Advertisement
E-Paper

গঙ্গা-সাফাইয়ের খরচ তুলতে কর বসানোর প্রস্তাব

প্রতিমা বিসর্জনের জেরে গঙ্গা দূষণ নিয়ে বিতর্ক বহু দিনের। এ বছর পুজোর আগে জাতীয় পরিবেশ আদালতে সেই পুরনো বিতর্কই নতুন করে উস্কে দিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী অম্বরনাথ সেনগুপ্ত। আদালতে তাঁর যুক্তি, গঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জনের পরে সাফাইয়ের কাজে পুরসভা জনগণের করের টাকা খরচ করবে কেন?

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:০৮
ভাসানের পরে। বাজে কদমতলা ঘাটে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

ভাসানের পরে। বাজে কদমতলা ঘাটে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

প্রতিমা বিসর্জনের জেরে গঙ্গা দূষণ নিয়ে বিতর্ক বহু দিনের। এ বছর পুজোর আগে জাতীয় পরিবেশ আদালতে সেই পুরনো বিতর্কই নতুন করে উস্কে দিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী অম্বরনাথ সেনগুপ্ত। আদালতে তাঁর যুক্তি, গঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জনের পরে সাফাইয়ের কাজে পুরসভা জনগণের করের টাকা খরচ করবে কেন? কেন পুজো কমিটিগুলির উপরে বিসর্জন কর বসানো হবে না?

পরিবেশবিদেরা বলছেন, গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া হলে প্রতিমার রং, শোলার গয়না জলে মেশে। তাতে জল দূষিত হওয়ার পাশাপাশি জীববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রভাব পড়ে মানুষের জীবন ও জীবিকাতেও। আগে গঙ্গায় নির্বিচারে বিসর্জন দেওয়ার ফলে এই দূষণ মাত্রা ছাড়াত। পরবর্তী কালে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে গঙ্গায় বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিমা তুলে ফেলার ব্যবস্থা করে কলকাতা পুরসভা। কিন্তু কলকাতার সহোদর হাওড়া বা লাগোয়া পুরসভাগুলির কেউই সেই পথে হাঁটেনি। ফলে ফি বছর দশমীর পরে গঙ্গার দূষণ বাড়ে। গত বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, কলকাতার গঙ্গাপাড়ে প্রতিমা সরিয়ে ফেলা হলেও উল্টো দিকে হাওড়ায় প্রতিমা, ফুল-মালা জমে ছিল।

এই পরিস্থিতিতে আদালতে মামলা দাখিল করে অম্বরবাবুর প্রশ্ন, কেন হোসপাইপ লাগিয়ে প্রতিমা গলিয়ে ফেলা হবে না? অম্বরবাবু অবশ্য নতুন কিছু বলেননি। নৈহাটির কালীপুজোয় এ ভাবে বিসর্জন হয়। পুজো কমিটিগুলির কাছে বিসর্জনের এই পদ্ধতি ‘নৈহাটি মডেল’ বলেই পরিচিত। কিন্তু অম্বরবাবুর সওয়ালে যে প্রশ্নটা নতুন ভাবে মাথাচাড়া দিয়েছে, তা হল— বিসর্জন কর বসানো।

অম্বরবাবুর মামলায় কলকাতা পুরসভা হলফনামা দাখিল করে জানিয়েছে, বিসর্জনের ক্ষেত্রে গঙ্গা দূষণ ঠেকাতে পুরসভা সক্রিয়। এ জন্য নিজেদের ভাঁড়ার থেকে কয়েক কোটি টাকা খরচের হিসেবও দিয়েছে তারা। আর সেখানেই প্রশ্ন তুলেছেন অম্বরবাবু। বলেছেন, এই দূষণ ঠেকাতে কেন জনগণের করের টাকা খরচ করা হবে? কেন বিসর্জন দিয়ে দূষণ ছড়ানো পুজো কমিটিগুলির থেকে টাকা নেওয়া হবে না?

অম্বরবাবুর এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন পরিবেশকর্মীরা অনেকেই। তাঁরা বলছেন, লক্ষ-লক্ষ টাকা খরচ করে পুজো করেন যাঁরা, পরিবেশ বাঁচাতে কয়েক হাজার টাকা কর দিতে তাঁরা নিশ্চয়ই রাজি হবেন। এক পরিবেশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘গঙ্গায় বিসর্জন নিষিদ্ধ করা গেলে সবচেয়ে ভাল হয়। কিন্তু তা না হলে কর বসানোটাই সব থেকে ভাল উপায়।’’ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, দিল্লিতে জাতীয় পরিবেশ আদালতের প্রধান বেঞ্চে গোটা দেশের অভিন্ন বিসর্জন-বিধি নিয়ে আলোচনাতেও এই কর নেওয়ার কথা উঠেছিল। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন অফিসার বিশ্বজি‌ৎ মুখোপাধ্যায় আরও এক ধাপ বাড়িয়ে বলছেন, বিসর্জনের দূষণ শুধু গঙ্গায় নয়, গঙ্গা অববাহিকার ছোট ছোট নদী-খালগুলির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে হবে। কারণ, ওই নদী-খালগুলির বেশির ভাগই গঙ্গার সঙ্গে যু্ক্ত। ফলে সেগুলি দূষিত হলে গঙ্গাও রেহাই পাবে না।

বিসর্জন-কর নিয়ে কী বলছেন পুজো উদ্যোক্তা ও পুরকর্তারা? পুজো উদ্যোক্তাদের সংগঠন ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সভাপতি পার্থ ঘোষ বলছেন, আদালত নির্দেশ দিলে বিসর্জন কর সব পুজোকেই দিতেই হবে। পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুজো কমিটিগুলি তো এমনিতেই পুরসভাকে কর দেয়। পুরসভা মনে করলে আরও টাকা নিতে পারে।’’ কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার নিজেও ত্রিধারা সম্মিলনী পুজো কমিটির কর্তা। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এটা বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব। তাই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি। তা না হলে উৎসবের মেজাজে ভাটা পড়তে পারে।’’

কলকাতার প্রাক্তন মেয়র এবং একডালিয়া এভারগ্রিন পুজো কমিটির কর্তা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, প্রত্যেক নাগরিকই সরকারকে কর দেন। তার বিনিময়ে পরিষেবা মেলে। পুজোর সময়ে গঙ্গা সাফাই করে সেই পরিষেবাই দেওয়া হয়। প্রতিটি উৎসবে তো আলাদা ভাবে কর বসানো সম্ভব নয়। পুরকর্তাদের অনেকে বলছেন, গঙ্গা সাফ রাখা প্রশাসনের কাজের মধ্যেই পড়ে।

এ বার অবশ্য পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে ক্রেন ব্যবহার করতে গিয়েও সমস্যায় পড়ছেন পুরকর্তারা। তাঁরা জানান, গঙ্গায় বিসর্জন হলে জলে ক্রেন রাখার কথা। কলকাতা পুর এলাকার ৪০টি ঘাটে বিসর্জন হয়। কিন্তু বাজে কদমতলা ও নিমতলা ঘাট ছাড়া বাকিগুলিতে ক্রেন রাখার কোনও ব্যবস্থা নেই। সম্প্রতি নিমতলাতেও ভাটার সময়ে গভীরতার কারণে ক্রেন রাখা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। সে ব্যাপারে ইতিমধ্যেই কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন পুরকর্তারা। মেয়র পারিষদ (উদ্যান) জানান, গঙ্গা বন্দরের আওতায়। তাই পুরসভা এ ক্ষেত্রে কিছু করতে পারবে না। যা করার বন্দরকেই করতে হবে। বন্দর সূত্রের খবর, বিসর্জনের পরিকাঠামো নিয়ে পুরসভাকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

Ganga Idol Immersion Tax
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy