কলকাতা পুরসভার কোষাগারের হাল যে ভয়াবহ, তা আর নতুন কোনও খবর নয়। অবস্থা এমনই যে, গত মার্চ মাস থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা এককালীন টাকা (কমিউটেশন ও গ্র্যাচুইটি) এখনও হাতে পাননি। ঠিকাদারেরাও গত দু’বছরের বেশি সময় ধরে বকেয়া টাকা পেতে পুরসভার দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পুরসভার আয়ের চেয়ে ব্যয়ের বহর বেশি হওয়ায় চিন্তিত খোদ মেয়র ফিরহাদ হাকিমও।
পুরসভার মোট আয়ের বেশির ভাগই আসে সম্পত্তিকর থেকে। সম্পত্তিকর বিভাগ সূত্রের খবর, গত বছরের তুলনায় আদায় বাড়লেও শতাংশের হারে তা নগণ্য। বিশেষত, উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতা থেকে সম্পত্তিকর আদায়ের হার যথেষ্ট কম হওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে পুরসভার। এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতাতেই মোটা অঙ্কের করখেলাপির সংখ্যা বেশি। তাঁদের বকেয়া করের অঙ্ক প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। কর না দেওয়ার কারণ হিসেবে নান ধরনের যুক্তি সাজিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন তাঁরা।’’
পুরসভার সম্পত্তিকর বিভাগ সূত্রের খবর, ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সম্পত্তিকর বাবদ মোট আদায় হয়েছিল ৯৫৩ কোটি ২০ লক্ষের কিছু বেশি টাকা। চলতি বছরে ওই একই সময়ে আদায় হয়েছে ৯৯২ কোটি ৬১ লক্ষ টাকার কিছু বেশি। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, এই সময়কালের নিরিখে গত বছরের তুলনায় এ বছর এসি (নর্থ), অর্থাৎ উত্তর কলকাতায় আদায় বৃদ্ধি হয়েছে ১.৮১ শতাংশ। আবার এসি (সাউথ), অর্থাৎ দক্ষিণ কলকাতায় সম্পত্তিকর আদায় বৃদ্ধির হার মাত্র ১.১১ শতাংশ। পুর আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, দক্ষিণে আদায় একেবারেই সন্তোষজনক নয়। কারণ, দক্ষিণ কলকাতায় সম্পত্তির পরিমাণ বেশি।
২০২৩ সালের ১ এপ্রিল থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত যে পরিমাণ সম্পত্তিকর আদায় হয়েছিল, ২০২৪ সালের ওই সময়কালে তা বৃদ্ধি পায় ৭.৮৬ শতাংশ। আবার ২০২২ ও ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান যাচাই করে দেখা যাচ্ছে, ’২২ সালের তুলনায় ’২৩ সালে উত্তর কলকাতায় আদায় বৃদ্ধি হয়েছিল ১২.৭০ শতাংশ। দক্ষিণ কলকাতায় বেড়েছিল ১৫.৯৪ শতাংশ। এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘গত বছরের নিরিখে এ বছর আদায়ের পরিমাণ এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪০ কোটি টাকা বাড়লেও তা আহামরি কিছু নয়। কারণ, উত্তর ও দক্ষিণে আদায়ের হার আশানুরূপ নয়। উত্তরের তুলনায় দক্ষিণ কলকাতায় সম্পত্তির পরিমাণ বেশি। সে দিক থেকে বিচার করলে দক্ষিণে সম্পত্তিকর আদায় নগণ্যই বলা চলে।’’
উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতা অস্বস্তিতে রাখলেও টিটিডি (টলি ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট), অর্থাৎ টালিগঞ্জ এলাকায় সম্পত্তিকর আদায় কিছুটা স্বস্তিতে রেখেছে। ১ এপ্রিল থেকে ১০ ডিসেম্বরের সময়কালে গত বছরের চেয়ে এ বছর সম্পত্তিকর আদায় বৃদ্ধির হার ৬.১৬ শতাংশ। গত বছর তা ছিল -৫.৩৩ শতাংশ। যদিও ২০২২ ও ২০২৩ সালের নিরিখে এ বছর টিটিডি-তে আদায়ের হার কম। ওই সময়কালে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে টালিগঞ্জে আদায় বৃদ্ধি হয়েছিল ১৩.৪৭ শতাংশ।
চিন্তা বাড়াচ্ছে গার্ডেনরিচ ইউনিটও (জিআরইউ)। পুর পরিসংখ্যান বলছে, ১ এপ্রিল থেকে ১০ ডিসেম্বরের সময়কালে ২০২৪ সালের তুলনায় চলতি বছরে গার্ডেনরিচে সম্পত্তিকর আদায় কমেছে ১৯.৪ শতাংশ। ২০২৪ সালে সেখানে আদায়ের হার ছিল ৩৮.২৮ শতাংশ। এসএসইউ (সাউথ সাবার্বান ইউনিট), অর্থাৎ বেহালায় সম্পত্তিকর আদায়ের হার গত বছরের তুলনায় কম। বেহালায় গত বছর আদায়ের হার ছিল ১৩.০৮ শতাংশ। এ বছর তা ১২.৯৬ শতাংশ।
পুরসভার এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘চলতি অর্থবছর শেষ হতে মাত্র তিন মাস বাকি। সম্পত্তিকর আদায়ের হার আশানুরূপ নয়। সামনের তিন মাসে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা না বাড়ালে কর্মীদের বেতন কী ভাবে দেওয়া হবে, তা নিয়েই মাথা ঘামাতে হবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)