Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Pick Pocketing

নেতার সঙ্গে হাঁটতে গিয়েই পকেট সাফ সমর্থকের

একটি-দু’টি ঘটনা নয়, গত কয়েক মাসে সভা বা মিছিল-ফেরত জনতার এমনই একাধিক অভিযোগ থানায় জমা পড়েছে বলে খবর।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:৪৯
Share: Save:

সভার মুখ যিনি, সেই নেতার গরম গরম বক্তৃতা তখন সবে শেষ হয়েছে। তাঁর একাধিক বাক্যবোমা তখন ঝরে পড়ছে সামনের কর্মী-সমর্থকদের হাততালি হয়ে। একের পর এক স্লোগান উঠছে। তার মধ্যেই হাততালি থামিয়ে চারপাশ হাতড়ে প্রবল খোঁজাখুঁজি শুরু করলেন কুলটি থেকে আসা এক সমর্থক। উদ্‌ভ্রান্তের মতো বলতে থাকলেন, ‘‘ফোনটা কে নিল? কোথায় রাখলাম?’’

কয়েক হাত দূরে দাঁড়ানো আর এক সমর্থকও উত্তেজিত। তিনি আবার নিজের টাকার ব্যাগ খুঁজে পাচ্ছেন না। একাধিক পকেট হাতড়ানোর পরে বললেন, ‘‘ফোনটাও তো নেই দেখছি! এই তো, একটু আগেও হাতে ছিল! ভিডিয়ো করছিলাম।’’ সভা শেষে দু’জনেই ছুটলেন থানায় অভিযোগ জানাতে।

একটি-দু’টি ঘটনা নয়, গত কয়েক মাসে সভা বা মিছিল-ফেরত জনতার এমনই একাধিক অভিযোগ থানায় জমা পড়েছে বলে খবর। অধিকাংশেরই দাবি, কোনও এক রাজনৈতিক সভায় যোগ দিয়ে তাঁরা হঠাৎ দেখেছেন, সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন বা টাকার ব্যাগ উধাও! কারও আবার অভিযোগ, ভিড়ের মধ্যে কাঁধে থাকা ব্যাগও টেনে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে ছিনতাইবাজ! সব দেখে-শুনে পুলিশের মনে প্রশ্ন, তবে কি এ বার রাজনৈতিক সভা-সমাবেশই কোনও ছিনতাইবাজ-চক্রের নিশানায়? সে ক্ষেত্রে ভোটের মরসুমে আগামী কয়েক দিনে এমন অভিযোগ বাড়তে পারে বলেই তদন্তকারীদের দাবি। তবে এখনও পর্যন্ত এমন কোনও চক্রকে ধরতে পারেনি পুলিশ। কলকাতা ছাড়া অন্য কোনও জেলাতেও এমন অভিযোগ জমা পড়ার কোনও খবর নেই।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভোজেরহাটের বাসিন্দা শঙ্কর দলুই নামে এক ব্যক্তির দাবি, দিন কয়েক আগে তিনি দক্ষিণ কলকাতায় বিজেপি-র একটি মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। সেই মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রাক্তন তৃণমূল নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর বন্ধু। শঙ্কর বলেন, ‘‘নেতার গাড়ির পাশে ছুটতে ছুটতে হঠাৎ দেখলাম, আমার বুকে কেউ হাত দিলেন। পরক্ষণেই দেখি, পকেটে রাখা মোবাইল ফোনটা নেই।’’ শ্যামনগরের বাসিন্দা তমাল দত্ত নামে এক ব্যক্তি আবার অভিযোগপত্রে লিখেছেন, ‘১৮ জানুয়ারি টালিগঞ্জ থেকে শুরু হওয়া দিলীপ ঘোষ ও শুভেন্দু অধিকারীর মিছিলে ছিলাম। মুদিয়ালি এলাকায় মিছিল ঘিরে হঠাৎ গন্ডগোল হয়। ঝামেলায় না জড়িয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পড়ি। একটি ছেলে ছুটে এসে আমার হাতে একটা পতাকা ধরিয়ে দিয়ে বলল, ধরুন তো, ওদের মজা দেখিয়ে আসি। তখন আমার আর এক হাতেও পতাকা। ওর পতাকা ধরতেই বুক পকেটে থাকা আমার ফোনটা তুলে নিয়ে ছুট দিল!’

অভিযোগ এসেছে, গত ১২ জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দের জন্মতিথি ঘিরে হওয়া রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ থেকেও। কুশল কর্মকার নামে যাদবপুরের এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘শ্যামবাজার থেকে শিমলা স্ট্রিটে স্বামীজির বাড়ি পর্যন্ত শুভেন্দু অধিকারীর মিছিলের সঙ্গে গিয়েছি। বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকার সময়েই হঠাৎ পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম, টাকার ব্যাগটা নেই। দলেরই এক জন বললেন, তিনি নাকি একটি ছেলেকে পকেট থেকে ব্যাগ তুলে নিয়ে পালাতে দেখেছেন। বললাম, ‘ধরলেন না কেন?’ ভদ্রলোক বললেন, ‘সভায় মন দেব, না চোর ধরব?’ বাধ্য হয়ে তাই পুলিশে গিয়েছি।’’ ওই মিছিলেরই পাল্টা হিসেবে গোলপার্ক থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত মিছিল করেন তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে যোগ দিয়ে টাকার ব্যাগ এবং মোবাইল ফোন, দুই-ই হারানো হাজরার সুধাংশু ঘোষ বললেন, ‘‘ভিড়ের মধ্যে কিছুই বুঝতে পারিনি। এমন অভিজ্ঞতাও কোনও দিন হয়নি!’’

এমন অভিজ্ঞতা নিয়ে অবাক তদন্তকারীরাও। মোবাইল বা অন্যান্য সামগ্রী ছিনতাই অথবা চুরি নিয়ে কাজ করা লালবাজারের এক পুলিশকর্তা বললেন, ‘‘ভিড়ের মধ্যে ছিনতাই করতে গেলে পালানো যেমন সহজ, ধরা পড়ারও ঝুঁকি বেশি। ভিড়ে ছিনতাই করতে হলে পালানোর পথও করে রাখে ছিনতাইবাজেরা। তাই ট্রেনের ভিড়ে ছিনতাই হয়, রাস্তার ভিড়ে নয়। এ ক্ষেত্রে ছিনতাইয়ের উলটপুরাণ কেন, সেটাও চিন্তার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pick Pocketing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE