E-Paper

ঠেলাগাড়িতে হাত দিতেই ছিটকে পড়ে ছটফট করে চিৎকার যুবকের! মৃত্যুর কারণ কি বিজ্ঞাপনী বোর্ড?

মৃত তরুণের নাম সৌরভপ্রসাদ গুপ্ত। ২২ বছরের ওই তরুণের বাড়ি ইলাহাবাদে। জাস্টিস দ্বারকানাথ রোডে তাঁর বাবার একটি ভুজিয়ার দোকান রয়েছে। পুজোয় তিনি সেখান থেকে কলকাতায় এসেছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০৩
জাস্টিস দ্বারকানাথ রোডের এই জায়গায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় সৌরভপ্রসাদের। শনিবার।

জাস্টিস দ্বারকানাথ রোডের এই জায়গায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় সৌরভপ্রসাদের। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

মিটার ঘর, পাম্প ঘরের নামে চারদিকে তারের জটলা। সেই জটলার একটি তার থেকেই বিদ্যুৎ টেনে নিয়ে গিয়ে ডাক্তারের চেম্বারের বিজ্ঞাপনী
বোর্ডে আলো জ্বালানো হয়েছিল। অভিযোগ, প্রবল বৃষ্টিতে জমা জলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময়ে সেই বোর্ডের বিদ্যুতেই তড়িদাহত হয়ে বেঘোরে মৃত্যু হয় এক তরুণের। শুক্রবার বিকেলে জাস্টিস দ্বারকানাথ রোডের এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, বৃষ্টি হলেই যদি জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে থাকে, তা হলে শহরের রাস্তায় জীবনের নিশ্চয়তা কোথায়?

ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় পুরসভা এবং বিদ্যুৎ সংস্থা সিইএসসি-র মধ্যে দায় ঠেলাঠেলি শুরু হয়ে গিয়েছে। পুরসভা দাবি করেছে, ওই রাস্তায় তাদের কোনও বাতিস্তম্ভ নেই। সিইএসসি-ও দাবি করেছে, ওই এলাকায় বিদ্যুতের সমস্ত লাইন রাস্তার নীচ দিয়ে গিয়েছে। বেআইনি ভাবে বহুতলের মিটার থেকে বিদ্যুৎ টেনে নিয়ে গিয়ে বিজ্ঞাপনী বোর্ড জ্বালাতে গিয়েই এই ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে তদন্তে নেমেছে ভবানীপুর থানা। রাহুলকুমার প্রসাদ নামে এক প্রত্যক্ষদর্শীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গাফিলতির জেরে মৃত্যুর একটি মামলা রুজু করেছে। কিন্তু শনিবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকেই গ্রেফতারির কোনও খবর নেই।

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত তরুণের নাম সৌরভপ্রসাদ গুপ্ত। ২২ বছরের ওই তরুণের বাড়ি ইলাহাবাদে। জাস্টিস দ্বারকানাথ রোডে তাঁর বাবার একটি ভুজিয়ার দোকান রয়েছে। পুজোয় তিনি সেখান থেকে কলকাতায় এসেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি বাবার শরীর খারাপ হওয়ায় পরিবারের অন্যরা তাঁকে নিয়ে ইলাহাবাদে গিয়েছেন। দোকান সামলানোর জন্য থেকে গিয়েছিলেন সৌরভ। দোকানেই ঘুমোতেন তিনি।

স্থানীয়েরা জানান, শুক্রবার বিকেলে এলগিন রোডের দিক থেকে দোকানের দিকে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে আসছিলেন সৌরভ। ওই রাস্তায় কোমরসমান জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। সেই সময়েও টানা বৃষ্টি হচ্ছিল। ২/৩ নম্বর জাস্টিস দ্বারকানাথ রোডের বাড়ির কাছে পৌঁছতেই জমা জলের মধ্যে টাল সামলাতে না পেরে সৌরভ ধারে রাখা একটি ঠেলাগাড়ি ধরে হাঁটার চেষ্টা করেন। ঘটনাস্থলের একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এ দিন দেখা গিয়েছে, ওই ঠেলাগাড়িতে হাত দিতেই সৌরভ ছিটকে পড়েন। ছটফট করতে করতে চিৎকার শুরু করেন তিনি। এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই মাটিতে জলের মধ্যে সম্পূর্ণ শুয়ে পড়েন সৌরভ। আরও কিছু ক্ষণ পরে বাঁশ নিয়ে গিয়ে কয়েক জন তাঁকে জলের তলায় খোঁজা শুরু করেন। কোনও মতে সেই বাঁশ তাঁর গায়ে ঠেকতে খোঁজ পাওয়া যায় তরুণের। তাঁকে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তথা অভিযোগকারী রাহুল বলেন, ‘‘বৃষ্টির মধ্যে দোকানের দিকেই যাচ্ছিলেন সৌরভ। পড়ে যাওয়ার পরে চিৎকার করতে থাকেন। কিন্তু কেউই বুঝে উঠতে পারিনি। এর পরে বিষয়টি বুঝতে পেরে বাঁশ নিয়ে এগিয়ে যাই আমরা। কোনও মতে বাঁশ ধাক্কা দিয়ে দিয়ে জলের তলা থেকে ওঁকে খুঁজে বার করা হয়। জমা জলের মধ্যে ওই ঠেলাগাড়িটাই বিদ্যুতায়িত হয়ে ছিল।’’

এ দিন ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায়, ছ’তলা একটি বাড়ির সামনে
ঘটনাটি ঘটেছে। উপরে বসতবাড়ি এবং অফিসঘরের পাশাপাশি বহুতলের নীচে একাধিক দোকান রয়েছে। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখাও রয়েছে সেখানে। বহুতলের সামনের দিকে লাগানো লোহার গ্রিলের সঙ্গেই ঝুলছে একটি গ্লোসাইন বোর্ড। সেটিতেই আলো জ্বালানোর জন্য বহুতলের ভিতর থেকে তার দিয়ে বিদ্যুৎ টানা হয়েছিল। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সিইএসসি-র এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই তার থেকেই গ্লোসাইন বোর্ডটি বিদ্যুৎবাহিত হয়ে ছিল। বেঘোরে প্রাণ গিয়েছে যুবকের।’’ সূত্রের খবর, প্রত্যক্ষদর্শীর পাশাপাশি সিইএসসি-র তরফেও একটি অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে থানায়। তবে, যাঁর নাম ওই গ্লোসাইন বোর্ডে লেখা, সেই চিকিৎসক বলেন, ‘‘কী করে কী হয়েছে, বলতে পারব না। যা বলার পুলিশকে বলেছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Electrocuted

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy