্রেফতার হয়েছে পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত কাদের খান। ইতিমধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২০১২ সালের সেই ঘটনায় ধর্ষিতা সুজেট জর্ডনের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৬ ০১:১৭

এক বাড়ি ক্ষুব্ধ। খানিকটা হতবাকও। অন্য বাড়িতে আবার যেন ফিরে এল কিছুটা আশার আলো। একই ঘটনার এমনই দুই অভিঘাত।

চার বছরের বেশি ফেরার থাকার পরে গ্রেফতার হয়েছে পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত কাদের খান। ইতিমধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২০১২ সালের সেই ঘটনায় ধর্ষিতা সুজেট জর্ডনের। শেষ সময় পর্যন্ত সুবিচারের জন্য লড়াই চালিয়েছেন তিনি। সেই সুজেট না থাকলেও তাঁর লড়াইয়ের যে কিছুটা ফল মিলেছে, তাতেই যেন একটু স্বস্তি পাচ্ছে ওঁর পরিবার।

কিন্তু ঘটনার কথা জানাজানি হতেই যে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, এটা সাজানো ঘটনা! তবু কেন ধরা হল কাদেরকে? সেটাই মেনে নিতে পারছেন না ধৃত কাদের খানের মেজদা বাবর খান। ভাইয়ের গ্রেফতারির খবরটা বাড়িতে বসে টিভিতে তিনিই প্রথম শুনেছিলেন। কিন্তু তিনি মন থেকে মানেন, তাঁর ভাই স্রেফ রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার। শুক্রবার বাবর বলেন, ‘‘পার্ক স্ট্রিটের ঘটনাকে মুখ্যমন্ত্রী সাজানো ঘটনা বলে বর্ণনা করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী ঠিকই বলেছিলেন। ও কখনওই এ রকম কুকাজ করতে পারে না। ওকে ফাঁসানো হয়েছে। আসলে সাজানো ঘটনাটাই পরবর্তী কালে রাজনীতির রঙে রঙিন হয়ে আমার ভাইকে বলির পাঁঠা করেছে।’’

পাড়ার ছেলের গ্রেফতারির খবর চাউর হতেই এ দিন সকালে বেনিয়াপুকুরের নর্থ রেঞ্জের চারতলা লাল-সাদা বাড়িটির সদর দরজা ছিল বন্ধ। দুপুরে সেই বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা গেল, দুই ব্যক্তি দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাঁদের জিজ্ঞাসা করতেই বলে উঠলেন, ‘‘দাদা, বাড়িতে শুধু মহিলারা আছেন। তাঁরা এখন কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।’’

কাদেরের বাড়ি। — নিজস্ব চিত্র

সংবাদমাধ্যমে যে ভাবে কাদেরের সম্পর্কে বলা হচ্ছে, তাতে কিছুতেই একমত নন পড়শিরা। তাঁদের কথায়, ‘‘পাড়ার যে কারও সমস্যায় ছুটে আসত ছেলেটা। কারও টাকার দরকার হলেই হাত বাড়িয়ে দিত।’’

সকালে টিভিতে খবর শুনেই কোর্টে গিয়েছিলেন কাদেরের চার দাদা। বাড়ির সামনে পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে একটি ক্লাবে বসে দুপুরের দিকে টিভি দেখছিলেন কাদেরের মেজদা। চার বছর পরে ভাইয়ের ছবিটা বারবার দেখেই চোখটা ছলছল করে উঠছে তাঁর। পেশায় চামড়ার ব্যবসায়ী বাবরের কথায়, ‘‘পার্ক স্ট্রিটের ঘটনাকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ‘সাজানো ঘটনা’ বলে ঠিক মন্তব্যই করেছিলেন। কিন্তু তাঁর মন্তব্যই সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে ছাপানোয় তুমুল রাজনীতি শুরু হল। আর আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের তিন ভাইকে এই নোংরা রাজনীতির বলি হতে হল।’’

ছেলে যে এ রকম কাজ করতে পারে, তা কিছুতেই মন থেকে মানতে পারেননি কাদেরের বাবা মহম্মদ শুভান খান এবং মা জুবেদা খাতুন। বাবর জানান, ২০১২ সাল থেকে কাদের বেপাত্তা হয়ে যাওয়ার পরে আব্বা-মায়ের রাতের ঘুম উধাও হয়েছিল। ভাইয়ের জন্য চিন্তায় খাওয়াদাওয়া নিয়েও অনিয়ম করতেন। চিন্তায়, রোগে ভুগে ২০১৪-এ প্রথমে আব্বা মারা যান। পরের বছর মৃত্যু হয় মায়েরও।

তাঁর সপ্তম ভাই নাসিরকে আগেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে কাদের খান এবং খুড়তুতো ভাই আলি খানকে পুলিশ গ্রেফতার করায় বাবরের মন্তব্য, ‘‘মিথ্যা কেসে যে ভাবে তিন ভাইকে ফাঁসানো হয়েছে, তাতে আমরাও সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না।’’

অভিনেত্রী নুসরতের প্রসঙ্গ উঠতেই বেরিয়ে এল আরও ক্ষোভ। বাবর বললেন, ‘‘পার্ক স্ট্রিটে ঘটনার মাস ছয়েক আগে নুসরতের সঙ্গে আমার ভাইয়ের এনগেজমেন্ট হয়েছিল। নুসরত আমাদের বাড়ি নিয়মিত আসত। কাদেরের জন্যই নুসরতের কেরিয়ার গড়ে উঠেছে। আর পার্ক স্ট্রিটের ঘটনার পরে সেই নুসরতই বলছে, কাদেরকে নাকি সে চেনে না! কাদেরের সঙ্গে নুসরতের ছবিও আছে আমাদের বাড়িতে।’’

এ দিকে, ২০১৫-র মার্চ মাসে এনসেফেলাইটিসে আক্রান্ত হয়ে সুজেটের মৃত্যুর পরে কার্যত বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল গোটা পরিবার। দেখা দিয়েছিল গভীর সঙ্কট। তা সত্ত্বেও মেয়ের উপরে অত্যাচারের বিচার পেতে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন বাড়ির লোকজন-আত্মীয়স্বজন। এত দিনে এমন একটা খবর পেয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে জর্ডন পরিবারে। তার পরেও অবশ্য প্রকাশ্যে আসতে রাজি হয়নি সুজেটের পরিবার। কারও সঙ্গেই দেখা করতে চাননি তাঁরা।

সকাল থেকে সুজেটের বড় মেয়ে ও বোনের মোবাইলে ফোন করা হলে তা বেজে বেজে কেটে গিয়েছে। বেহালার পর্ণশ্রী এলাকায় যে বাড়িতে সুজেটরা থাকতেন, শুক্রবার সেখানে গিয়ে কারও দেখা মেলেনি। বেলার দিকে সুজেটের বোন কেবল মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়েছেন, ‘‘আমরা খুশি। আইন আইনের পথে চলবে।’’

২০১২-র ফেব্রুয়ারিতে পার্ক স্ট্রিটে গাড়ির ভিতরে গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত হওয়ার পরপরই পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কলকাতা থেকে পালিয়েছিল কাদের ও তার খুড়তুতো ভাই মহম্মদ আলি। দীর্ঘ চার বছর আট মাস কেটে যাওয়ায় খানিকটা যেন আশা ছেড়েই দিয়েছিল সুজেটের পরিবার। কিন্তু হাল ছাড়েনি। পিছিয়েও আসেনি লড়াইয়ের ময়দান থেকে। কাদেরের গ্রেফতার কার্যত সেই লড়াইয়েরই প্রাপ্তি। মোবাইলের মেসেজে সুজেটের বোন লিখেছেন, ‘‘আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।’’ ওই লড়াইয়ে সুজেটের পরিবার পাশে পেয়েছেন আইনজীবীদেরও। তাঁদের উপরেই ভরসা রাখছেন ওঁরা।

Park street Gangrape accused Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy