প্রতীকী ছবি।
কাশীপুর। গোরাবাজার। তারাতলা। রাজাবাজার। গত এক মাসে পর পর শহরের বিভিন্ন প্রান্তে আগুন লেগেছে। নিঃস্ব হয়েছে বহু পরিবার। আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠেছে, আগুন নেভানোর কাজ দ্রুত হয়নি।
অথচ এই পরিস্থিতিতেও প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা দামের শ’দুয়েক পোর্টেবল পাম্প দমকলের সদর দফতরের গুদামে স্রেফ অব্যবহৃত অবস্থায়, বস্তাবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে। এক দিন-দু’দিন নয়, প্রায় দু’বছর ধরে। দমকল দফতর সূত্রের খবর, ক্রমশ মরচে ধরে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে উঠছে ওই সব পাম্প।
সরকারি সূত্রের খবর, দ্রুত আগুন নেভানোর জন্য বছর দুই আগে পোর্টেবল পাম্প কিনেছিল দমকল দফতর। তৎকালীন দমকলমন্ত্রী জাভেদ খানের আমলে কেনা হয়েছিল শ’তিনেক পাম্প। তার পরে প্রায় দু’বছর কেটে গেলেও অধিকাংশ পাম্প দমকলের গুদামে পড়ে নষ্ট হচ্ছে বলে
অভিযোগ। এ প্রসঙ্গে দমকলের ডিজি জগমোহন বলেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন জেলা প্রশাসন ও পুরসভাকে একাধিক বার চিঠি লিখে পাম্প নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছি। কিন্তু কেউ না নিয়ে গেলে আমরা তো সেগুলি রাস্তায় ফেলে দিতে পারি না।’’ তাঁর দাবি, পড়ে থাকা পাম্পগুলি শীঘ্রই নিয়ে যাওয়ার জন্য ফের জেলা প্রশাসন ও পুরসভাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।
শহর-শহরতলি ছাড়াও প্রত্যন্ত গ্রামে বড় কোনও অগ্নিকাণ্ড দ্রুততার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন পুরসভা ও জেলা প্রশাসনকে পোর্টেবল পাম্প বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। বলা হয়েছিল, প্রতিটি পুরসভা, পঞ্চায়েত এলাকায় পোর্টেবল পাম্প থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তরফে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ হবে। কারণ, গ্রামেগঞ্জে কোনও বড় রকমের আগুন লাগলে নিকটবর্তী দমকল কেন্দ্র থেকে ইঞ্জিন পৌঁছতেই কয়েক ঘণ্টা পার হয়ে যায়।
দমকল সূত্রের খবর, এর পরেই ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে শ’তিনেক পাম্প কেনা হয়। প্রতিটি পাম্পের দাম পড়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। দমকলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পাম্পগুলি দীর্ঘ দিন বস্তাবন্দি হয়ে থাকায় মরচে ধরছে। ক্রমশ সেগুলি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ছে।’’ দমকলের অধিকর্তা তরুণ সিংহের অবশ্য দাবি, ‘‘বেশি পাম্প পড়ে নেই। যে সব পাম্প পড়ে রয়েছে, সেগুলি যাতে পুনরায় কাজে লাগানো যায় তার ব্যবস্থা করা হবে।’’
দমকল সূত্রের খবর, বহু চিঠি চালাচালির পরে গত বছরের জুনে বিধাননগর পুরসভা ৮টি পাম্প দমকল থেকে সংগ্রহ করেছে। কিন্তু কলকাতা পুরসভা এখনও একটিও এমন পাম্প নেয়নি। পুরসভার এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘পুর প্রশাসনের কাছে পোর্টেবল পাম্প রয়েছে। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে দমকল কেন্দ্র থাকায় আগুন লাগলে দমকলের গাড়ি পৌঁছতে দেরি হওয়ার কথা নয়। সমস্যা বেশি গ্রাম এবং পঞ্চায়েত এলাকায়। আমাদের পরিবর্তে ওই পোর্টেবল পাম্প যাতে পঞ্চায়েত এলাকায় দেওয়া যায়, সে বিষয়ে দমকলকে জানিয়েছি।’’
গোটা ঘটনার জেরে সরকারি অন্দরমহলেই সমন্বয় ও পরিকল্পনার অভাবের অভিযোগ উঠেছে। আধিকারিকদের একাংশের মতে, সরকারি কোষাগারে এমনিতেই টানাটানি। তার মধ্যে এ ধরনের অপচয় মেনে নেওয়া যায় না। বিষয়টি নিয়ে বর্তমান দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ফোন এবং এসএমএস করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy