তোড়জোড়: টিভি সারাতে নিয়ে যাচ্ছেন শিবশঙ্কর পাত্র। বুধবার, ইছাপুরে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
খাওয়াদাওয়া সেরেই বাড়ির টিভিটা বগলদাবা করে বেরিয়ে পড়লেন ইছাপুরের নবাবগঞ্জের শিবেদা।
ভরদুপুরে টিভি নিয়ে চললেন কোথায়?
পরিচিতদের প্রশ্নে বছর পঞ্চাশের শিবশঙ্কর পাত্রের সটান উত্তর—‘‘সারাতে যাচ্ছি।’’ গত রবিবারই বিগড়ে গিয়েছে পুরনো মডেলের ছোট রঙিন টিভিটা। কিন্তু সারানোয় মন ছিল না শিবেদার।
গত ২১ জুন আইসল্যান্ডের কাছে আর্জেন্টিনার হারের পর থেকেই মুষড়ে পড়েছিলেন শিবেদা-সহ পরিবারের সকলে। তাই মঙ্গলবার রাতে মেয়ে নেহা নিজের মোবাইলেই খেলা দেখছিল। আর পাশে চাদরমুড়ি দিয়ে শুয়ে ছিলেন শিবেদা। বললেন, ‘‘মেয়ে বলেছিল, মোবাইলেই খেলা দেখবে। ও দেখছিল আর আমাকে প্রতি মিনিটে আপডেট দিচ্ছিল। ১৪ মিনিটের মাথায় মেসি গোল করেছে শুনেই আমি লাফিয়ে উঠি।’’
তবে ৫১ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে নাইজিরিয়ার ভিক্টর মোসেস গোল শোধ করতেই বুকের ধুকপুকুনি বেড়ে গিয়েছিল শিবেদার। মা কালীর নাম জপের মাত্রাও বেড়ে গিয়েছিল। তবে খেলা শেষের চার মিনিট আগে আর্জেন্টিনা ফের গোল করতেই সকলে কান্নায় ভেঙে পড়েন বলে জানালেন শিবেদার স্ত্রী সন্ধ্যাদেবী। বললেন, ‘‘বিদায় নয়। আরও এগিয়ে গেল আর্জেন্টিনা। বাঙালি খাবার খেয়ে মেসিও মুখ রেখেছে সকলের।’’ ২৪ জুন মেসির জন্মদিনে ছবির সামনে দেহরাদূন চালের ভাত, পাঁচ রকম ভাজা, কাতলা মাছের কালিয়া, মুরগি ও পাঁঠার মাংস, আমের চাটনি, পাঁচ রকমের মিষ্টি, দই, পান সাজিয়ে দিয়েছিলেন সন্ধ্যাদেবীই।
আর মঙ্গলবার রাতে নাইজিরিয়া-বধের আনন্দে খালি গায়ে হাতে আর্জেন্টিনার জার্সি নিয়ে রাত ২টো নাগাদ রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন শিবেদা। দেখা হয় আরও কিছু আর্জেন্টিনা-ভক্তের সঙ্গে। আর্জেন্টিনার ১৪০ পিস জার্সি বিলি করেছিলেন শিবেদা। সিদ্ধান্ত নেন, আরও ৫০টা জার্সি এনে বিলোবেন। বুধবার ভোর থেকে দোকান খুলে বেশ খোশমেজাজেই রয়েছেন তিনি। জানালেন, মেসি এমন ভাবে খেললে তাঁকে কেউ আটকাতে পারবে না। ২৪ জুন মেসির জন্মদিনে রীতিমতো দু’জন পুরোহিতকে এনে ২১ টাকা করে দক্ষিণা দিয়ে মেসির মাথায় আশীর্বাদ করিয়েছেন শিবেদা। আর আর্জেন্টিনার জয়ের জন্য মা কালীর কাছে মানত করেছিলেন তাঁর কলেজপড়ুয়া মেয়ে নেহা। মানরক্ষা হতেই তিনি বুধবার সকালে ছুটেছেন দক্ষিণেশ্বরে।
ঠাকুরঘরে পুজো সেরে বেরিয়েই দেওয়ালে টাঙানো সাদা-কালো ছবিতে প্রণাম ঠুকে সর্বমঙ্গলা স্পোর্টিং ক্লাবের কালীগতি দত্তের আকুতি ছিল, ‘জয় গোষ্ঠ পাল, আমার টিমকে তুমি রক্ষা কোরো।’ আর এ দিন পুজোর ডালা নিয়ে নেহা বাড়ি ঢুকতেই ফুল নিয়ে মেসির মাথায় ঠেকিয়ে শিবেদা বললেন, ‘‘ছেলেটার মান রেখো মা। দলটাকে রক্ষা করো।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy