কোনও রকম পরিচয়পত্র না দেখেই থাকতে দেওয়া হত অতিথিদের! পটনাকাণ্ডে পাঁচ গ্রেফতারির পর মঙ্গলবার এমনটাই অভিযোগ উঠেছিল কলকাতার আনন্দপুরের সেই গেস্ট হাউসের বিরুদ্ধে। এ বার জানা গেল, গেস্ট হাউসে থাকার সময় বৈধ পরিচয়পত্র দেখাননি ধৃতেরাও। তা সত্ত্বেও কী ভাবে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় গেস্ট হাউসে কাটিয়েছিলেন তাঁরা? প্রশ্ন উঠছে।
শনিবার রাতে আনন্দপুরের মাদুরদহ এলাকার ওই অতিথি আবাস থেকে চার জন গ্রেফতার হন। ধৃতদের নাম তৌসিফ রাজা ওরফে বাদশা, নিশু খান, ভীম কুমার এবং হরিশ কুমার। শুক্রবারই তাঁরা ওই গেস্ট হাউসে এসে উঠেছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, থাকার সময় ধৃতেরা সকলে পরিচয়পত্রও দেখাননি। পাঁচ জনের ওই দলের এক জন ভিন্ন এক ব্যক্তির পরিচয়পত্র গেস্ট হাউসে জমা দিয়েছিলেন। সেই পরিচয়পত্রটি আসল কিনা তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। তবে এই পরিচয়পত্রটি ভিন্রাজ্যের বলে জানা গিয়েছে। আর এক জন জানিয়েছিলেন, তিনি পরে পরিচয়পত্র জমা দেবেন। পরে তা দেননি। তবে নিশু তাঁর নিজের নথিই দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:
ইতিমধ্যে ওই গেস্ট হাউসের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের হয়েছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। রবিবার সূত্র মারফত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, ওই গেস্ট হাউসে নিরাপত্তায় বেশ কিছু অনিয়ম রয়েছে। আরও অভিযোগ ওঠে, প্রায়ই অতিথিদের পরিচয়পত্র ভাল করে খতিয়ে না দেখেই থাকতে দেওয়া হয় সেখানে। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্তে নামে পুলিশ। তাতে দেখা যায়, গত কয়েক দিনে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াও বেশ কয়েক জনকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবারের পর থেকে যাঁরা যাঁরা গেস্ট হাউসে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের নথি মেলেনি। এঁরা গেস্ট হাউসে কোনও পরিচয়পত্রই জমা দেননি। কিন্তু অন্য অতিথিদের মতোই বহাল তবিয়তে থেকেছেন তাঁরা! এর পরেই গেস্ট হাউস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে আনন্দপুর থানার পুলিশ। সরকারি নির্দেশ অমান্য করার জন্য ওই অতিথি আবাসের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয় ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ২২৩ (বি) ধারায়।
সংশ্লিষ্ট গেস্ট হাউসটি আনন্দপুর থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। শনিবার রাতে সেখান থেকেই ধরা পড়েন পটনায় হাসপাতালে ঢুকে গ্যাংস্টারকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ জন। খুনের পর পটনা থেকে সটান কলকাতায় পালিয়ে এসে আনন্দপুরের অতিথি আবাসে উঠেছিলেন অপরাধীরা! শনিবার রাতে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে তাঁদের আটক করে। যদিও সে সময় গেস্ট হাউসের মালকিন জানিয়েছিলেন, গেস্ট হাউসে যে-ই আসুন না কেন, সকলকে বৈধ পরিচয়পত্র দেখার পরেই ঘর দেওয়া হয়। ধৃতদের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। ওই পাঁচ জন শুক্রবার তাঁদের গেস্ট হাউসে উঠেছিলেন। গেস্ট হাউসের তিন তলায় দু’টি ঘর দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। পাঁচ জনের মধ্যে এক মহিলাও ছিলেন। তবে গেস্ট হাউস মালকিনের দাবি, সে সময় তাঁদের হাবভাব দেখে বোঝা যায়নি, সদ্য খুন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। পাঁচ জনের দলটিকে দেখে সন্দেহজনক বলেও মনে হয়নি গেস্ট হাউসের কর্মীদের।
গত বৃহস্পতিবার পটনার হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে আইসিইউতে ভর্তি থাকা চন্দন মিশ্র নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে খুন করে একদল দুষ্কৃতী। নিহত চন্দন নিজেও গ্যাংস্টার ছিলেন। বিহারের বক্সারের বাসিন্দা চন্দনের বিরুদ্ধে ২৪টি ফৌজদারি মামলা ছিল। হাসপাতালে কড়া পুলিশি প্রহরায় চিকিৎসা চলছিল চন্দনের। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশের নজর এড়িয়ে এক দল দুষ্কৃতী হাসপাতালের আইসিইউতে ঢুকে পড়ে। চন্দনকে গুলি করে খুনের পর দু’টি বাইকে চড়ে চম্পট দেয় তারা।