আঁধার: ঘাসজমিতে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে আগুন। দূষিত ধোঁয়ায় ঢেকেছে এলাকা। শনিবার, নিউ টাউনে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
বৃহস্পতিবারই গঙ্গাসাগর মেলার পুণ্যার্থী শিবিরের আয়োজনকারী এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে গ্যাস ওভেন ও ইলেক্ট্রিক চুলা বিতরণের আয়োজন করেছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। উদ্দেশ্য, বাবুঘাটে থাকাকালীন গঙ্গাসাগরগামী পুণ্যার্থীদের রান্নাবান্নার সময়ে দূষণ উৎপাদনকারী উনুন বা কাঠকয়লা ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ টানা। সেখানে পর্ষদের এক কর্তা বোঝাচ্ছিলেন, কী ভাবে ভিন্ রাজ্য থেকে আসা বাতাসে বহমান দূষকের উপস্থিতির কারণে পশ্চিমবঙ্গের দূষণের মাত্রা অনেকটাই বেড়ে যায়। অর্থাৎ, শীতকালে দূষণের জন্য সেই ভিন্ রাজ্যের বাতাসকেই ফের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে পর্ষদ।
যদিও ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের প্রশ্ন, নতুন বছরের প্রথম সাত দিনে কলকাতায় বাতাসের মানের অবনমনের মূল কারণও তা হলে ভিন্ রাজ্যের বাতাসই? যানবাহনের ধোঁয়া, পুরনো গাড়ির চলাচল, নির্মাণস্থলের দূষণ, আবর্জনা পোড়ানোর মতো কারণগুলির কোনওটিরই তা হলে দূষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেই? আর সেই কারণেই ২০২৩ সালের প্রথম সাত দিন কলকাতার বাতাসের মান ‘খারাপ’?
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, চলতি বছরের ১-৭ জানুয়ারি শহরের বাতাসের মান ছিল ‘খারাপ’। এ সময়ে বাতাসের গুণমান সূচক ২১৩ থেকে ২৬৯-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। প্রসঙ্গত, বাতাসের গুণমান সূচক বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের ছ’টি ভাগ রয়েছে— ভাল (০-৫০), সন্তোষজনক (৫১-১০০), মাঝারি (১০১-২০০), খারাপ (২০১-৩০০), খুব খারাপ (৩০১-৪০০) ও মারাত্মক খারাপ (৪০১-৫০০)। স্বাস্থ্যের উপরে বাতাসে ভাসমান দূষকের ক্ষতিকর প্রভাবের নিরিখে ওই ভাগ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্যে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, এই মাপকাঠির নিরিখে কলকাতায় বাতাসের মান নিম্নগামী। আর এখানেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ভিন্ রাজ্যের বাতাসে ভাসমান দূষকের কারণে পশ্চিমবঙ্গের বাতাস দূষিত হওয়ার তত্ত্ব। পরিবেশ গবেষণাকারী সংস্থা ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’-এর একাধিক সমীক্ষা জানিয়েছে, স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে স্থানীয় স্তরে দূষণ অনেক বেশি ক্ষতিকর। এমনকি কোনও এলাকার মোট দূষণের ক্ষেত্রে এবং ‘টক্সিক গ্যাস’ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও স্থানীয় স্তরের দূষণই সর্বাধিক দায়ী।
বায়ুদূষণ নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলাকারী সুভাষ দত্ত জানাচ্ছেন, পর্ষদের যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে শহরের রাস্তায় ১৫ বছরের পুরনো গাড়ি চলাচল বন্ধ করা, নির্মাণস্থলের দূষণ, রাস্তার ধুলোর দূষণ, সবই অর্থহীন হয়ে যায়। তা ছাড়া, প্রতিবেশী রাজ্যে ফসলের গোড়া পোড়ানোর কারণে দিল্লির দূষণ হয়— এটা অনেক দিন ধরেই আলোচিত। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ভিন্ রাজ্যের বাতাসে বহমান দূষকই যদি কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের দূষণের মূল কারণ হয়, তবে তা হঠাৎ করেই জানা গেল? না কি দূষণ নিয়ন্ত্রণে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই এখন এই সব তত্ত্ব তৈরির চেষ্টা চলছে!’’
পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সাধারণ সম্পাদক নব দত্তের কথায়, ‘‘প্রতি বার রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ যে কোনও দূষণ সম্পর্কে খুব অদ্ভুত যুক্তি দেয়। এখন যেমন দূষণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে শীতকালীন দূষণের দায় ভিন্ রাজ্যের বাতাসের— এই কথা বলেই দায় সারছে তারা।’’
যদিও পর্ষদ জানিয়েছে, গবেষণায় প্রাপ্ত প্রামাণ্য তথ্যের উপরে ভিত্তি করেই এই কথা বলা হয়েছে। পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘এটা পর্ষদের মন-গড়া কথা নয়। তা বলার প্রশ্নও নেই। আইআইটি-র গবেষকেরা যা তথ্য পেয়েছেন, তার ভিত্তিতেই সব কথা বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy