বিপুল বর্ষণে জল থৈথৈ কলকাতা। আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা থেকে বেহাল নিকাশি—বিরোধীদের নিশানায় কলকাতা পুরসভা। সেই সময়ে জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অন্তত ১০ জনের মৃত্যুর ঘটনার দায় কার্যত নাগরিকদের উপরেই চাপিয়ে দিলেন মেয়র পরিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ। তাঁর দাবি, জমা জলে নামা ‘আত্মহত্যা’ করতে চাওয়ার শামিল! ঘটনায় সরকারের ‘দায়ে’র প্রশ্নও উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। যা নিয়ে শাসক শিবিরকে বিঁধতে ছাড়েনি বিরোধীরা।
তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও মেয়র পারিষদ তারকের মতে, ‘‘আমরা যখন সবাই জানি যে, রাস্তায় নামলে শর্ট সার্কিট হতে পারে, আর হলে মৃত্যু হবে। তার পরেও যদি আমি নামি, তা হলে তো আমি নিজেই আত্মহত্যা করার জন্য নামছি!” তিনি বুধবার আরও বলেছেন, “সিইএসসি-ই তো বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। সিইএসসি-ও এক রকম ঠিকই বলছে। রক্ষণাবেক্ষণটা আমরা দেখি। পুরসভার ১৪৪টা ওয়ার্ডে যদি ৫০ লক্ষ বিদ্যুতের খুঁটি থাকে, কটা করে লোক দিয়ে কি পাহারা সম্ভব?’’ তারকের দাবি, ‘‘জনগণেরও তো সচেতন হওয়া উচিত। সরকারের দায়ের কোনও প্রশ্নই নেই। পুরসভার বাতিস্তম্ভগুলো তারা রক্ষণাবেক্ষণ করে। সিইএসসি-র বাতিস্তম্ভ পুরসভা দেখে না।”
মেয়র পারিষদের এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কলকাতার বিজেপি পুর-প্রতিনিধি সজল ঘোষের কটাক্ষ, “তা হলে তো মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে আগে গ্রেফতার করা উচিত! কারণ, তিনি জমা জলে হাফপ্যান্ট পরে হাতে ছাতা নিয়ে নেমেছিলেন। তিনিও তো আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন!” তাঁর সংযোজন, “কলকাতার রাস্তায় মানুষ এবং কুকুরের লাশ পাশাপাশি ভাসছে, এই দৃশ্য ১৯৪৬ সালেও দেখা যায়নি। বিবেক অগ্নিহোত্রী ‘বেঙ্গল ফাইল্সে’ যে দৃশ্য দেখাতে পারেননি, মমতাদি সেটাই দেখিয়ে দিয়েছেন!”
শাসক দলের সমালোচনায় সরব অন্য বিরোধীরাও। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘আত্মহত্যা কেন, এই মৃত্যু তো আসলে খুন! পুর-প্রশাসন, সরকার ও বিদ্যুৎ সংস্থার গাফিলতি এবং অপদার্থতার দায় সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চেপেছে। যদি ম্যান-মেড বলে কিছু হয়ে থাকে, তা হলে এটাই সেটা!’’ প্রদেশ কংগ্রেস মুখপাত্র সুমন রায়চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘নির্লজ্জ আত্মপক্ষ সমর্থন ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী নিজের দলকে কিছুই শেখাতে পারেননি। বাংলার এই দুর্দশা শুধু এই ‘রাজনৈতিক গ্যাং’ ক্ষমতায় আছে বলে, এঁদের বক্তব্য এই রকমই হবে!’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)