কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে মঙ্গলবার থেকে স্নাতকোত্তরের (এলএলএম) ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও পড়ুয়ারা না আসায় ক্লাস হল না। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, চতুর্থ সিমেস্টারের ১২৭ জন পড়ুয়া কলেজে এসেছিলেন। তাঁরা কলেজে এসে প্রজেক্ট পেপার জমা দেন। প্রথম সিমেস্টারের চার জন পড়ুয়া ফর্ম ভর্তি করতে কলেজে এসেছিলেন।
সোমবার ছিল প্রথম সিমেস্টারের ফর্ম পূরণের দিন। মঙ্গলবার থেকে এলএলএমের ক্লাস শুরুর কথা ছিল। তাঁরা কেউ না আসায় এ দিন কলেজ চত্বর ছিল ফাঁকাই। চতুর্থ সিমেস্টারের যারা প্রজেক্ট পেপার জমা দিয়ে এসেছিলেন তাঁদের বেশির ভাগই সোমবারের মতোই অভিভাবকদের সঙ্গে এসেছিলেন। অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে কেন আসছেন? এখনও কি আতঙ্ক কাটছে না?
বৃষ্টি-বাদলার মধ্যে মঙ্গলবার বেশিরভাগ পড়ুয়ার সঙ্গে অভিভাবকেরা ছিলেন। কয়েক জন অভিভাবক এ দিন কলেজের বাইরে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘নিরাপত্তার বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের আগে ভাবা উচিত ছিল। এ বার এ রকম একটা ঘটনার পরে ফের নিয়ম যেন শিথিল না হয় এটা কলেজ কর্তৃপক্ষকেদেখতে হবে।’’
সোমবার কলেজের পরিবেশ নিয়ে পড়ুয়ারা মুখ খুলতে না চাইলেও এ দিন কিন্তু কয়েক জন ছাত্রী বলেন, ‘‘কলেজে যে এ রকম একটা ঘটনা ঘটতে পারে তা কোনও দিন ভাবতে পারিনি। এখন কলেজে যেতে একটু ভয় তো করছেই। বাড়ি থেকে বলছে কলেজে কিছু দিন পর থেকে যেতে। কিন্তু সামনে পরীক্ষা।’’
এ দিন দুপুর ২টোর পরে কলেজ থেকে বেরোনোর সময় উপাধ্যক্ষ নয়না চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মনোজিৎ ভিজে বেড়ালের মতো কলেজে এসেছিল। এ রকম জঘন্য কাজ করবে তা ভাবতে পারি না। আমরা পুলিশের থেকে সব রকম সাহায্য পাচ্ছি। সিসি টিভি ফুটেজ থেকে পুলিশ অনেক তথ্য পেয়েছে। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’’
২৫ জুন গণধর্ষমের ঘটনার সময় নয়না কি কলেজে উপস্থিতি ছিলেন? কলেজের রেজিস্টার খাতায় লেখা নয়নার কলেজে আসা এবং কলেজ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কখন সেই লেখা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছিল। এ দিন নয়না সংবাদমাধ্যমকে জানান, ২৫ জুন অর্থাৎ ঘটনার দিন তিনি কলেজে সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে এসে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে যান। প্রথমে পরিচালন সমিতির সভাপতির কাছে যান। তার পরে আইন বিভাগে বৈঠক ছিল। সেখান থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। পরের দিন অর্থাৎ ২৬ তারিখ তিনি দুপুর আড়াইটে নাগাদ বেরিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস কমিটির বৈঠকে যান।
এ দিকে বালিগঞ্জ আইটিআই কলেজের সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, ওই কলেজে অনেক রাত পর্যন্ত গান চালিয়ে হই-হুল্লোড় চলে। ভোজপুরি গান চালিয়ে জন্মদিন পালন হয়। এতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ওই বাসিন্দারা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপিও জমা দেন। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা সঞ্জয় চৌধুরীর মদতেই এই তাণ্ডব চলে। সঞ্জয়ও মনোজিতের ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ উঠেছে। সঞ্জয় ১২ বছর আগে আইটিআই কলেজ থেকে পাশ করে বেরিয়ে যাওয়ার পরেও তাঁর দাপট চলছে। তাঁর গাড়িও কলেজ চত্বরেই তিনি রাখেন।
তবে সঞ্জয়ের ফোন বন্ধ ছিল। যোগাযোগ করা যায়নি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে অনেকে ঘোলাজলে মাছ ধরার চেষ্টা করছে। সঞ্জয় সম্পর্কে অভিযোগ এখনও পাইনি। আর জি করে ঘটনার পরেও নানা জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছিল। কিন্তু তার সত্যতা ছিল না। আমরা বিষয়টা খতিয়ে দেখে দোষী প্রমাণিত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)