Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
SSKM

‘ওরা বলছে এখানে হবে না, কিন্তু কোথায় হবে কেউ বলছে না’

কয়েকটি সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজকে কোভিড পরিষেবার জন্য চিহ্নিত করেছে রাজ্য সরকার। ফলে নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবার পরিসর কমেছে।

অসহায়: এসএসকেএমের মেঝেয় শুয়ে রামদুলারি দেবী (বাঁ দিকে) এবং কমলা সরকার (ডান দিকে)। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

অসহায়: এসএসকেএমের মেঝেয় শুয়ে রামদুলারি দেবী (বাঁ দিকে) এবং কমলা সরকার (ডান দিকে)। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২০ ০৩:৩৮
Share: Save:

‘চারশো টাকা গাড়ি ভাড়া করে এলাম। কাজ হল না! বিনা চিকিৎসায় এ ভাবে পড়ে থাকব?’— গাছতলায় বাঁধানো বেদিতে শুয়ে আক্ষেপ করছিলেন বছর সাতচল্লিশের প্রৌঢ়। কী হয়েছে? অশক্ত শরীরে বসে বললেন, ‘‘ডায়ালিসিস করাতে এসেছিলাম। ওঁরা ফিরিয়ে দিলেন।’’

এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরে শুয়ে এমনই অভিযোগ বিডন স্ট্রিটের ঝন্টু সোনকারের। দীর্ঘ দিন ধরেই কিডনির অসুখে ভুগছেন তিনি। ফলে সে ভাবে কাজ করতে পারেন না। স্ত্রী রিনা সোনকারের দাবি, “ওঁদের বলা তারিখেই ডায়ালিসিসের জন্য এসেছিলাম। এখন বলছেন, বাড়ির কাছের সরকারি হাসপাতালে যাও। কিন্তু সেখান থেকেও যে ফিরিয়ে দেবে না, তার নিশ্চয়তা কী?’’

করোনা মোকাবিলায় শহরের কয়েকটি সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজকে কোভিড পরিষেবার জন্য চিহ্নিত করেছে রাজ্য সরকার। ফলে নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবার পরিসর কমেছে। কিন্তু হাতে গোনা সরকারি হাসপাতালে গিয়েও কি চিকিৎসা মিলছে? এসএসকেএমে আসা কয়েক জন রোগীর অভিজ্ঞতাই যেমন বুঝিয়ে দিল, ভোগান্তির শেষ নেই!

আরও পড়ুন: বিধাননগরে কিছুটা কমল সংক্রমণের হার​

যেমন, ঝন্টুবাবু জানেন না, বাড়ির সামনে বলতে তিনি কোন হাসপাতালে ডায়ালিসিসের জন্য যাবেন। এত দিন শুধু কোভিডের চিকিৎসার পরে সম্প্রতি অন্য রোগে আক্রান্তদের জন্যও দরজা খুলেছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। সেখানে এখনই কতটা স্বাভাবিক পরিষেবা মিলবে, তা নিয়ে সন্দিহান তিনিও।।

যেমন, কেষ্টপুরের সবিতা চক্রবর্তী জানেন না কোথায় গেলে তাঁর রক্তপরীক্ষা হবে। গত তিন মাস ধরে ওজন হ্রাস এবং জ্বরে ভুগছেন পঞ্চান্ন বছরের প্রৌঢ়া। ৬ জুলাই এসএসকেএমে দেখানোর পরে তাঁকে কিছু রক্তপরীক্ষা করতে বলা হয়। সেই মতো বৌমা ও মেয়ের সঙ্গে সবিতাদেবী এসেছিলেন হাসপাতালে। বললেন, ‘‘যাকেই জিজ্ঞাসা করছি, ওরা বলছে এখানে হবে না, কিন্তু কোথায় হবে কেউ বলছে না। এ বার কোথায় যাব?’’

কোথায় যেতে হবে তা বুঝতে না পেরে ডাক্তার দেখিয়েও সারা রাত হাসপাতালের প্রতীক্ষালয়েই স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে কেটেছে পাঁশকুড়ার কিডনির অসুখে ভোগা প্রণব সামন্তের। স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে শুয়েছিলেন ছাপান্ন বছরের ওই প্রৌঢ়। মেয়ে টিক্কি সামন্ত জানান, বাস চলা শুরু হতেই প্রতিবেশীদের কথায় অসুস্থ বাবাকে নিয়ে এসএসকেএমে আসেন তাঁরা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আউটডোরে ডাক্তার দেখে বললেন নীচে গিয়ে বাকিটা বুঝে নিতে। অনেককে জিজ্ঞাসা করলাম, কেউ উত্তরই দিলেন না। তাই হাসপাতালেই থেকে গেলাম।’’ প্রণববাবুর প্রেসক্রিপশনে দেখা গেল, কিছু রক্তপরীক্ষা করে মাস দুয়েক পরে আসার কথা লিখেছেন চিকিৎসক। কিন্তু সেটাও কেউ বুঝিয়ে সহযোগিতা করেননি বলেই দাবি ওই প্রৌঢ়ের।

একই রকম অসহযোগিতার অভিযোগ তুলছেন গার্ডেনরিচের রামদুলারিদেবীর পরিজন। পেটে পাথর হয়েছে সত্তর বছরের বৃদ্ধার। ১৭ জুলাই পিজিতে অস্ত্রোপচারের তারিখ দেওয়া আছে। কিন্তু যন্ত্রণায় ছটফট করায় তাঁকে নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এসেছিলেন মেয়ে কৌশল্যাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতাল বলছে, এখন বেড নেই। এ দিকে এক দালাল ভর্তি করিয়ে দেবে বলে ১২ হাজার টাকা নিয়ে সেই যে গেল, এল না! এখন কী করব বুঝতে পারছি না।” দালালকে টাকা দিলেন কেন? ‘‘মা এত ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন দেখে ভাবলাম যদি ভর্তি করে চিকিৎসাটা হয়।’’

অন্য দিকে, একই ভাবে পরীক্ষার তারিখ না মেলায় মা কমলা সরকারকে নিয়ে হাসপাতাল চত্বরেই থেকে গিয়েছেন ছেলে কালাচাঁদ। ২৬ জুন পেটের ক্যানসারে আক্রান্ত মাকে নিয়ে বালুরঘাট থেকে এসএসকেএমে এসেছেন ওই যুবক। বললেন, ‘‘দেড় বছর আগে এখানেই মায়ের পেটের টিউমার অপারেশন হয়েছিল। কয়েক মাস পরেই ফের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এসে সব বললাম, তাও পরীক্ষার তারিখ তাড়াতাড়ি পেলাম না।’’

নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা পেতে এমন ভোগান্তি হচ্ছে কেন? এর উত্তর জানতে এসএসকেএমের অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM Covid 19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE