Advertisement
E-Paper

আধিকারিক-ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকায় নজর, নিয়ম ভেঙে চারতলা ফ্ল্যাটবাড়ি তৈরি হল কী ভাবে? দেখবে কলকাতা পুরসভা

অভিযোগ, মাস কয়েক আগেই ফ্ল্যাটবাড়িটির একাংশ হেলে গিয়েছিল। তখন প্রোমোটার নিজেই মেরামতির কাজ শুরু করেন। ১৭ ডিসেম্বর থেকে বাড়ি সোজা করার কাজ শুরু হয়েছিল বলেও জানা গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:৪০
Role of then officials and engineers in Baghajatin high-rise collapse under KMC

ছবি: সারমিন বেগম।

বাঘাযতীনের বিদ্যাসাগর কলোনিতে হেলে পড়া ফ্ল্যাটবাড়ি নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক তথা ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকা এখন কলকাতা পুরসভার আতশকাচের তলায়। মঙ্গলবার ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের ওই ফ্ল্যাটবাড়িটি হেলে পড়ার ঘটনা ঘটে। ঘটনায় ইতিমধ্যে এফআইআর দায়ের হয়েছে নেতাজিনগর থানায়। ডেভেলপার এবং নির্মাণ সংস্থার মালিকের পাশাপাশি আটটি ফ্ল্যাটের মালিকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করা হয়েছে। ওই চারতলা ফ্ল্যাটবাড়িতে ডেভেলপারেরও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। পুলিশি তদন্তের সঙ্গে কলকাতা পুরসভা এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করার মুখে। এফআইআরে বলা হয়েছে, অভিযুক্তেরা প্রশাসনকে না জানিয়ে, প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা না নিয়েই রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চালাচ্ছিলেন। মাটি পরীক্ষা না করেই চলছিল ‘হাইড্রলিক জ্যাকিং’। এই কাজ করছিল সুভাষ নাগরার সংস্থা নাগরা কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড। ডেভেলপার সুভাষ রায়ও যুক্ত ছিলেন কাজে। এর ফলে চারতলা বাড়িটি হেলে পড়ে। তার জেরে আশপাশের বাড়িরও ক্ষতি হয়েছে। এই কাজের জন্য কোনও ছাড়পত্রও (স্যাংশন প্ল্যান) দেখাতে পারেননি ফ্ল্যাটবাড়ির ডেভেলপার।

‘শুভ অ্যাপার্টমেন্ট’ নামে চারতলা ফ্ল্যাটবাড়ির প্রতি তলায় দু’টি করে ফ্ল্যাট ছিল। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, ওই ফ্ল্যাটবাড়িতে আগেই ফাটল দেখা দিয়েছিল। সেই সময় পুর কর্তৃপক্ষের তরফে ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ, তার পরে আবার ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে বসবাস করতে থাকেন অনেকে। স্থানীয়দের আরও দাবি, ফ্ল্যাটটি নিয়ম মেনে তৈরি করা হয়নি। ওই অঞ্চলে তিনতলা ফ্ল্যাট তৈরির অনুমতি দেয় পুরসভা। অভিযোগ, সেই নিয়ম ভেঙে চারতলা ফ্ল্যাট তৈরি করা হয়েছিল। সাধারণত কলোনি এলাকায় তিনতলা পর্যন্ত বহুতল নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে চতুর্থ তলটিও তৈরি করা হয়েছিল। জানা যাচ্ছে, ২০১০-১১ সালে এলাকার একটি ডোবা ভরাট করে ওই বহুতলটি তৈরি হয়। ২০১২ সাল থেকে মানুষ বসবাস শুরু করেন ‘শুভ অ্যাপার্টমেন্ট’-এ। অভিযোগ, মাস কয়েক আগেই ফ্ল্যাটবাড়িটির একাংশ হেলে গিয়েছিল। তখন প্রোমোটার নিজেই মেরামতির কাজ শুরু করেন। ১৭ ডিসেম্বর থেকে বাড়ি সোজা করার কাজ শুরু হয়েছিল বলেও জানা গিয়েছে। তার জন্য আটটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের অন্যত্র পাঠানো হয়।

কলকাতা পুরসভা জানতে চায়, কে বা কারা এই বহুতল নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিল। যে হেতু ১০-১২ বছর আগেই ওই বহুতলটি তৈরি হয়েছিল, তাই যে ইঞ্জিনিয়ারেরা ওই সময় বোরো ১০-এর দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নজর এড়িয়ে ডোবা ভরাট করে কী ভাবে নির্মাণ হল তা নিয়ে ওই সময়কার পুর আধিকারিক এবং ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকাকে খতিয়ে দেখবে কলকাতা পুরসভা।

বুধবার গঙ্গাসাগর মেলা থেকে নিজের দায়িত্ব সম্পন্ন করে কলকাতায় ফিরছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তার পর এই বিষয়ে কলকাতা পুরসভার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করবেন তিনি। কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের দায়িত্ব তাঁরই হাতে। বিরোধীরা বাঘাযতীনের বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনার সঙ্গে গার্ডেনরিচের ঘটনার তুলনা টানা শুরু করেছেন । কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, গত বছর মার্চ মাসে গার্ডেনরিচে যে ঘটনা ঘটেছিল তার সঙ্গে বাঘাযতীনের ঘটনাকে এক করে দেখা উচিত নয়। কারণ, বর্তমান কলকাতা পুরসভার প্রশাসন এই ঘটনার সঙ্গে কোনও ভাবেই যুক্ত নয়। তাই দু'টি ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাত থেকে হেলে পড়া বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু করেছে পুরসভা। তদন্তের জন্য বাড়িটি থেকে নির্মাণসামগ্রী সংগ্রহ করার কাজ শুরু করেছে কলকাতা পুরসভা। কারণ, বহুতলটির নির্মাণ নিয়ে একাধিক অভিযোগ উঠে এসেছে। তাই বিষয়টির গভীরে গিয়ে খতিয়ে দেখতে চায় কলকাতা পুরসভা।

Baghajatin Building Collapse Baghajatin Building Collapse KMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy