Advertisement
E-Paper

নিজভূমে লড়ে চলেছেন ‘পরিযায়ী’ এক গবেষক

আমপানের পরেই সুন্দরবনের দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে তড়িঘড়ি যাদবপুরের পরিচিত দাদা-দিদিদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন কলকাতায় পড়তে আসা, তাঁরই গ্রামের আরও কয়েক জন।

চৈতালি বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২০ ০১:৪৯
কমিউনিটি কিচেনের হিসেবে ব্যস্ত বিশ্বরূপ। নিজস্ব চিত্র

কমিউনিটি কিচেনের হিসেবে ব্যস্ত বিশ্বরূপ। নিজস্ব চিত্র

সুন্দরবনের মাটিতেই তাঁর বেড়ে ওঠা। প্রতিকূলতার সঙ্গে কী ভাবে যুঝতে হয়, শিখেছিলেন সেই ছোট থেকেই। জব কার্ডে মাটি কাটার টাকা দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের পড়াশোনা চালিয়েছেন। কলকাতার বিভিন্ন দফতরে ফাইফরমাস খেটে কলেজে পড়ার খরচ চালিয়েছেন। তবে আমপান-বিধ্বস্ত সুন্দরবনের দুর্দিনে অবশ্য দূরে থাকেননি বিশ্বরূপ প্রামাণিক। বরং সেখানকার মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ছুটে গিয়েছেন বর্তমানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত বিশ্বরূপ। শুরু করেছেন কমিউনিটি কিচেন।

আমপানের চার দিন পরেও সুন্দরবনে বিশ্বরূপের গ্রামে ত্রাণ নিয়ে পৌঁছতে পারেনি প্রশাসন। নদী বাঁধ ভেঙে জলের তলায় গিয়েছে অনেক কিছু। এখনও সেই গ্রামের বাড়িতে আলো-জল নেই। ইন্টারনেট সংযোগও অনিয়মিত। কিন্তু সে সবের তোয়াক্কা না করে নিজের গ্রাম এবং নদীর উল্টো দিকের গ্রাম মিলিয়ে মোট তিনটি কমিউনিটি কিচেন চালু করেছেন বিশ্বরূপ। আমপান-বিধ্বস্ত প্রায় সাড়ে আটশো মানুষের মুখে সেখানেই প্রতিদিন খাবার তুলে দিচ্ছেন তিনি।

আমপানের পরেই সুন্দরবনের দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে তড়িঘড়ি যাদবপুরের পরিচিত দাদা-দিদিদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন কলকাতায় পড়তে আসা, তাঁরই গ্রামের আরও কয়েক জন। ফান্ডের সেই টাকাতেই এখন প্রতিদিন রান্না হচ্ছে কমিউনিটি কিচেনে। চাল-ডাল, আলুর বস্তা গাড়ি করে পৌঁছে যাচ্ছে সুন্দরবনের রায়দিঘি থানার নারাণপুর এবং নরেন্দ্রপুর গ্রামে। সেখানে নারাণপুরে বিশ্বরূপের বাড়িতে তৈরি করা গুদামে সেগুলি প্রথমে জমা করা হচ্ছে। পরে তা নৌকায় নদী পার করিয়ে কুয়েমুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন বিশ্বরূপ ও তাঁর গ্রামের ছেলেরা। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবের পরে ওই গ্রামের চাষের জমি, বসতভিটে, মাছের ভেড়ি সবই এখন লবণাক্ত জলের তলায়।

আরও পড়ুন: চাঁদা তুলে চালু হল মহিলাদের কোয়রান্টিন কেন্দ্র

বিশ্বরূপ জানাচ্ছেন, আপাতত দুর্গত মানুষের মুখে খাবার পৌঁছে দেওয়াই তাঁর প্রাথমিক লক্ষ্য। এর পরে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মাঝিদের নৌকা সারানোর ব্যবস্থা করবেন ওই ফান্ডের টাকায়। তার পরে লক্ষ্য, গ্রামে উপড়ে যাওয়া গাছগুলির জায়গায় নতুন চারা লাগানো। তার জন্য বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বন্ধুর সঙ্গে পরামর্শও সেরে রেখেছেন। সে জন্য এলাকার মাটি, জল পরীক্ষা করার জন্য নমুনা সংগ্রহের কাজ চলছে। কলকাতা থেকে ত্রাণ নিয়ে পৌঁছনো যাদবপুরের প্রাক্তনী ও ‘হিউম্যানস ইন সলিডারিটি’র উদ্যোক্তা অশ্রুজিৎ নন্দীও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, গাছের চারার বন্দোবস্ত করে দেবেন। এর পাশাপাশি, আস্তে আস্তে আশপাশের গ্রামেও তৈরি হচ্ছে কমিউনিটি কিচেন। প্রথমে রাজনৈতিক চাপ এলেও বিশ্বরূপ স্থানীয় ‘দাদা’দের খাদ্যের প্রয়োজনীয়তার এমন পাঠ পড়িয়েছেন যে, এখন ওই সব কমিউনিটি কিচেনে হাত লাগাচ্ছেন তাঁরাও।

বিশ্বরূপের বাড়িতে তাঁর এক দাদা পোলিয়ো আক্রান্ত। বিঘে তিনেক জমিতে চাষ করে সংসার চালান তাঁর বাবা ও বাকি দুই ভাই। গবেষণা শেষে কী করবেন? বিশ্বরূপ বলেন, ‘‘এখানে মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। পেট চালানোর মতো টাকা রোজগার করতে পারলেই হবে।’’

Cyclone Amphan Sundarbans Jadavpur University
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy