Advertisement
E-Paper

বোনতুতো বাঁধনের টানে ফুটবলের আসর

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:৪৮
দাপট: চলছে প্রতিযোগিতার একটি ম্যাচ। সোমবার, মুরারিপুকুরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

দাপট: চলছে প্রতিযোগিতার একটি ম্যাচ। সোমবার, মুরারিপুকুরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

‘রান্না না করে বাড়ি থেকে তুই কেমন এক পা বেরোস দেখি!’ এ ভাবেই ক্লাস এইটের আইশা পরভিনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তার মা। সোমবার সকালে পাড়ার বোন, দিদিরাই তার হয়ে রান্না করতে বাড়ির হেঁশেলে ঢুকলেন।

একটু বাদে মুরারিপুকুরের বোমার মাঠে রাজাবাজারের সেই লিকপিকে মেয়ের গতির কাছেই প্রতিপক্ষ নবদিশা টিমের খেলুড়েরা কাত। আইশা এবং বৈতুলবাগ গার্লস স্কুলের দশম শ্রেণির কানিস ফাতিমা, দু’জনেই গোল করে জেতাল রাজাবাজারের টিম রোশনিকে। সেই কানিস, পাড়ার মসজিদের ইমামকন্যা যে মেয়েকে ফুটবল পেটানোর ‘অপরাধে’ পাড়ার গুটিকয়েক আধবুড়ো নীতি-জেঠামশাইয়ের কাছে কম গঞ্জনা সইতে হয়নি।

সোমবারের শীতের দুপুর এমন অনেক হিসেব মেটানোর সাক্ষী থাকল। নয়া নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী লড়াইয়ে যখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন এ শহরেরই পার্ক সার্কাস এলাকার নানা বয়সের মেয়েরা, ঠিক তখনই রাজাবাজারের মেয়েদের বহু বছরের এক লড়াইও অন্য আকাশে ডানা মেলল। গত চার বছর ধরে নানা বাধা জয় করে ফুটবল খেলছেন ওই পাড়ার মেয়েরা। নানা কাঠখড় পুড়িয়ে কয়েক মাস আগে ময়দানে টানা অনুশীলনের মাঠও হয়েছে তাঁদের। এ বার শুধু নিজেরা খেলা নয়, মুরারিপুকুরে বচ্ছরকার ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজনেও ওঁরা এখন গোটা রাজ্যের লড়াকু ফুটবলপাগল কন্যেদের ডাক দিচ্ছেন। এই মেয়েদের কাছে ফুটবল এখন নারীর ক্ষমতায়ন বা মেয়েদের বিষয়ে বাঁধা গতের ধারণা ভাঙার নাম। এক ধরনের ভালবাসার বন্ধনের নামও।

গোটা আয়োজনের নেপথ্যের আসল মুখ, রাজাবাজারের লড়াকু তরুণী সাহিনা জাভেদ বললেন, ‘‘আমাদের প্রতিযোগিতার নাম রেখেছি সোরোরিটি কাপ। আগে ভেবেছিলাম, ফ্রেটারনিটি রাখব। ভাইচারা বা ভ্রাতৃত্বের মতো সোরোরিটি মানে বহেনচারা।’’

বোনতুতো এই বাঁধনের ডাকই কলকাতায় টেনে এনেছিল সুন্দরবন লাগোয়া নামখানা থেকে আসা, জীবনে ঘা খাওয়া মেয়েদের দলকে। স্থানীয় সমাজকর্মী মৌমিতা দাস বলছিলেন, ‘‘এলাকায় এখনও মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। মেয়েরা ফুটবল খেললে এলাকায় লিঙ্গ-সাম্যের ধারণা তৈরিতে সুবিধা হয়। স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর অঙ্গ হিসেবেও ওদের ফুটবল শেখানো হচ্ছে।’’ অশোকনগরের কমলা নেহরু গার্লস স্কুলের গরিবের মধ্যে গরিব মেয়েদের জীবনেও ফুটবল মানে মুক্তির সুর। গোবিন্দপুরের রেল কলোনির মেয়েরা বা কলকাতার উপকণ্ঠে নারায়ণপুরের কাদিহাটির আদিবাসী ঘরের মেয়েদের কাছেও ফুটবল মানে সূর্যোদয়। গোলকিপার অর্পিতা মুন্ডা চায় বড় হয়ে পুলিশ হতে। সাইডব্যাক প্রিয়াঙ্কা মুন্ডার স্বপ্ন নার্স হওয়া। ফুটবল ওই স্কুলপড়ুয়া মেয়েদেরও আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করছে।

প্রতিযোগিতার ফাইনালে রাজাবাজারের মেয়েদের টিম রোশনির সঙ্গে খেলা হল অশোকনগরের মেয়েদের। তাতে অশোকনগর ৩-০ গোলে জিতেছে। হারজিতে একটু-আধটু মনখারাপ হলেও শেষমেশ জয়ী কিন্তু একজোট হয়ে লড়াইয়ের স্পর্ধাটাই। সাহিনা বলছিলেন, ‘‘হার-জিত দু’টোকেই মেয়েদের খোলা মনে গ্রহণ করতে শেখাচ্ছে ফুটবল। এই সব ফুটবল প্রতিযোগিতায় জীবনের আরও অনেক বড় সড় লড়াইয়ের মহড়াও হয়ে যাচ্ছে।’’

Football Sorority Cup Raja Bazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy