Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Medica Superspecialty Hospital

Lungs Transplant: ফুসফুস প্রতিস্থাপনের চার দিনের মাথায় মৃত্যু কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে

শুক্রবার রাতে সেই মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালেই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল ৪৬ বছরের দীপকের।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:১৬
Share: Save:

রোগীর মনের জোর আর চিকিৎসকদের মিলিত প্রচেষ্টাতেই শুরু হয়েছিল লড়াইটা। কিন্তু ৯৬ ঘণ্টার মধ্যেই থমকে গেল তা!

ইএম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে একমো সাপোর্টে থাকা, কোভিডে আক্রান্ত দীপক হালদারকে দিয়েই পূর্ব ভারতে ফুসফুস প্রতিস্থাপনের পথ চলা শুরু হয়েছিল। সোমবার রাত থেকে শুরু হয়ে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত চলেছিল সেই অস্ত্রোপচার। কিন্তু শুক্রবার রাতে সেই মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালেই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল ৪৬ বছরের দীপকের।

ওই হাসপাতালে প্রায় ১০৬ দিন একমো সাপোর্টে ছিলেন তিনি। তাঁর চিকিৎসক দীপাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ভর্তির সময়েই দেখা গিয়েছিল, দীপকের দু’টি ফুসফুসই মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। একমো চালু করা হলেও ফুসফুসের উন্নতি হচ্ছিল না। বরং দু’মাসের মাথায় বুকের সিটি স্ক্যানে দেখা যায়, ফুসফুসে ফাইব্রোসিস হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, ফুসফুসের নরম টিসুগুলি মোটা ও শক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে সেখানে থাকা বাতাসের থলিগুলি ঠিক মতো কাজ করতে পারছিল না। দীপাঞ্জন বলেন, ‘‘সেই কারণেই ফুসফুস প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। অনেক লড়াইয়ের পরে কাজটি সম্পন্ন করাও সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পরে ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টা সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তার মধ্যেই লড়াইটা থমকে গেল।’’

দীপকের মৃত্যুর কারণ কী? তাঁর চিকিৎসায় যুক্ত থাকা একমো-বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক অর্পণ চক্রবর্তী জানালেন, করোনা রোগীদের ফুসফুস প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, কোভিড রোগীদের ফুসফুস পুরো চুপসে গিয়ে চেস্ট ওয়ালের সঙ্গে সেঁটে থাকে। সেটিকে ছাড়িয়ে বার করা হলে চেস্ট ওয়ালে রক্তক্ষরণ হয়। দ্বিতীয়ত, ফুসফুসে দীর্ঘ দিন ধরে ফাইব্রোসিস থাকার ফলে হৃৎপিণ্ডে একটা চাপ তৈরি হয়। তৃতীয়ত, অন্যের অঙ্গ রোগীর শরীর প্রত্যাখ্যান করছে কি না, সেটাও দেখার বিষয়। অর্পণের কথায়, ‘‘প্রত্যাখ্যান দু’রকমের হয়। একটি হয় অস্ত্রোপচারের পরে একেবারে প্রথম দিকে। আর একটি হয় পরের দিকে, অর্থাৎ দুই থেকে চার সপ্তাহ পরে। দীপকের ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণের সমস্যাটি অনেক বেশি ছিল। কারণ, দীর্ঘ দিন ধরে মারাত্মক সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে ওঁর নিজস্ব রক্ততঞ্চন ক্ষমতা অনেক কমে গিয়েছিল।’’

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এ দেশে প্রতি মাসে ১০-১২টি ফুসফুস প্রতিস্থাপন হয়। তবে সেই রোগীরা করোনায় আক্রান্ত নন। ফুসফুস কর্মক্ষমতা হারানোয় অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে রয়েছেন, এমন রোগী।
অর্পণ বলছেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত পাওয়া সারা দেশের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, ওই সমস্ত রোগীর ক্ষেত্রে প্রতিস্থাপনের পরের এক বছর পর্যন্ত বাঁচার হার ৭০-৮০ শতাংশ, পাঁচ বছর পর্যন্ত বাঁচার হার ৫০ শতাংশ, এবং ১০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার হার ৩০ শতাংশ।’’ অর্পণ, দীপাঞ্জনেরা জানাচ্ছেন, অতিমারিতে এ দেশে এখনও পর্যন্ত ৩০-৩৫ জন করোনা আক্রান্তের ফুসফুস প্রতিস্থাপন হয়েছে। সাফল্যের হার ৪০-৫০ শতাংশ। ওই চিকিৎসকদের কথায়, ‘‘যত দূর জানা গিয়েছে, সেই ৪০-৫০ শতাংশের অনেকেই এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কারণ, ফুসফুস প্রতিস্থাপনের পরে অন্তত দু’মাস হাসপাতালে থাকতে হয়। সাময়িক ওই পর্বের পরে কী অবস্থা হচ্ছে, তার তথ্য এখনও বিশেষ হাতে নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Medica Superspecialty Hospital lungs transplant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE