ভাল ফল করেও ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারের মতো প্রথাগত পেশা নয়, ওদের কেউ হতে চায় গ্রাফিক ডিজ়াইনার, কেউ বা সাংবাদিক। কেউ আবার গবেষণা করতে চায় প্রিয় বিষয় রাশিবিজ্ঞান নিয়ে। মঙ্গলবার সিবিএসই-র ফল বেরোনোর পরে শহরের দশম এবং দ্বাদশের কৃতী পড়ুয়ারা জানিয়ে দিল, শুধু পরীক্ষার আগে বেশি করে পড়া নয়, বরং সারা বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে পাঠ্যবই খুঁটিয়ে পড়া এবং পরীক্ষার আগে বার বার মক টেস্ট দেওয়ার ফলেই এসেছে সাফল্য। পড়ার সঙ্গে শরীরও সুস্থ রাখা দরকার বলে মনে করছে তারা।
দ্য নিউ টাউন স্কুলের ছাত্র সিদ্ধান্ত পাল দশমের পরীক্ষায় পেয়েছে ৯৯.৮ শতাংশ। সে ভবিষ্যতে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়তে চায় আইআইটি-তে। সিদ্ধান্ত পড়াশোনার পাশাপাশি তায়কোয়ন্ডো-তে ব্ল্যাক বেল্ট। সে ৪৯৯ পেয়েছে। এ রকমই পাবে বলে আশা করেছিল। পাঠ্যবই খুঁটিয়ে পড়েই তার সাফল্য এসেছে বলে জানাল সিদ্ধান্ত। ডিপিএস, রুবি পার্ক থেকে ৯৯.৬ শতাংশ নম্বর পাওয়া ঐনেষ বন্দ্যোপাধ্যায় টেনিদার ভক্ত। ভালবাসে ফুটবল খেলতেও। ফল বেরোনোর পরে এ দিন বিকেলেও পাড়ার মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়েছিল সে। ঐনেষ ভবিষ্যতে পদার্থবিদ্যা বা রসায়ন নিয়ে পড়ে গবেষণা করতে চায়। তার মা রাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সারা বছর শুধু পড়াশোনা নয়, গল্পের বই পড়া, ফুটবল খেলা, দাবা খেলা, পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া— সবই করেছে। তবে, ওকে মোবাইলে আসক্ত হতে দিইনি।’’ দশমের পরীক্ষায় দ্য নিউ টাউন স্কুলের এঞ্জেল আগরওয়াল ৯৯.৬ শতাংশ পেয়েছে। বিডিএম ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে দশম শ্রেণির ঋতজিৎ অধিকারী পেয়েছে ৯৯.৪ শতাংশ নম্বর। সে রাশিবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করতে চায়।
সল্টলেকের ভবনস গঙ্গাবক্স কানোরিয়া বিদ্যামন্দিরের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী অপরাজিতা সাহা কলা বিভাগে পড়ে ৯৯.৪ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। অপরাজিতা বলল, ‘‘ভাল ফল করতে গেলে শরীর চনমনে রাখা দরকার। সঙ্গে মনও ভাল রাখতে হবে। তার জন্য ভাল করে ঘুমোনো এবং ভাল খাওয়াদাওয়া জরুরি।’’ অপরাজিতা ভবিষ্যতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়ে সৃজনশীল লেখালিখি ও সাংবাদিকতা করতে চায়। হাওড়ার ডোমজুড়ের বাসিন্দা, ডিপিএস হাওড়ার ছাত্রী ঋষিকা ত্রিবেদী দ্বাদশের পরীক্ষায় ৯৯.২ শতাংশ পেয়েছে। সে ভবিষ্যতে অর্থনীতি নিয়ে পড়তে চায় বলে জানিয়েছে।
ডিপিএস রুবি পার্কের বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র অর্ণব পোদ্দার দ্বাদশের পরীক্ষায় ৯৯ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। সে জানাল, পাঠ্যবই খুঁটিয়ে পড়ে আর স্কুলের নোটস মুখস্থ করেই ভাল ফল হয়েছে। সে অর্থনীতি নিয়ে পড়তে চায়। ওই একই স্কুলের বাণিজ্য শাখার মিতাংশ আগরওয়ালও দ্বাদশের পরীক্ষায় পেয়েছে ৯৯ শতাংশ। সাউথ পয়েন্ট স্কুলের দীপিতা মজুমদার দ্বাদশের পরীক্ষায় ৯৮.৪০ শতাংশ নম্বর পেয়ে জানাল, প্রথাগত পেশায় তার আগ্রহ নেই। ভবিষ্যতে সে গ্রাফিক ডিজ়াইনার হতে চায়। পড়াশোনার পাশাপাশি সে ত্রিমাত্রিক মডেল ও লোগো তৈরির কাজ করে।
ভবনস গঙ্গাবক্স কানোরিয়া বিদ্যামন্দিরের অপ্রমিত ভট্টাচার্য যখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত, তখনই সে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। মুম্বইয়ে টানা চিকিৎসার পরে এখন সে সুস্থ। তবে, নিয়মিত চেক-আপ করাতে হয়। অপ্রমিতের মা অপর্ণা এ দিন বললেন, ‘‘ক্যানসার সেরে গেলেও নানা কারণে ও এখন অবসাদ ও উৎকণ্ঠায় ভোগে। তার জন্য নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। এত বাধার মধ্যেও অপ্রমিত এ বার দ্বাদশের পরীক্ষায় ৭০.৮ শতাংশ পেয়েছে।’’ অপ্রমিত ভবিষ্যতে আইন নিয়ে পড়তে চায়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)