Advertisement
১১ মে ২০২৪
Death

প্রসূতি-মৃত্যুতে শীর্ষে কলকাতা, কারণ কি ‘রেফার’ রোগ?

সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, প্রসূতিদের চিকিৎসার আলাদা কেন্দ্র, রেফারাল অ্যাম্বুল্যান্স চালু করার পরেও প্রসূতিদের মৃত্যুর এই চিত্র স্বাস্থ্য দফতরকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।

কলকাতাতেই সরকারি হাসপাতালে সব চেয়ে বেশি সংখ্যায় প্রসূতি-মৃত্যু ঘটছে!

কলকাতাতেই সরকারি হাসপাতালে সব চেয়ে বেশি সংখ্যায় প্রসূতি-মৃত্যু ঘটছে! প্রতীকী ছবি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২২ ০৭:০৭
Share: Save:

কলকাতা এ রাজ্যের প্রধান শহর এবং এখানে সরকারি-বেসরকারি সব স্তরেই রাজ্যের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যায় বলে সাধারণ মানুষের ধারণা। স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান কিন্তু বলছে, গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যের সব জেলার মধ্যে এই কলকাতাতেই সরকারি হাসপাতালে সব চেয়ে বেশি সংখ্যায় প্রসূতি-মৃত্যু ঘটছে!

বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য দফতর উদ্বিগ্ন এবং সম্প্রতি কলকাতার একাধিক সরকারি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে স্বাস্থ্যকর্তাদের বৈঠকও হয়েছে। প্রচুর টাকা খরচ করে সুপার স্পেশ্যালিটি ও মাল্টি-স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, প্রসূতিদের চিকিৎসার আলাদা কেন্দ্র, রেফারাল অ্যাম্বুল্যান্স চালু করার পরেও প্রসূতিদের মৃত্যুর এই চিত্র স্বাস্থ্য দফতরকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) তো বটেই, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরও বার বার স্বীকার করেছে যে, একুশ শতকে দাঁড়িয়ে এক জন প্রসূতির মৃত্যুও লজ্জার বিষয়। বিশেষ করে যেখানে মাতৃমৃত্যু আটকাতে সরকারি স্তরে প্রচুর টাকা খরচ করা হচ্ছে। ২০২১-’২২ সালেও পশ্চিমবঙ্গে ১২৩৪ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। অন্যান্য জেলার নিরিখে এঁদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি প্রসূতি মারা গিয়েছেন কলকাতার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে, ১৭২ জন!

চলতি বছরেও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এ বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছ’মাসে রাজ্যে সরকারি হাসপাতালে ৫৮০ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। এ বারও সব চেয়ে বেশি মৃত্যু কলকাতায়। সংখ্যাটা ছ’মাসেই ৯১-এ পৌঁছেছে, যা অন্য সব জেলার থেকে বেশি। প্রসূতি-মৃত্যুতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মুর্শিদাবাদ, তৃতীয় স্থানে উত্তর ২৪ পরগনা। গত বছরও মুর্শিদাবাদ দ্বিতীয় স্থানে ছিল, তবে তৃতীয় স্থানে ছিল পূর্ব বর্ধমান।

এখন যেখানে ৯৯ শতাংশ প্রসব হাসপাতালে হচ্ছে (ইনস্টিটিউশনাল ডেলিভারি), সেখানে প্রসূতিদের মৃত্যু কমার কথা। কিন্তু তার উল্টোটা হচ্ছে কেন? কলকাতার সর্বোচ্চ স্তরের সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় কেন প্রসূতি-মৃত্যুও সর্বাধিক? কোথায় সমস্যা হচ্ছে? রাজ্যের স্বাস্থ্য-পরিবার কল্যাণ অফিসার অসীম দাস মালাকারের কথায়, ‘‘এসএসকেএম-সহ একাধিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করে আমরা যেটা জানতে পারছি তা হল, জেলা থেকে রেফার হওয়া প্রসূতিরাই মূলত কলকাতায় এসে মারা যাচ্ছেন।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, প্রথমত, একটু জটিল কেস দেখলেই জেলার কিছু চিকিৎসক দায়িত্ব না নিয়ে রেফার করে দিচ্ছেন। সরকারি জায়গার পাশাপাশি বেসরকারি জায়গা থেকেও সঙ্কটজনক রোগীরা রেফার হচ্ছেন। অনেকটা দূরত্ব পেরিয়ে কলকাতায় আসতে গিয়ে প্রসূতির অবস্থা রাস্তাতেই খারাপ হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, হয়তো সত্যিই ওই প্রসূতির চিকিৎসার পরিকাঠামো জেলার সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে নেই। কিন্তু রেফারের সিদ্ধান্ত নিতে সেখানকার ডাক্তারবাবু অসম্ভব দেরি করে ফেললেন। এত দেরিতে এত খারাপ অবস্থায় প্রসূতি কলকাতায় আসছেন যে, পৌঁছনোর পরে আর কিছু করার থাকছে না। এ ভাবেই কলকাতায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।

চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত কলকাতায় সব চেয়ে বেশি প্রসূতি মারা গিয়েছেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (২৭ জন)। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ২১ জন, এসএসকেএমে ১৭ জন এবং ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ১২ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে।

রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা এই হারে প্রসূতি-মৃত্যুর পিছনে বিপুল হারে নাবালিকাদের বিয়ে এবং ১৮ বছরের আগেই গর্ভবতী হওয়াকেও অন্যতম কারণ হিসাবে দেখছেন। কারণ, সরকারি পরিসংখ্যানেই বেরিয়ে এসেছে, রাজ্যে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের হার এখন প্রায় ৪৬ শতাংশ। আর যত প্রসূতি মারা যাচ্ছেন, তাঁদের ২৫-৩০ শতাংশেরই বয়স ১৯ বছরের নীচে। মৃত্যুর মূল কারণ হাইপারটেনশন, রক্তাল্পতা, সেপসিস ও রক্তক্ষরণ। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘নাবালিকা প্রসূতিদের শারীরিক অবস্থা ও শরীরে পুষ্টির হাল অত্যন্ত খারাপ থাকে। গর্ভাবস্থায় নিজেদের যত্নও ঠিকঠাক নিতে পারে না। ফলে দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Pregnant Woman Hospitals
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE