E-Paper

আত্মহত্যায় মৃত্যু কমাতে সহায়ক হেল্পলাইন, কিন্তু প্রচার কই

মনোরোগ চিকিৎসক, মনোবিদেরা জানাচ্ছেন, সাধারণত আত্মহত্যার দু’টি ধরন রয়েছে। আকস্মিক ঘটনার প্রেক্ষিতে আত্মহত্যায় চিন্তার ভূমিকা কম।

সুনীতা কোলে

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৫ ০৮:৪৫
সঙ্কটের সময়ে কোথায় ফোন করবেন, তা কি জানেন মানুষ?

সঙ্কটের সময়ে কোথায় ফোন করবেন, তা কি জানেন মানুষ? —প্রতীকী চিত্র।

দ্বিতীয় বার মা হওয়ার মাসখানেক পরের এক সন্ধ্যা। সারা দিন দুই সন্তানকে সামলে ক্লান্ত তরুণী। স্বামী কর্মক্ষেত্রে। শিশুর একটানা কান্নায় তরুণী বিপর্যস্ত। তার মধ্যে হঠাৎই মাথায় আসে বেঁচে না-থাকার ভাবনা। কী ভাবে সেই পথে এগোনো যায়, তা ভাবার মধ্যেও ফেসবুকে মায়েদের একটি গ্রুপে লেখেন নিজের কথা। তার পরেই গ্রুপের সদস্যেরা মেসেঞ্জারে ফোন-মেসেজ করা শুরু করেন, বাড়িয়ে দেন সহমর্মিতার হাত। সেই সন্ধ্যায় মৃত্যু-চিন্তা ঝেড়ে ফেলতে পেরেছিলেন ওই তরুণী, লেখিকা সোমজা দাস। তিনি বলেন, ‘‘সে দিন ঢেউয়ের মতো ফিরে ফিরে আসছিল মৃত্যুর ভাবনা। তবে তার মধ্যেও মনে হচ্ছিল, এই সময়টা কাটিয়ে উঠতে হবে। তাই গ্রুপে লিখি। কয়েক জন অচেনা মানুষের সহানুভূতিপূর্ণ কথা, সাহচর্যই আমায় খাদের ধার থেকে ফিরিয়ে এনেছিল। পরে বুঝেছি, মনের মধ্যে কী হচ্ছে, সেই কথাটা বলা ওই মুহূর্তে কত জরুরি ছিল।’’

মনোরোগ চিকিৎসক, মনোবিদেরা জানাচ্ছেন, সাধারণত আত্মহত্যার দু’টি ধরন রয়েছে। আকস্মিক ঘটনার প্রেক্ষিতে আত্মহত্যায় চিন্তার ভূমিকা কম। অন্য ধরনটির ক্ষেত্রে কয়েক দিন ধরে পরিকল্পনা চলে। একটা আশাহীনতা কাজ করে, কেউ ভাবেন মৃত্যু ছাড়া পথ নেই। একটা দোলাচলের জায়গা তৈরি হয়। আত্মহত্যার চিন্তা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আসতে থাকে। তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় এমন চিন্তার অভিঘাতও গভীর হয়। তবে সেই আবেগ কিছু ক্ষণের জন্যও থামিয়ে দেওয়া গেলে অনেককেই ফেরানো সম্ভব হয়। কেউ এসে যাওয়া, কারও সঙ্গে কথা বলা হতে পারে সেই উপায়। আর এখানেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে আত্মহত্যা প্রতিরোধী হেল্পলাইনগুলি। মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলেন, ‘‘ওই তীব্র আবেগ বা ইমপালসের সময়ে কাউকে যদি সঙ্গ দেওয়া যায়, কথা বলা যায়, কিছু বাস্তববাদী আশ্বাসের মাধ্যমে অন্য দিশা দেখানো যায়, তা হলে মৃত্যু আটকানোর অনেকটাই সুযোগ থাকে। সেখানে হেল্পলাইন খুব ভাল কাজ করতে পারে।’’

কিন্তু আত্মহত্যা প্রতিরোধী হেল্পলাইন কি প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে? সঙ্কটের সময়ে কোথায় ফোন করবেন, তা কি জানেন মানুষ? শহর ও সংলগ্ন এলাকায় সম্প্রতি একের পর এক আত্মহত্যায় মৃত্যুর ঘটনার পরে জোরালো হচ্ছে এই সব প্রশ্ন। খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে একাধিক হেল্পলাইন চালু থাকলেও সেগুলি বেশি রাতে খোলা থাকে না। আবার ২৪ ঘণ্টার সর্বভারতীয় কিছু হেল্পলাইন থাকলেও আঞ্চলিক ভাষায় পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের টেলি-মানস পরিষেবা মেলে সপ্তাহে সাত দিন, ২৪ ঘণ্টাই। হিন্দি, ইংরেজির পাশাপাশি ২০টি আঞ্চলিক ভাষায় মেলে পরিষেবা। আবার বেসরকারি দু’টি ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইনে আঞ্চলিক ভাষায় পরিষেবা মেলার কথা থাকলেও রাতে ফোন করে বাংলায় কথা বলা যায়নি। এর পাশাপাশিই রয়েছে হেল্পলাইন নিয়ে সচেতনতা ও প্রচারের অভাবের দিকটিও। কেন নেই এ নিয়ে প্রচার?

ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট প্রশান্ত রায় বলেন, ‘‘ঘটনা ঘটে যাওয়ার আগে সাধারণ মানুষ এ নিয়ে কথা বলতে চান না। প্রশাসনিক আধিকারিকেরাও তো এর বাইরে নন। অথচ এটা এমন একটা বিষয় যে, যত আলোচনা হবে, কথা হবে, তত মানুষ সহজ হতে পারবেন। অপরাধবোধ, একাকিত্ব থেকে বেরোনোর রাস্তা তৈরি হবে। আর চেনা মানুষের থেকে হেল্পলাইনে অচেনা কারও সঙ্গে কথা বলাটা অনেকের কাছে সহজতর।’’ তাঁর পরামর্শ, মেট্রো স্টেশনের মতো গণপরিসরে হেল্পলাইনের নম্বর, সদর্থক বার্তা লেখা থাকলে বাড়বে সচেতনতা।

পাশাপাশি, আত্মহত্যার খবর পরিবেশনে গণমাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে বলে মত প্রশান্তের। এমন খবরের সঙ্গে হেল্পলাইন নম্বর দেওয়ার রীতি তৈরি করার কথাও বলছেন তিনি। আবার অনিরুদ্ধর পরামর্শ, ‘‘হেল্পলাইন বেশির ভাগই চলে স্বেচ্ছাসেবীদের দিয়ে। সরকারি যোগদান এ ক্ষেত্রে বাড়াতে হবে। অন্য সরকারি প্রকল্পের বহুল প্রচার দেখা যায়, কিন্তু গণমাধ্যমে হেল্পলাইন নম্বরের প্রচার কই?’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Help Line Suicide awareness

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy