শিয়ালদহ স্টেশনে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক যাত্রী ছাড়াও যানবাহনের ভিড়কে শৃঙ্খলিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। ওই স্টেশনে লোকাল ট্রেনের যাত্রী এবং দূরপাল্লার ট্রেনের যাত্রীদের আসা-যাওয়ার পথ আলাদা করাই এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য। সেই লক্ষ্যে লোকাল ট্রেন এবং দূরপাল্লার ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম আলাদা করার কাজ মাসখানেক আগেই সেরে ফেলা হয়েছে। পরের ধাপে স্টেশন চত্বরে যত্রতত্র বিভিন্ন গাড়ি, অ্যাপ-ক্যাব, হলুদ ট্যাক্সি এবং অটোরিকশার দাঁড়িয়ে থাকা ঠেকাতে যানবাহনের প্রবেশ ও প্রস্থানের পথও আলাদা করা হচ্ছে।
‘অমৃত ভারত’ প্রকল্পের আওতায় স্টেশনের সজ্জা বদলের অঙ্গ হিসাবে বাইরের দিকে যে বিশাল ছাউনি তৈরি করা হচ্ছে, সেটি ঘিরেই যানবাহনের স্টেশনে ঢোকা ও বেরোনোর পথ তৈরির কাজ চলছে। নতুন ব্যবস্থায় একেবারে ভিতরের দিকে ‘ইউ’ আকৃতির সংক্ষিপ্ত পথ থাকছে অটোরিকশা এবং তিন চাকার যানের জন্য। প্রায় পাশাপাশি দু’টি লেনের বাঁ দিক দিয়ে অটোরিকশা ঢুকে ‘ইউ টার্ন’ নিয়ে যাত্রী তুলেই বেরিয়ে যাবে। শিয়ালদহ থেকে ট্যাংরা, ই এম বাইপাস, এন্টালি, ফুলবাগান ও পটারি রোড-সহ বিভিন্ন রুটের অটো এই পথ ব্যবহার করবে। আসা-যাওয়া মিলে যেটির দৈর্ঘ্য ৫০ মিটার।পাশের লেনটি রাখা হচ্ছে হলুদ ট্যাক্সি এবং প্রি-পেড ট্যাক্সির জন্য। অটোর মতো ট্যাক্সিও যাত্রীদের নামিয়ে অথবা তুলেই সোজা স্টেশন থেকে বেরিয়ে যাবে। দাঁড়িয়ে অপেক্ষার সুযোগ থাকবে না।
এর পরে আরও কিছুটা বাইরের দিকে বৃত্তাকার রাস্তাটি নির্দিষ্ট করা হচ্ছে বাইক-ট্যাক্সি, অ্যাপ-ক্যাব এবং ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য। নির্দিষ্ট ‘ড্রপিং পয়েন্ট’ ছাড়াও শর্তসাপেক্ষে রাস্তা থেকে বেরিয়ে পার্কিং ব্যবহার করার সুযোগ থাকবে এই সব গাড়ির ক্ষেত্রে। একই ভাবে এই গাড়িগুলির ক্ষেত্রে যাত্রী তোলার জন্য ‘পিক-আপ পয়েন্ট’ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। লোকাল ট্রেনের যাত্রী এবং দূরপাল্লার ট্রেনের যাত্রীদের ক্ষেত্রে এই জায়গা আলাদাও করে দেওয়া হবে।
এর পাশাপাশি, অ্যাপ-নির্ভর যে সব গাড়ি স্টেশনের পার্কিং ব্যবহার করবে, সেগুলির জন্য পৃথক লেন রাখা হচ্ছে। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আসা-যাওয়ার জন্যও ওই লেন ব্যবহৃত হবে। ওই লেনের দৈর্ঘ্য হবে সব চেয়ে বেশি। সারিবদ্ধ বৃত্তাকার পথের একেবারে বাইরের দিকে ওই পথ থাকবে। নতুন ব্যবস্থা চালু করার পরে সেখানে যান-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি কেমন থাকছে, তা নজরে রাখার জন্য সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে। কোথাও কোনও সমস্যা হলে কেন তা হচ্ছে, তা জানতে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হবে।
শিয়ালদহ ডিভিশনের রেলওয়ে ম্যানেজার রাজীব সাক্সেনা জানিয়েছেন, যাত্রীদের স্টেশনে ঢোকা এবং বেরোনোর প্রক্রিয়া মসৃণ করতে আলাদা পথ তৈরি করা হয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় যাত্রীদের এলোমেলো এবং বিক্ষিপ্ত ভাবে চলাচলের প্রবণতা কমবে। রাস্তা নির্দিষ্ট করে দেওয়ায় দ্রুত ট্রেনের কাছে বা স্টেশনের বাইরে আসতে পারবেন তাঁরা।
এর আগে অগস্ট মাসে শিয়ালদহ স্টেশনের মেন, উত্তর এবং দূরপাল্লার ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম আলাদা করার কাজ হয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় এক থেকে পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্ম সোদপুর, কল্যাণী, রানাঘাট, গেদে ও ব্যারাকপুরের ট্রেনের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়। পাঁচ থেকে আট নম্বর প্ল্যাটফর্ম দক্ষিণেশ্বর, ডানকুনি ও বারুইপাড়াগামী ট্রেনের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়। ছয় থেকে আট নম্বর প্ল্যাটফর্ম শিয়ালদহ উত্তরের বারাসত, বনগাঁ, দত্তপুকুর, হাসনাবাদ শাখার জন্য রাখা হয়। এ ছাড়া, নয় এবং ১১ থেকে ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম নির্দিষ্ট করা হয় দূরপাল্লার ট্রেনের জন্য। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার জন্য রাখা হয় ১৫ থেকে ২১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম।
রেল কর্তৃপক্ষের আশা, দু’টি ব্যবস্থার মধ্যে প্রয়োজনীয় সমন্বয় গড়ে উঠলে স্টেশনে যাত্রীদের আসা এবং বেরোনো অনেক মসৃণ হবে। ট্রেন ধরতে এসে যাত্রীদের ছোটাছুটি করার কিংবা উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হবে। নতুন ব্যবস্থা কেমন কাজ করছে, তা দেখতে নজরদারি শুরু করা হয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)