Advertisement
E-Paper

খুন নয়, মদের ঘোরে দুর্ঘটনাতেই আবেশের মৃত্যু, এখন বলছে পুলিশ

বালিগঞ্জের সানি পার্কে জন্মদিনের পার্টিতে কিশোরের অপমৃত্যুকে খুন বলে আর মনে করছে না পুলিশ। প্রাথমিক পর্যায়ের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুলিশ মনে করছে, বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে মদ্যপান করে কিশোর আবেশ নিজেও বেসামাল ছিল। তার জেরেই দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৬ ১৭:৪৬
আবেশের মৃত্যুকে ঘিরে ক্রমেই ঘনাচ্ছে রহস্য। —নিজস্ব চিত্র।

আবেশের মৃত্যুকে ঘিরে ক্রমেই ঘনাচ্ছে রহস্য। —নিজস্ব চিত্র।

বালিগঞ্জের সানি পার্কে জন্মদিনের পার্টিতে কিশোরের অপমৃত্যুকে খুন বলে আর মনে করছে না পুলিশ। প্রাথমিক পর্যায়ের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুলিশ মনে করছে, বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে মদ্যপান করে কিশোর আবেশ নিজেও বেসামাল ছিল। তার জেরেই দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। তবে মৃত কিশোরের মা খুনের অভিযোগ দায়ের করায়, তার ভিত্তিতেই তদন্ত চলছে। জন্মদিনের পার্টিতে অংশ নিয়েছিল যে ১৭ জন, তাদের মধ্যেই অন্য এক কিশোরের ভূমিকা নিয়ে সংশয় থাকায়, তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ডেকে পাঠিয়েছে।

আবেশের পরিবারের তরফ থেকে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হলেও, নির্দিষ্ট করে কারও নামে অভিযোগ নেই। তবে লেখক অমিত চৌধুরীর মেয়ের জন্মদিনের পার্টিতে কোনও একটি বচসার জেরেই আবেশকে আক্রান্ত হতে হয় বলে তার মা মনে করছেন। বালিগঞ্জ থানার পুলিশ প্রাথমিক ভাবে সেই তত্ত্বের ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু করেছিল। রবিবার সকাল থেকে চার বার বালিগঞ্জ থানার পুলিশ ওই আবাসনে গিয়েছে। বহুতলটির বেসমেন্টের যে অংশে পার্টি চলছিল, সেখান থেকে দফায় দফায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বহুতলটির বাসিন্দাদের সঙ্গে শনিবারের ঘটনা সম্পর্কে বিশদে কথাবার্তা বলা হয়েছে। তার পর তদন্তকারীরা মনে করছেন, আবেশ দাশগুপ্তের মৃত্যু দুর্ঘটনার জেরেও হয়ে থাকতে পারে। খুনের ঘটনা সম্ভবত ঘটেনি।

শনিবার আবেশের মৃত্যুর পর কিন্তু পুলিশ জানিয়েছিল, বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে খুন করা হয়েছে আবেশকে। মদের বোতল ভেঙে তার বুকে, পেটে ও কাঁধে কোপানো হয়েছিল বলেও পুলিশ জানায়। ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই কী এমন হল যে সেই তত্ত্ব থেকে সরে আসতে চাইছে পুলিশ?

এখনই তদন্তের গতিপ্রকৃতির বিষয়ে বিশদে জানাতে চাইছে না বালিগঞ্জ থানা। কিন্তু পুলিশ সূত্রের খবর, যে বহুতল আবাসনের বেসমেন্টে ঘটনাটি ঘটেছে, সেই আবাসনের বাসিন্দাদের সঙ্গে এবং জন্মদিনের পার্টিতে উপস্থিত অন্য কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে কথা বলার পর দুর্ঘটনার তত্ত্বই জোরদার হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, পার্টিতে ১৭ জন কিশোর-কিশোরী ছিল। অনেকেই মদ্যপান করেছিল। আবেশ মদের প্রভাবে কিছুটা বেসামাল হয়ে পড়ে। সেই অবস্থায় হাঁটতে গিয়ে আবেশের হাত থেকে নাকি মদের বোতল পড়ে ভেঙে যায় এবং হোঁচট খেয়ে আবেশ সেই ভাঙা বোতলের উপর উল্টে পড়ে। তখনই ভাঙা বোতল তার বাঁ বাহুর তলার দিকে গেঁথে যায় এবং একটি শিরা কেটে গিয়ে প্রবল রক্তপাত শুরু হয়। মেয়ের জন্মদিনের পার্টি চলাকালীন বাড়ির বেসমেন্টে এত বড় ঘটনা ঘটে গিয়েছে, লেখক অমিত চৌধুরী সম্ভবত প্রথমে তা জানতেন না। জানতে পেরে অমিতবাবু ও তাঁর স্ত্রী বেসমেন্টে নেমে আসেন। তিনিই আবেশকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকরা ওই কিশোরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ সূত্রের খবর, আবেশের বাঁ বাহুর তলার অংশেই সবচেয়ে গভীর ক্ষত পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়া বাঁ হাতে কয়েকটি কাটা দাগ রয়েছে। হাঁটুও একটু ছড়ে গিয়েছে। অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণেই ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

আবেশের মা। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।

পুলিশের সরেজমিন তদন্ত এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যা-ই উঠে আসুক, আবেশ দাশগুপ্তের মা এখনও দুর্ঘটনার তত্ত্ব মানতে রাজি নন। নির্দিষ্ট কারও নামে অভিযোগ না করলেও, তিনি খুনের তত্ত্বে অনড়। ওই পার্টিতে আর যে কিশোর-কিশোরীরা অংশ নিয়েছিল, তাদের অভিভাবকদের এগিয়ে আসার জন্য আবেশের মা অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি মনে করছেন, ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে আসল ঘটনা জেনে মা-বাবাদের এগিয়ে আসা উচিত। পুলিশকে তাঁদেরই জানানো উচিত, অবেশের সঙ্গে ঠিক কী হয়েছিল।

আরও পড়ুন: পরিচারকদের সন্তানেরাও জড়াচ্ছে অপরাধে

কলকাতা পুলিশের মর্গে রবিবারই আবেশের দেহের ময়না তদন্ত হচ্ছে। তার পরিজনদের দাবি মেনে ময়না তদন্তের পুরো প্রক্রিয়ার ভিডিওগ্রাফি করা হচ্ছে। সানি পার্কের যে বহুতল আবাসনে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজও পুলিশ খতিয়ে দেখেছে। জন্মদিনের পার্টিতে কারা যোগ দিতে এসেছে, তারা কখন কোথায় গিয়েছে, সে সব ছবি সিসিটিভি থেকে পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু বেসমেন্টের যে অংশে পার্টি চলছিল, সিসিটিভির মুখ সে দিকে ছিল না। ফলে আবেশ কখন, কীভাবে লুটিয়ে পড়ে, তা সিসিটিভি ফুটেজ থেকে জানা যায়নি। তবে খুনের ঘটনা ঘটে থাকল পার্টিতে উপস্থিত অন্যদের মধ্যে যে প্রবণতা দেখা যেতে পারত, বহুতল চত্বরের অন্যান্য সিসিটিভিতে ধরা পড়া যাওয়া-আসার ছবিতে সেই রকম কোনও প্রবণতা চোখে পড়ছে না বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। যে ১৭ জন পার্টিতে যোগ দিয়েছিল, অঘটনের খবর পেয়ে তাদের প্রায় সবার অভিভাবকই বেসমেন্টে পৌঁছেছিলেন। আবেশকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত তার অন্য বন্ধুরাও সেখানেই ছিল। তবে আবেশের মায়ের দাবি, সবাই খবর পেয়ে গেলেও তাঁকে খবর দেওয়া হয়নি। সব শেষে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছন।

পার্টিতে উপস্থিত এক কিশোরের ভূমিকা নিয়ে কিছুটা সন্দিহান তদন্তকারীরা। তাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ওই কিশোরের মা গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এখন দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন বলেও জানা গিয়েছে।

Abesh Dasgupta Teenager Abnormal Death Ballygunj Sunny Park Murder or Accident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy