Advertisement
১১ মে ২০২৪
Night Curfew

Coronavirus: পুলিশের আয়োজন বৃথা করে দিল নৈশ ছাড়

তিনটেতেও সেখানে দেদার নাচে মত্ত একদল যুবক তখন কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।

উদ্দাম: নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে কোভিড-বিধি উড়িয়েই চলছে নাচগান। শুক্রবার রাতে, শহরের একটি ওয়াটার পার্কে।

উদ্দাম: নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে কোভিড-বিধি উড়িয়েই চলছে নাচগান। শুক্রবার রাতে, শহরের একটি ওয়াটার পার্কে। ছবি: সুদীপ ঘোষ

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:০৩
Share: Save:

আশঙ্কাই সত্যি হল। বর্ষবরণের রাতে পুলিশের ‘বজ্র আঁটুনি’ কাজে লাগল না কার্ফু ছাড়ের ‘ফস্কা গেরো’য়!

ফলে বর্ষবরণের নামে বিধিভঙ্গের উৎসবে মাতলেন দায়িত্বজ্ঞানশূন্য নাগরিকদের একটি অংশ। দেখা গেল, দূরত্ব-বিধি মানার বালাই তো তাঁদের ছিলই না, অনেকেরই মুখে ছিল না মাস্ক। ক্লাবগুলির নৈশ পার্টিতেও তথৈবচ অবস্থা। রাত বারোটা বাজতেই হুল্লোড়ের মধ্যে দেদার ফাটানো হল শব্দবাজি। বক্স বাজানোর উদ্দাম তাণ্ডব কোথাও কোথাও চলল ভোর পর্যন্ত। তস্য গলির সেই উৎসব কিন্তু পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরেই ছিল বলে অভিযোগ। এ প্রসঙ্গে পার্ক স্ট্রিট মোড়ে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী বললেন, “নৈশ বিধিতে ছাড় দেওয়ায় তো জলঘোলা পরিস্থিতি এখন। এর মধ্যে নিয়মভঙ্গকারীকে ধরতে বললে কী আর হবে? তবুও আমাদের তরফ থেকে যতটা সম্ভব চেষ্টা করা হয়েছে।”

আক্ষরিক অর্থেই ওই দিন পুলিশি বন্দোবস্তের অভাব ছিল না। প্রায় তিন হাজার পুলিশকর্মী দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছিল বর্ষবরণ উৎসবের জন্য চিহ্নিত এলাকাগুলি। বড় রাস্তার প্রতিটি মোড়ে ছিল নাকা তল্লাশির ব্যবস্থা। কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, তাতেই শহরে বিধিভঙ্গের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে ৫৩৭ জনকে। উদ্ধার হয়েছে ৪৬.৬ লিটার মদ। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ মামলা রুজু করেছে ১২২৩টি। এর মধ্যে হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালানোয় এবং একসঙ্গে তিন জন সওয়ার হওয়ায় মামলা রুজু করা হয়েছে যথাক্রমে ৫৩৮ এবং ৩৮২টি। বিপজ্জনক ভাবে এবং মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর মামলা হয়েছে ৬৬ এবং ১৬০টি। ট্র্যাফিক পুলিশ মোট ৭৭টি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছে বলেও খবর। পার্ক স্ট্রিট-সহ শহরের নানা এলাকায় করোনা-বিধি মানার জন্য পুলিশ মাইকে প্রচার করে চলেছে।

তেমনই এক প্রচারস্থলে মাস্ক খুলে নিজস্বী তুলতে ব্যস্ত তরুণীর উক্তি, “পুলিশ তো বলবেই, ওটা ওদের কাজ। আমরা আমাদের কাজ করছি। সকালে বেরিয়েছি। এত ক্ষণ মাস্ক পরে থাকা যায় না।” মল্লিকবাজারের কাছে আবার একটি মোটরবাইকে সওয়ার একই পরিবারের চার জন। চালক এবং তাঁর স্ত্রী ছাড়া সঙ্গের দুই শিশুর মাথায় হেলমেট নেই। নেই মাস্কও। ধরা পড়ে মোটরবাইক চালক বললেন, “ভেবেছিলাম, পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারব। কিন্তু হল না। পরের বার থেকে আর ঝুঁকি নেব না।” সেখানেই ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার পরীক্ষা করার সময়ে এক গাড়িচালকের মন্তব্য, “এখন পার্টি করতে যাচ্ছি। তবে ফেরার সময়ে কী হবে বলতে পারছি না।”

দেখা গেল, রাত যত বাড়ল, ততই বেপরোয়া ভাবে বাড়ল পথে নামা মানুষের ঢল। সেই সময়ে কোথাও এক মোটরবাইকে তিন জন সওয়ার, কোথাও হেলমেট না পরেই গতির তুফান তুলে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা। হরিশ মুখার্জি রোডে আবার এমনই মোটরবাইক চালকদের ধরতে গিয়ে হিমশিম খেতে হল পুলিশকে। ধরা পড়ার পরে তাঁদের আকুতি, “বুঝতে পারিনি যে গাড়ির গতি বেশি হয়ে গিয়েছে। আসলে রাত হয়ে গিয়েছে তো, তাই দ্রুত বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম।” ওই রাস্তাতেই একাধিক রেস্তরাঁর সামনে ভিড় করা জনতাকে লাঠি উঁচিয়ে এক সময়ে সরিয়ে দিতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে। সেখানেই কর্তব্যরত অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশ আধিকারিক বললেন, “রাত ১১টা পর্যন্ত শহরে এক জনও মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর জন্য ধরা পড়েননি। তখন মনে হচ্ছিল, গলির ডিস্কোথেক সামলে দিলেই মিটে যাবে। কিন্তু রাত বাড়তেই শহর ফিরে গেল পুরনো চেহারায়।”

পুলিশকর্তার এই মন্তব্যের বাস্তবতা মালুম হল মানিকতলা মেন রোডের কাছের একটি পাড়ার মোড়ে বিকট জোরে বাজতে থাকা সাউন্ড বক্সের শব্দে। রাত সাড়ে

তিনটেতেও সেখানে দেদার নাচে মত্ত একদল যুবক তখন কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Night Curfew Kolkata Police Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE