Advertisement
E-Paper

Coronavirus in Kolkata: বল্গাহীন উৎসব পালন বাড়াচ্ছে সংক্রমণ

অক্টোবরে দুর্গাপুজো শেষ হওয়ার কয়েক দিন পরেও দেখা যায়, যতটা আশঙ্কা করা গিয়েছিল, তত জন আক্রান্ত হননি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৩০
বিধিভঙ্গ: ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে ঘুরতে আসা অধিকাংশের মুখেই মাস্ক নেই। দূরত্ব-বিধি মানারও বালাই নেই। বৃহস্পতিবার।

বিধিভঙ্গ: ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে ঘুরতে আসা অধিকাংশের মুখেই মাস্ক নেই। দূরত্ব-বিধি মানারও বালাই নেই। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

রাজ্যে এক দিনে যত জন আক্রান্ত, তার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ কলকাতার!

মঙ্গলবারের সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকল বুধবারেও। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, বুধবার রাজ্যে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২১২৮ জন। তার মধ্যে কলকাতারই ১০৯০ জন।

এই পরিসংখ্যান থেকেই চিকিৎসক মহলের অনুমান, শহরে জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করেছে। এ বিষয়ে আরও বেশি করে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে, বিদেশযাত্রার সঙ্গে যোগ না-থাকা সত্ত্বেও পাঁচ জন ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ায়। প্রথমে কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পড়ুয়া, তার পরে শহরের দু’জন বাসিন্দা এবং দমদম ও হাওড়ার এক জন করে বাসিন্দা করোনার এই নতুন স্ট্রেনে আক্রান্ত হয়েছেন।

সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে একটি প্রশ্ন উঠে আসছে সাধারণ মানুষ থেকে চিকিৎসক মহলের সামনে। তা হল, আচমকা কলকাতায় সংক্রমণ বৃদ্ধির নেপথ্যে কারণ কী? অনেকের মতে, সম্প্রতি কলকাতার পুরভোটের সময়ে কোভিড-বিধি কার্যত উড়িয়েই প্রচার থেকে সভা, এমনকি বিজয়োৎসবও হয়েছে। তার পরে ছিল শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। অভিযোগ, কলকাতা পুরসভার সভাকক্ষে নব নির্বাচিত কাউন্সিলরদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে কোভিড-বিধি মানা হয়নি। অনেক কাউন্সিলরের মুখে মাস্কও ছিল না। আর এই সবের মাসুলই দিতে হচ্ছে বছর শেষের শহরকে। সাধারণ মানুষ তো বটেই, বিধায়ক থেকে নেতাদেরও একে একে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছে। চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, ‘‘পুরভোটের সময়ে কোভিড-বিধি না মানার ফল ফলতে শুরু করেছে। ২৫ ডিসেম্বর কিংবা বছর শেষের দিনগুলিতে রাস্তায় লাগামছাড়া ভিড়ের পরিণাম কী হবে, তা এখনও জানা যায়নি। তার জন্য আর কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে।’’

বড়দিনে পার্ক স্ট্রিটে জনসমুদ্র।

বড়দিনে পার্ক স্ট্রিটে জনসমুদ্র। ফাইল চিত্র

২৫ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৯৭ (বিগত ২৪ ঘণ্টার পরিসংখ্যান)। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই ২৯ ডিসেম্বরের বুলেটিনে সেই সংখ্যা কী ভাবে ৫৪০-এ পৌঁছল, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। কারণ, অক্টোবরে দুর্গাপুজো শেষ হওয়ার কয়েক দিন পরেও দেখা যায়, যতটা আশঙ্কা করা গিয়েছিল, তত জন আক্রান্ত হননি। তা হলে আচমকা শহরে সংক্রমণ বৃদ্ধির পিছনে কারণ কি শুধু ওমিক্রনের প্রভাব?

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন, সকলেরই যে ওমিক্রন, তা না-ও হতে পারে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টেও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুজোর সময়টা ছিল অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের পড়তির দিক। দ্বিতীয় ঢেউয়ে বহু মানুষ মৃদু উপসর্গ নিয়ে কিংবা উপসর্গহীন ভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন। যার ফলে শরীরে তৈরি হওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে পুজোয় নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা এমনিতেই কম ছিল। অনেকের ক্ষেত্রে আবার প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার পরে মাত্র কয়েক মাস হওয়ায় সংক্রমণের হাত থেকে তাঁরা বেঁচে গিয়েছিলেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতি তেমনটা নয় বলেই অভিমত চিকিৎসকদের।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলেন, ‘‘দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁদের দেহে স্বাভাবিক নিয়মে তৈরি হওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করেছে। আবার দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার পরে যদি ইতিমধ্যে ৬-৯ মাস হয়ে গিয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রেও প্রতিরোধ ক্ষমতা এত দিনে অনেক কমে যাওয়ার কথা। তাই নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ অনেক বেশি। আর ওমিক্রন অত্যন্ত দ্রুত ছড়ায়। এমনকি, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এড়িয়েও আক্রমণ করতে পারে এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট।’’

বিষয়টি আরও স্পষ্ট করলেন শল্য-চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার। তাঁর মতে, গত জুলাই নাগাদ দ্বিতীয় ঢেউ কমতে শুরু করেছিল। সেই তরঙ্গে যাঁরা উপসর্গহীন কিংবা মৃদু উপসর্গযুক্ত ছিলেন, তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তিন-চার মাস পর্যন্ত ছিল। অর্থাৎ, নভেম্বর থেকে ফের তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অন্য দিকে, মাঝারি উপসর্গে আক্রান্ত, অর্থাৎ যাঁদের তিন লিটারের নীচে অক্সিজেন দিতে হয়েছিল, তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ছ’মাস পর্যন্ত থাকতে পারে। সঙ্কটজনক রোগীদের ১৩-১৪ মাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে। দীপ্তেন্দ্রবাবুর কথায়, ‘‘প্রথম ঢেউয়ে আক্রান্ত এবং দ্বিতীয় ঢেউয়ে উপসর্গহীন ও মৃদু উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিরাই এখন নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছেন। সেখানে ওমিক্রনের মতো দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতাসম্পন্ন ভ্যারিয়েন্টের বেশি প্রভাব ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।’’

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই সব কারণেই জমায়েতে অংশ নেওয়া মানুষজন পুনরায় আক্রান্ত হতে শুরু করেছেন। তার পরেও কি পুরভোটের মতো কোভিড-বিধি উড়িয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাবে কলকাতা? প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

Coronavirus in Kolkata Coronavirus Covid 19 corona
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy