Advertisement
E-Paper

কার অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য, ধন্দে পুলিশ

পাশে বসা বৃদ্ধা মা কেঁদে চলেছেন। ছেলেকে দেখিয়ে বললেন, ‘‘স্যর একটু দেখুন। স্নায়ুর সমস্যা রয়েছে আমার ছেলের। চোখে ভাল দেখতে পায় না। এ দিকে, ওকে নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করা হয়। রাস্তায় ল্যাং মেরে ফেলে দিচ্ছে, মাথায় চাটি মেরে পালিয়ে যাচ্ছে! এ ভাবে চলতে থাকলে ছেলেটা আমার মরে যাবে।’’

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৪২
অভিজিৎ চক্রবর্তী ও সন্ধ্যা চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ চক্রবর্তী ও সন্ধ্যা চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র

চোখে মোটা কাচের চশমা আঁটা। মাঝেমধ্যেই ঘাড় নুয়ে পড়ছে। কোনওমতে সেই অবস্থাতেই তাকিয়ে রয়েছেন টেবিলের উল্টোদিকে বসা কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারের দিকে!

পাশে বসা বৃদ্ধা মা কেঁদে চলেছেন। ছেলেকে দেখিয়ে বললেন, ‘‘স্যর একটু দেখুন। স্নায়ুর সমস্যা রয়েছে আমার ছেলের। চোখে ভাল দেখতে পায় না। এ দিকে, ওকে নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করা হয়। রাস্তায় ল্যাং মেরে ফেলে দিচ্ছে, মাথায় চাটি মেরে পালিয়ে যাচ্ছে! এ ভাবে চলতে থাকলে ছেলেটা আমার মরে যাবে।’’ কাঁপা কাঁপা গলায় এ বার সেই ছেলে বলে উঠলেন, ‘‘পাড়ার অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছি, ভিড়ের মধ্যে থেকে টেনে বার করে রাস্তায় ঠেলে ফেলে দিল! আমার সঙ্গেই শুধু এ রকম কেন হয় স্যর?’’

উল্টোডাঙার একটি আবাসনের বাসিন্দা বছর পঁয়ষট্টির সুজাতা চক্রবর্তী এবং তাঁর একমাত্র পুত্র বছর তিরিশের অভিজিৎকে নিয়েই চিন্তায় পড়েছেন মানিকতলা থানার আধিকারিকেরা। মা এবং ছেলের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁদের উপরে অত্যাচার চালাচ্ছেন তাঁদের আবাসনের দুই বাসিন্দা। মানিকতলা থানায় লিখিত অভিযোগে জানানো হয়েছে, রাস্তায় অভিজিৎকে দেখলেই চড়াও হন তাঁরা। নানা ভাবে তাঁকে হেনস্থা করার পাশাপাশি ফ্ল্যাট ছেড়ে দেওয়ার জন্যও চাপ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সুরাহা পেতে মাঝেমধ্যেই মানিকতলা থানায় গিয়ে কান্নাকাটি করছেন মা-ছেলে। যদিও মানিকতলা থানার দাবি, এই দু’জনের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছেন আবাসনের অন্তত ২০ জন বাসিন্দা। লিখিত ভাবে তাঁরা জানিয়েছেন, অভিজিৎকে কেউই মারধর করেন না। তিনি মানসিক ভাবে অসুস্থ। অভিজিৎ কল্পনা করে নেন যে, তাঁকে মারধর করা হচ্ছে। এর পরেই সব রাগ গিয়ে পড়ে ওই পড়শিদের উপরে।

এক দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, আবাসনের একটি ব্লকের দোতলায় থাকেন অভিজিতেরা। বছর খানেক আগে তাঁর বাবা অমলভূষণ চক্রবর্তীর মৃত্যু হয়। তিনি ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ছিলেন। মা-ছেলের ঘরে প্রয়োজনীয় কিছু আসবাবপত্র ছাড়া সে রকম আর কিছুই নেই। তাঁদের ঠিক উপরের তলের ফ্ল্যাটে থাকেন অভিযুক্ত ব্যক্তি। অভিযুক্তের দাবি, ‘‘আমাদের দেখে মনে হয়, কাউকে এ ভাবে হেনস্থা করতে পারি? ওই যুবক এবং তাঁর মা ভাবেন আমিই মারি। ওঁরা মানসিক ভাবে অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য বলেছি, তা-ও করাতে চান না।’’ ফ্ল্যাটের আর এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘ওঁরা ঠিক ভাবে থাকেন না। সব ময়লা সিঁড়িতেই ফেলে দেন। এ ভাবে থাকা যাচ্ছে না। ওঁদের চিকিৎসার প্রয়োজন।’’

সুজাতাদেবীর অবশ্য দাবি, তাঁদের মানসিক রোগী প্রমাণ করে ফ্ল্যাট ফাঁকা করানোর চেষ্টা চলছে। এখানেই বিপাকে পড়েছেন মানিকতলা থানার তদন্তকারীরা। কার কথা সত্যি, তা নিয়েই ধন্দে পুলিশ। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘ছেলেটাকে রাস্তায় ধরে সত্যিই উত্ত্যক্ত করা হচ্ছে কি না, দেখতে হলে তো সর্বক্ষণ একটা লোক বসাতে হয়। না হলে চিকিৎসা করাতে হবে। ওঁরা আবার চিকিৎসা করাবেন না। কোন পথে হাঁটব?’’ উল্টোডাঙার ওই আবাসনের সেক্রেটারি বিজয় ভট্টাচার্য অবশ্য বলছেন, ‘‘অভিজিৎদের দাবি একেবারেই ফেলে দেওয়ার মতো নয়। এক আবাসিকের সঙ্গে ওঁদের পুরনো বিবাদ রয়েছে। অভিজিতের বাবা বেঁচে থাকাকালীন অভিযোগ করেছিলেন, নানা ভাবে তাঁদের বিরক্ত করা হয়। এই ধরুন সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়ে দরজায় মেরে চলে গেলেন— এই সব। এটাই হয়তো অভিজিতের মনে গেঁথে গিয়েছে। তবে ওঁর আর ওঁর মায়ের সত্যিই চিকিৎসা প্রয়োজন।’’ বিজয়বাবু জানান, বারাসতের বাসিন্দা অভিজিতের এক কাকাকে পুলিশের তরফে খবর দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে মা-ছেলেকে পাভলভ মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হতে পারে।

মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধে দেব গোটা বিষয়টি শুনে বলছেন, ‘‘দোষ কার, তা পুলিশ দেখবে। তবে দু’জনের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা দরকার।’’

Allegation Confusion Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy