Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

প্রচারই হচ্ছে, কাজে সেই গা ছাড়া

শুধু বাঙুরই নয়, দক্ষিণ দমদমের একাধিক এলাকায় যত্রতত্র আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায়। তার মধ্যে যেমন রয়েছে থার্মোকলের প্লেট এবং ভাঙা পাত্র, তেমনই রয়েছে কাগজের কাপ এবং ডাবের খোল। তাতে জল জমে বাড়ছে মশা।

এ ভাবেই যত্রতত্র পড়ে রয়েছে জঞ্জাল। রবিবার, বাঙুর এলাকায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

এ ভাবেই যত্রতত্র পড়ে রয়েছে জঞ্জাল। রবিবার, বাঙুর এলাকায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

কাজল গুপ্ত
শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৩৪
Share: Save:

গোটা রাজ্যে মশাবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে পাল্লা দিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও।

কিন্তু তাতেও হুঁশ ফিরছে না বাসিন্দা থেকে প্রশাসনের একাংশের। বছরভর প্রশাসন প্রচার করেছে, কোনও ভাবেই জল জমতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু দক্ষিণ দমদম থেকে সল্টলেকের বিভিন্ন জায়গায় দেখা গিয়েছে এর উল্টো ছবি।

পুর প্রশাসন সরকারি ভাবে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত বা মৃতের সংখ্যা সম্পর্কে যে তথ্যই দিক না কেন, তাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, দমদম থেকে শুরু করে গোটা বিধাননগর পুর এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ন্যূনতম হাজার। মৃতের সংখ্যা ২৫।

বাসিন্দা এবং পুর প্রশাসনের তরজা যাই হোক না কেন, এক দিকে সচেতনতার অভাব, অন্য দিকে নজরদারির ক্ষেত্রে প্রশাসনের ঢিলে মনোভাবের ছবিটা স্পষ্ট। যশোর রোড থেকে বাঙুরের পথে ঢুকতেই দেখা গেল, একটি ভাঙা বাড়ির কাছে পড়ে আছে ভাঙা কমোড এবং আবর্জনা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রায় ২০ দিন ধরে ওই রাস্তায় সেগুলি পড়ে রয়েছে।

এটি একটি উদাহরণ মাত্র। শুধু বাঙুরই নয়, দক্ষিণ দমদমের একাধিক এলাকায় যত্রতত্র আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায়। তার মধ্যে যেমন রয়েছে থার্মোকলের প্লেট এবং ভাঙা পাত্র, তেমনই রয়েছে কাগজের কাপ এবং ডাবের খোল। তাতে জল জমে বাড়ছে মশা।

উপরন্তু নির্মীয়মাণ বিভিন্ন প্রকল্প তো আছেই। বাসিন্দাদের একটি অংশের অভিযোগ, ওই প্রকল্প এলাকাগুলিতে বিভিন্ন কারণে জলের প্রয়োজন। সে কারণে ছোট-বড় অস্থায়ী জলাধার তৈরি করা হয়। কিন্তু সেখানকার জল নিয়মিত পাল্টানো হয় না। এর পাশাপাশি ফাঁকা জমিতে আবর্জনা ফেলে দেওয়ার প্রবণতাও মশার উপদ্রব বাড়ার একটি কারণ বলে মনে করছেন অনেকে।

এই সমস্যা শুধু দক্ষিণ দমদমেই নয়। বিধাননগর পুর এলাকার সল্টলেক থেকে শুরু করে কেষ্টপুর, বাগুইআটি, রাজারহাট-গোপালপুরের বিভিন্ন জায়গায় এক চিত্র।

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, এত প্রচারের পরেও কেন সচেতনতা ফিরছে না? কেন সব কিছু দেখেও বাসিন্দারা অনেক ক্ষেত্রে চুপ করে থাকছেন?

এলাকাবাসীর একাংশের কথায়, সচেতনতা এখনও সকলের মধ্যে তেমন ভাবে তৈরি হয়নি। কারও বাড়িতে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়লে তাঁদের ঘুম ভাঙছে। তবে কিছু কিছু এলাকায় বাসিন্দারা সচেতন হচ্ছেন। সম্প্রতি হাতিয়াড়ায় তাঁরাই উদ্যোগী হয়ে মশা দমনে পথে নেমেছেন।

দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান জানান, বছরভর সচেতনতার কাজ করা হয়েছে। তাতে সাড়া মিলেছে, পিছিয়ে পড়া এলাকাতেও বাসিন্দারা জল ধরে রাখলে পাত্র ঢেকে রাখছেন। এটা ভাল দিক। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে অবস্থা তথৈবচ। যেখানে-সেখানে আবর্জনা জমে থাকা প্রসঙ্গে তিনি জানান, বেশ কিছু জায়গায় ভাঙা বাড়ির সামগ্রী পড়ে থাকার খবর এসেছে। যদিও শর্ত অনুযায়ী, যাঁরা বাড়ি ভাঙছেন বা নির্মাণকাজ করছেন, তাঁদেরই ওই আবর্জনা সরানোর কথা। কিন্তু একাংশ সেই কাজ করছেন না। পুরসভা দ্রুত সেই আবর্জনা সরিয়ে দেবে। সে ক্ষেত্রে ব্যয়ভার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকেই বহন করতে হবে।

বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তও জানিয়েছেন, সচেতনতা প্রসারে বছরভর কাজ করছেন পুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বার বার বলা সত্ত্বেও একটি অংশ সচেতন হচ্ছেন না। তাঁদের হুঁশ ফেরাতে আরও জোর দেওয়া হবে। প্রয়োজনে কড়া পদক্ষেপ করতেও পিছপা হবে না পুরসভা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE