E-Paper

কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা ঘিরে এখনও নীরবতা, ভাঙতে চাই সচেতনতা 

কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘সংহিতা’র অধিকর্তা সোমা সেনগুপ্ত জানালেন, ভারতে কর্মরতা মহিলাদের ১০ শতাংশেরও কম রয়েছেন সংগঠিত ক্ষেত্রে।

সুনীতা কোলে

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৪:৫৪
An image of sexual harassment

—প্রতীকী চিত্র।

দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে পাশ হয়েছিল ‘সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট অব উইমেন অ্যাট ওয়ার্কপ্লেস (প্রিভেনশন, প্রহিবিশন, রিড্রেসাল) অ্যাক্ট’। প্রগতিশীল এই আইনের সুবিধা কি পাচ্ছেন কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার শিকার হওয়া মহিলারা? অভিযোগ করতে তাঁরা কি এগিয়ে আসছেন? অভিযোগ করার পরে কী ভাবে এগোচ্ছে ঘটনাপ্রবাহ? কোথায় দাঁড়িয়ে এই আইনের প্রয়োগ? আইনটি পাশের ১০ বছর পূর্তির মুখেই একটি আলোচনাসভায় উঠল এই সমস্ত প্রশ্ন।

লিঙ্গভিত্তিক হিংসার বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে বিশ্ব জুড়েই। সেই উপলক্ষে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বয়ম’ আয়োজিত আলোচনায় উঠে এল সচেতনতার অভাবের দিকটিই। কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘সংহিতা’র অধিকর্তা সোমা সেনগুপ্ত জানালেন, ভারতে কর্মরতা মহিলাদের ১০ শতাংশেরও কম রয়েছেন সংগঠিত ক্ষেত্রে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের মহিলাদের সিংহভাগই এই আইন সম্পর্কে অন্ধকারে। তিনি জানাচ্ছেন, সংগঠিত ক্ষেত্রের যেখানে ‘ইন্টারনাল কমপ্লেন্টস কমিটি’ (আইসিসি) রয়েছে, সেখানেও আইসিসি-র সদস্যদের মধ্যে যথাযথ তদন্ত পদ্ধতি এবং আইন নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। ফাঁক রয়েছে আইন মেনে কমিটি তৈরির ক্ষেত্রেও। ফলে কেউ অভিযোগ জানালেও বেশির ভাগ সময়ে অধরাই থেকে যাচ্ছে সুরাহা। তা ছাড়া, অভিযোগের তদন্তে যে গুরুত্ব দেওয়া হয়, তার ছিটেফোঁটাও দেওয়া হয় না প্রথমেই হেনস্থা ঠেকাতে। অথচ, আইনে হেনস্থা আটকানোয় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যথেষ্টই।

তদন্তে দীর্ঘসূত্রতাও আর একটি বাধা, জানাচ্ছেন হাই কোর্টের আইনজীবী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা দেবাশিস তুলে আনেন সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক একটি রায়ের কথা। ২০০৯ সালে দায়ের হওয়া একটি মামলার আপিলের প্রসঙ্গে গত মে মাসেই সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য করেছিল, আইনটির প্রয়োগে গুরুতর ফাঁক থাকছে। পাশাপাশি, কোর্ট নির্দেশ দেয়, সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানে আইসিসি তৈরি হয়েছে কি না, তা দেখতে হবে রাজ্যগুলিকে। কমিটি আইন মেনে তৈরি কি না, দেখতে হবে তা-ও। অসংগঠিত ক্ষেত্রে অভিযোগের সুরাহা করার কথা জেলার লোকাল কমিটির। কিন্তু কমিটিই নেই বহু ক্ষেত্রে। এমনকি, সম্প্রতি যৌন হেনস্থার প্রতিকার চেয়ে দিল্লিতে কুস্তিগিরদের ধর্নার সময়ে জানা যায়, দেশের ৩০টি জাতীয় ক্রীড়া সংগঠনের ১৬টিতেই নেই কমিটি।

অভিযোগকারিণীদের নিয়ে কাজ করা শীর্ষা গুপ্ত জানান, সংগঠিত ক্ষেত্রের ১০০টি অভিযোগ বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, ৯৬ জনের নানা ভাবে চরিত্রহনন করা হয়েছে। ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত উচ্চ পদাধিকারী। ফলে তদন্তে বাধা পেয়েছেন কমিটির প্রধানও। ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে অভিযোগ মান্যতা পেলেও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানা যায়নি। ১২ শতাংশ অভিযোগকারিণীই বরখাস্ত হয়েছেন, বদলি করা হয়েছে ১৬ শতাংশকে। সামাজিক সম্মানহানি ও হেনস্থার ভয়ে বহু মহিলাই অভিযোগ করেন না, আলোচনায় উঠে আসে তা-ও। ‘স্বয়ম’-এর অধিকর্তা অমৃতা দাশগুপ্ত জানান, এ ভাবেই তৈরি হয় বিষয়টি ঘিরে এক প্রকার নীরবতার আবরণ, যা আখেরে সুবিধা করে দেয় হেনস্থাকারীরই।

আবরণ ভাঙতে তাই সচেতনতার কোনও বিকল্প নেই বলেই মত অমৃতার। এর জন্য এগিয়ে আসতে হবে সব নিয়োগকর্তাকে। কর্মীদের জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব নিতে হবে তাঁদেরই। এর জন্য নিয়মিত সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মশালার প্রয়োজন রয়েছে। সামাজিক ভাবেও সচেতনতা বাড়াতে সংবাদমাধ্যম, সুশীল সমাজ ও সমাজকর্মীদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান তিনি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Women Harassment Workplace

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy