দুমড়ে- মুচড়ে: দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেলারে ধাক্কা মারে স্কুলগাড়িটি। আহত স্কুল ছাত্রী l বৃহস্পতিবার, ইএম বাইপাসের ধাপা রোডে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
শিশু দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান ছিল স্কুলে। তাতে অংশ নিতে বৃহস্পতিবার সকালে স্কুল ইউনিফর্মের বদলে অন্য রঙিন পোশাকেবাড়ি থেকে বেরিয়েছিল অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী অন্বেষা মালিক (১৪)। এর পরে স্কুলগাড়িতে উঠে স্কুলে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় মারাত্মক জখম হল সে। গুরুতর জখম ওই কিশোরীকে ভর্তি করানো হয়েছে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে।স্কুলগাড়ির চালক রাজু দাসও এই ঘটনায় আহত হয়েছেন। গাড়িতে অন্বেষা ছাড়াও আরও এক ছাত্রী ছিল। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রাথমিকতদন্তে পুলিশ জেনেছে, স্কুলগাড়ির চালক নিয়ন্ত্রণ হারানোর ফলেই এই দুর্ঘটনা ঘটে।
একই দিনে পঞ্চসায়র থানা এলাকার চক গড়িয়া স্ট্রিটে একটি বেসরকারি স্কুলবাস রানা রাউত (২৮) নামে এক সাইকেল আরোহীকে ধাক্কা মারে। জখম অবস্থায় রানাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই বাসে তখন তিন জন পড়ুয়া ছিল। তাদের অবশ্য বিশেষ চোট-আঘাত লাগেনি বলেই পুলিশের দাবি। ওই পড়ুয়াদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
স্কুলগাড়ি দুর্ঘটনাটি ঘটে এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ। ই এম বাইপাস থেকে এক কিলোমিটার ভিতরে, ধাপা রোডের সাহেব আবাদ এলাকায়। চালক নিয়ন্ত্রণ হারানোয়দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রেলারের পিছনে ধাক্কা মারে স্কুলগাড়িটি। ঘটনার পরেই ছুটে আসেন স্থানীয় লোকজন। এক প্রত্যক্ষদর্শী বিনয়কুমার পাল বলেন, ‘‘স্কুলগাড়ির সামনের দিকটা পুরো ভেঙে, তুবড়ে গিয়েছে। চার দিকে কাচের টুকরো ছড়িয়েপড়েছিল। কোনও মতে গাড়ির সামনের আসন থেকে তিন জনকে বার করি। সব চেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল গাড়ির সামনে বাঁ দিকেরজানলার ধারে বসা মেয়েটির। গাড়ি থেকে বার করে ওদের একটি সিমেন্টের চাতালে বসিয়ে দিই। মেয়েটি সেখানে বসতেই চাতাল রক্তে ভরে যায়। একটি চলন্ত গাড়ি থামিয়ে ওদের নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।’’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ধাক্কাটা প্রধানত লাগে স্কুলগাড়ির বাঁ দিকে। সে দিকেই সামনের আসনে জানলার ধারে বসে ছিল অন্বেষা। তার পাশে ছিল আর এক ছাত্রী। তার পাশে চালক। গাড়ির বাঁ দিকে ধাক্কারঅভিঘাত এতটাই বেশি ছিল যে, সব থেকে বেশি চোট পায় অন্বেষাই। পুলিশ জানিয়েছে, অন্বেষাকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ থেকে সল্টলেকের একটিবেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা সঙ্কটজনক। স্থানীয়েরা জানান, স্কুলগাড়িটি অন্য পড়ুয়াদের তুলতে যাচ্ছিল। তাঁদের মতে, পড়ুয়া ভর্তিঅবস্থায় স্কুলগাড়িটি দুর্ঘটনায় পড়লে আরও অনেকের আহত হওয়ার আশঙ্কা ছিল।
অন্বেষার বাড়ি ধাপা রোডেরই বৈচতলায়। সে পদ্মপুকুরের হোলি চাইল্ড স্কুলের ছাত্রী। এদিন ওই বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অন্বেষার মা রঞ্জিতা মালিক, বাবা অমিত মালিক এবং কয়েক জন আত্মীয় উদ্বিগ্ন মুখে বসেরয়েছেন। অমিত বলেন, ‘‘স্কুলগাড়িটা বেপরোয়া ভাবে চলছিল বলে শুনেছি। বাচ্চাদের নিয়ে এ ভাবে গাড়ি চালালে কাদের ভরসায় তা হলে স্কুলে পাঠাব?’’ অমিতের এক আত্মীয়শুভঙ্কর সরকার বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন যে, অন্বেষার মাথার পিছনে আঘাত লেগেছে। পা ভেঙে গিয়েছে। মুখেও আঘাতলেগেছে। রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ জানাক, কার দোষে এই ঘটনা ঘটল।’’
স্কুলগাড়ির মালিক কিশোর দাসের অবশ্য দাবি, ‘‘উল্টো দিক থেকে গাড়ি চলে আসায় সেটিকে বাঁচাতে গিয়েই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেলারে ধাক্কা মেরেছে স্কুলগাড়ি।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ধাপা রোডের ধারেবেআইনি ভাবে বড় বড় ট্রাক ও ট্রেলার রাখা থাকে। কেন এটা বন্ধ হচ্ছে না?’’ প্রগতি ময়দান থানার পুলিশ জানিয়েছে, স্কুলগাড়িটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত করা হবে।
‘পুল কার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক সুদীপ দত্ত বলেন, ‘‘আমরা প্রত্যেক বছর স্কুলগাড়ির চালকদের সচেতন করতে কর্মশালা করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, সমস্ত স্কুলগাড়ির চালককে আমরা ওই কর্মশালায় পাই না। কারণ, সকলের সঙ্গেআমাদের তরফে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না। দুই তরফেরই উদ্যোগ দরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy