Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

রোগী-ভোগান্তি শহরের সব হাসপাতালে

ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত তারকেশ্বরের অসিত খানকে দুপুর ১টা নাগাদ এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর ছেলে। কিন্তু সব চিকিৎসক কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় অসিতবাবুর আর চিকিৎসা হয়নি।

দুর্ভোগ: ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সহচরী মণ্ডল (বাঁ দিকে)। এসএসকেএমে অ্যাম্বুল্যান্সেই পড়ে কমল মালাকার (ডান দিকে)। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

দুর্ভোগ: ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সহচরী মণ্ডল (বাঁ দিকে)। এসএসকেএমে অ্যাম্বুল্যান্সেই পড়ে কমল মালাকার (ডান দিকে)। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৯ ০৩:৩৫
Share: Save:

এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরে অ্যাম্বুল্যান্সে শুয়ে কাতরাচ্ছিলেন কমল মালাকার। পথ-দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত কমলকে পরিজনেরা কল্যাণী হাসপাতাল থেকে এসএসকেএমে নিয়ে এসেছিলেন সুচিকিৎসার আশায়। কিন্তু বেলা ১২টা নাগাদ হাসপাতালে পৌঁছলেও বিকেল চারটে পর্যন্ত ঠায় অ্যাম্বুল্যান্সেই পড়ে ছিলেন ওই ব্যক্তি। কমলের বাড়ির লোকের আক্ষেপ, ‘‘মোটা টাকা দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানোর সামর্থ্য আমাদের নেই। এখান থেকে কোথায় যাব?’’

ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত তারকেশ্বরের অসিত খানকে দুপুর ১টা নাগাদ এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর ছেলে। কিন্তু সব চিকিৎসক কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় অসিতবাবুর আর চিকিৎসা হয়নি। ছেলে অমিত বললেন, ‘‘বেসরকারি হাসপাতালে বাবাকে ভর্তি করাব, তেমন আর্থিক অবস্থা আমাদের নেই। বাধ্য হয়ে বাবাকে নিয়ে এখন বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালে যাচ্ছি। দেখি, সেখানে যদি চিকিৎসাটা অন্তত শুরু হয়।’’

চন্দননগরের চামেলিপ্রসাদ দাস কয়েক দিন ধরে প্রবল শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। ফুসফুসে সংক্রমণ হওয়ায় তাঁকে এ দিন বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ এসএসকেএমে আনা হয়। জরুরি পরিষেবা বন্ধ থাকায় সন্ধ্যা পর্যন্ত চিকিৎসা শুরু হয়নি। অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যেই তাঁকে অক্সিজেন দিতে হয়েছে।

রোগী-ভোগান্তির এমন টুকরো-টুকরো ছবি দেখা গিয়েছে মঙ্গলবার দিনভর। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক জুনিয়র ডাক্তারকে মারধরের প্রতিবাদে এ দিন দুপুর থেকে এসএসকেএম-সহ শহরের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মবিরতি শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। আর এর জেরে চরম দুর্ভোগে পড়েন গ্রামাঞ্চল থেকে আসা কয়েক হাজার রোগী ও তাঁদের পরিবার।

এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ এসএসকেএম হাসপাতালে কর্মবিরতি শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। একে একে সেই পথে হাঁটেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল, কলকাতা মেডিক্যাল, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারেরাও। এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে ছুটেও চিকিৎসা না মেলায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন রোগীর পরিবারের লোকজন। এসএসকেএমে দীর্ঘক্ষণ জরুরি পরিষেবা বন্ধ থাকায় বিকেল ৩টে থেকে রোগীর পরিজনেরা প্রথমে হরিশ মুখার্জি রোড, পরে দফায় দফায় এজেসি বসু রোড ও ক্যাথিড্রাল রোডের মোড় অবরোধ করেন। এর জেরে প্রায় এক ঘণ্টা যানজট হয় ওই এলাকায়। শেষে পুলিশি হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে।

অন্য দিকে, শহরের বাকি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতে ১২টার পরে আউটডোর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কয়েক হাজার রোগী ভোগান্তিতে পড়েন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হন তাঁরা। খিদিরপুরের বাসিন্দা মিনা খান বলেন, ‘‘নিউরো-র সমস্যায় এসএসকেএমে ডাক্তার দেখানোর জন্য সকাল দশটা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। দু’ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে জানতে পারি, আজ আর দেখবেন না ডাক্তারবাবুরা।’’

একই অবস্থা হয়েছে সর্বত্র। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের গেটের সামনে দুপুর ১টা নাগাদ কর্মবিরতি শুরু করেন কয়েকশো জুনিয়র ডাক্তার। তাঁদের সামনেই সকাল থেকে স্ট্রেচারে শুয়েছিলেন চৌবাগার বাসিন্দা, বৃদ্ধা সহচরী মণ্ডল। সহচরীদেবীর হাত-পা ফুলে যাচ্ছে। তাঁকে এ দিন হাসপাতালে এনেছেন বাড়ির লোকজন। বৃদ্ধার এক আত্মীয় মায়া সরকার বলেন, ‘‘সকালে কয়েকটি পরীক্ষা হয়েছে। দুপুরে ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল। কিন্তু ১টার পরে বলা হল, আজ আর রোগী দেখা হবে না।’’

এ দিন দুপুরে তালতলায় ফুটপাতে পড়ে থাকা এক অসুস্থ ব্যক্তিকে পুলিশ অ্যাম্বুল্যান্স করে ন্যাশনাল মেডিক্যালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন নিউ মার্কেট থানার সাব-ইনস্পেক্টর শান্তনু চন্দ। প্রায় তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরে তাঁকে তিলজলার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NRS Hospital Doctor Protest Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE