প্রতীকী ছবি।
মাস চারেক আগে ডানকুনিতে আমের লরিতে লুকোনো তার চোরাই চন্দনকাঠ বাজেয়াপ্ত হয়েছে শুনেই সে কলকাতা থেকে চম্পট দিয়েছিল। এত দিনে পরিস্থিতি ঠান্ডা হয়েছে আঁচ করে ফিরে আসে কলকাতায়। কিন্তু তক্কে তক্কে ছিলেন গোয়েন্দারা। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার, কালীপুজোর দুপুরে সিআইডি-র ডাকাতি দমন শাখার কর্মীদের জালে ধরা পড়েছে চন্দনকাঠ পাচারের আন্তর্জাতিক চক্রের চাঁই মার্কণ্ডেন লক্ষ্মণ। অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা হলেও রক্তচন্দন পাচারের সূত্রে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে চন্দন-ত্রাস হিসেবে পরিচিত ছিল সে।
সিআইডি-র অভিযোগ, লক্ষ্মণ অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে চন্দনকাঠ পাচারের মাথা। পুলিশের খাতায় ফেরার এই চন্দনদস্যু গ্রেফতার হয়েছে গল্ফ গ্রিন এলাকায়। জেরার মুখে ওই দুর্বৃত্ত দাবি করেছে, চন্দনকাঠ পাচার ছেড়ে সে সৎ পথে নতুন ব্যবসা ধরেছে। তবে গোয়েন্দারা জানান, ডানকুনিতে চোরাই রক্তচন্দন উদ্ধারের মামলাতেই লক্ষ্মণকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার ধৃতকে হুগলির শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হয়। বিচারক আপাতত ১১ নভেম্বর পর্যন্ত তাকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
লক্ষ্মণকে জেরা করে তার আন্তর্জাতিক চন্দন পাচার চক্রের অন্য দুর্বৃত্তদের নাগাল পেতে চাইছেন তদন্তকারীরা। তাকে জেরা করে গোয়েন্দারা জেনেছেন, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে চন্দনকাঠ আনা হয় বাংলায়। তার পরে উত্তরবঙ্গ দিয়ে চোরাপথে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় মণিপুরে। সেখান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে প্রথমে মায়ানমার এবং পরে চিনে পাচার হয়ে যায় চন্দনকাঠ।
ঘটনার সূত্রপাত গত ২৯ জুন। ডানকুনি থানার পুলিশ সে-দিন খবর পায়, স্থানীয় সাঁতরাপাড়ায় আম বোঝাই লরির ভিতরে লুকিয়ে রক্তচন্দন কাঠ পাচার করা হচ্ছে। পুলিশ লরি আটকে তল্লাশি চালাতেই আম ও আমপাতা চাপা দেওয়া ২৪৫টি চন্দনকাঠের গুঁড়ির হদিস পেয়ে যায়। বাজেয়াপ্ত করা সেই চন্দনকাঠের বাজারদর প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। সেই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় দু’জনকে। তাদের মধ্যে এক জনের বাড়ি তামিলনাড়ুতে। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে ডানকুনি থানার হাত থেকে চন্দন পাচারের মামলার তদন্তভার তুলে দেওয়া হয় সিআইডি-র হাতে।
সিআইডি সূত্রের খবর, ওই রক্তচন্দন এসেছিল অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে। তা উত্তর-পূর্ব ভারতে পাচার করার কথা ছিল। এবং পাচার চক্রের মাথাও অন্ধ্রের বাসিন্দা। তার সঙ্গে আরও চার-পাঁচ জন এই ব্যবসা চালায়। গোয়েন্দারা জানান, পাচারের ব্যবসা দেখভালের সূত্রে যাদবপুরের পোদ্দারনগরে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল লক্ষ্মণ। ওখানে একাই থাকত সে। ডানকুনিতে রক্তচন্দন আটক ও দু’জন শাগরেদের গ্রেফতারির খবর পেয়েই সে পালায়। কবে সে ফিরে আসে, সেই অপেক্ষাতেই ছিলেন গোয়েন্দারা। সিআইডি-র একাংশের ধারণা, ডানকুনিতে ধৃত দুই দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে শুনেই লক্ষ্মণ হয়তো ভেবেছিল, বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে। তাই কলকাতার ফিরে আসে সে। কিন্তু সিআইডি-র শ্যেনচক্ষু এড়াতে পারেনি। ধরা পড়ে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy