Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

গতিতে ছুটছে ট্রাক, তার পাশেই রাত্রিবাস

মুম্বইয়ের ফুটপাথে রাতে শুয়ে থাকা মানুষকে গাড়ি চালিয়ে পিষে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে গোটা দেশে তোলপাড় হয়েছিল। তার রেশ আজও মেলায়নি। কিন্তু হুঁশ ফিরেছে কি? কলকাতার রাতের ছবিটা সেই প্রশ্নই তুলে দেয়।

বিপদ-শয্যা: পাশ দিয়ে ছুটছে গাড়ি। রাতের পথে তবু এ ভাবেই নিশ্চিন্ত নিদ্রা। মহাজাতি সদন সংলগ্ন চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

বিপদ-শয্যা: পাশ দিয়ে ছুটছে গাড়ি। রাতের পথে তবু এ ভাবেই নিশ্চিন্ত নিদ্রা। মহাজাতি সদন সংলগ্ন চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

কাজল গুপ্ত
শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৭ ১৪:০০
Share: Save:

মুম্বইয়ের ফুটপাথে রাতে শুয়ে থাকা মানুষকে গাড়ি চালিয়ে পিষে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে গোটা দেশে তোলপাড় হয়েছিল। তার রেশ আজও মেলায়নি। কিন্তু হুঁশ ফিরেছে কি? কলকাতার রাতের ছবিটা সেই প্রশ্নই তুলে দেয়।

শতাধিক মানুষ ম্যাস্টিক অ্যাসফল্টে মোড়া রাস্তায় তোশক, মোটা কাপড় পেতে শুয়ে রয়েছেন। অনেকটা গার্ডরেলের মতো তাঁদের পাশে রাখা একাধিক সাইকেল ভ্যান। তার মধ্যেই অকাতরে ঘুমোচ্ছেন অনেকে। অথচ পাশ ধরে হুহু করে চলেছে গাড়ি। সামান্য অসতর্ক হলে কিংবা ব্রেক ফেল করলে মুহূর্তে একাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটার ঝুঁকি প্রবল।

প্রতি রাতে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ধরে মহাজাতি সদনের কাছে গেলেই এই ছবি দেখতে পাওয়া যায়। পাশেই মেছুয়ায় রাতভর ট্রাকের চলাফেরা। মালপত্র ওঠানামাও হয়। রাতভর সেখানে থাকে পুলিশের নজরদারি। অর্থাৎ, রাস্তার উপরে মানুষ যে ঘুমোচ্ছেন, তা জানে পুলিশ প্রশাসনও। তার পরেও নিশ্চুপ তারা। এক গাড়িচালকের কথায়, ‘‘রাতে সামান্য অসতর্ক হলে বড়সড় দুর্ঘটনা হতে পারে।’’

চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ধরে সারা রাত তীব্র বেগেই গাড়ি চলাচল করে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নতুন কোনও বিষয় নয়। দীর্ঘ দিন ধরেই গরমে মানুষ রাস্তার উপরে এ ভাবেই রাত কাটান। বরং কেউ কেউ আবার দাবি করলেন, ব্যাপারটা যখন বন্ধ করা যাবে না, তখন যেখানে সকলে শুয়ে রয়েছে, তার পাশে গার্ডরেল বসিয়ে দিক পুলিশ।

দক্ষিণেও এমন একাধিক রাস্তা রয়েছে, যেখানে রাস্তার উপরে রাতে অবাধেই শুয়ে থাকেন বহু মানুষ। আর তাঁদের গা ঘেঁষে হুহু করে ছুটে চলে গাড়ি, ট্রাক। স্থানীয় এক রিকশাচালক বলেন, ‘‘অনেকেরই থাকার জায়গা নেই। আবার অনেকে যে সব বাড়িতে ভাড়া থাকেন, সেখানে গরমে রাতে ঘুমনো যায় না। বাধ্য হয়ে তাঁরা রাতে রাস্তায় ঘুমোন। বিকল্প থাকলে কি আর কেউ এ ভাবে জীবনের ঝুঁকি নিতে পারে?’’

খানিকটা অন্য ভাবে হলেও বিষয়টিতে প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় রয়েছে কলকাতা পুলিশেরও। দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘আমরা কি ওঁদের শোয়ার জন্য অন্য কোনও বন্দোবস্ত করতে পারছি? যতক্ষণ পারছি না, ততক্ষণ জোর করে সরাব কী করে? মানবিকতার প্রশ্নও তো আছে।’’ একই ভাবে ‘মানবিকতা’র প্রশ্ন তুলেছে পুরসভাও। পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘রাস্তার ধারে কোথায় কে ঘুমোচ্ছে, তা দেখার কাজ পুরসভার নয়। শহরের অনেক রাস্তাতেই এটা হয়। রাস্তা পুরসভার অধীনে হলেও মানবিকতার কারণে তাঁদের তুলে দেওয়া যায় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Main Road Truck
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE