E-Paper

মেয়রের নির্দেশ অমান্য করে স্কুলে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির! একসঙ্গে পাঁচ ক্লাসে শিকেয় পড়াশোনা

প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সমস্ত পড়ুয়াকে বসানো হয়েছে একটি বারান্দায়। সেখানেই চলছে তাদের ‘সম্মিলিত’ ক্লাস। শিক্ষক সামলাতে পারছেন না পরিস্থিতি।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:০২
A Photograph of a queue for \\\\\\\'Duare Sarkar\\\\\\\'

অমান্য: মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশ সত্ত্বেও পুরসভার স্কুলে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির। বুধবার, বাগবাজারের একটি স্কুলে।  ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

এ যেন অনেকটা সেই ‘খাচ্ছে, কিন্তু গিলছে ‌না’র মতো পরিস্থিতি। স্কুলে পড়ুয়ারা আসছে। তাদের ক্লাসও হচ্ছে। কিন্তু, পঠনপাঠন? তা কি আদৌ হচ্ছে? প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সমস্ত পড়ুয়াকে বসানো হয়েছে একটি বারান্দায়। সেখানেই চলছে তাদের ‘সম্মিলিত’ ক্লাস। শিক্ষক সামলাতে পারছেন না পরিস্থিতি। তাই তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে হয়েছে মিড-ডে মিলের এক কর্মীকে। বুধবার এই ছবি উত্তর কলকাতার একটি পুর স্কুলের। অভিযোগ, শহরের অধিকাংশ পুর স্কুলেই পরিস্থিতি এখন প্রায় একই রকম। শিক্ষকদের বক্তব্য, কলকাতা পুরসভার বিভিন্ন স্কুলে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির হওয়ায় লেখাপড়ার এমনই হাল। একে তো অধিকাংশ শিক্ষককে ওই কাজে তুলে নেওয়া হয়েছে। তার উপরে স্থানাভাবে একই ঘরে বিভিন্ন শ্রেণির পড়ুয়াদের একত্রে ক্লাস করাতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে শিক্ষকদের।

অথচ, দিনকয়েক আগেই কলকাতার মেয়র জানিয়েছিলেন, পুর স্কুলে যাতে ওই শিবির না হয়, সে ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বুধবার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, নির্দেশ উড়িয়ে একাধিক পুর স্কুলে ওই শিবির চলছে। স্কুল পুরোপুরি বন্ধ না থাকলেও মাত্র এক জন শিক্ষককে পড়াতে হচ্ছে একাধিক ক্লাসের পড়ুয়াদের। যার জেরে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। এ দিন উত্তর কলকাতায় এমনই একটি পুর স্কুলের এক শিক্ষক বললেন, ‘‘পুর কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতোআমরা স্কুল বন্ধ রাখতে পারছি না। কিন্তু, যে পদ্ধতিতে ছেলেমেয়েদের ক্লাস করাতে হচ্ছে, তা স্কুল বন্ধরাখারই নামান্তর।’’ শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, দুয়ারে সরকারের জন্য বেশির ভাগ শিক্ষককে তুলে নেওয়ায় পঠনপাঠন চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

সাত নম্বর ওয়ার্ডের হরলাল মিত্র লেনের পুর স্কুলে এ দিন সকাল থেকেই শুরু হয়েছিল দুয়ারেসরকার শিবির। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, একতলার দু’টি ঘরশিবিরের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। উপরতলায় প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত জনা কুড়ি পড়ুয়াকে একসঙ্গে বারান্দায় বসিয়ে ক্লাস করাচ্ছেন এক জন শিক্ষক। তাঁকে সাহায্য করছেন এক জন মিড-ডে মিলের কর্মী। ওই শিক্ষক জানালেন, তাঁদের স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা চার। তার মধ্যে তিন জনকে ১ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত দুয়ারে সরকার শিবিরের জন্য তুলে নেওয়া হয়েছে। এ দিন দেখা গেল, বিভিন্ন বয়সের পড়ুয়াদের একসঙ্গে সামলাতে পারছেন না ওই শিক্ষক। আবার ১৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি পুর স্কুল শিবিরের জন্য কার্যত বন্ধই রাখতে হয়েছিল এ দিন।

গত শুক্রবার মেয়র ফিরহাদ হাকিম সাংবাদিকদের সাফ বলেছিলেন, ‘‘পুর বিদ্যালয় বন্ধ রেখে দুয়ারে সরকার শিবির করা যাবে না। প্রতিটি ওয়ার্ডে অনেক ফাঁকা জায়গা ও কমিউনিটি হল রয়েছে। সেখানে দুয়ারে সরকার শিবির করা যাবে। কিন্তু, বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন বন্ধ রেখে শিবির করা যাবে না।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, মেয়রের সেই নির্দেশের আগেই কোন কোন পুর স্কুলে শিবির হবে, সেই তালিকা তৈরি করে ফেলেছিল সোশ্যাল সেক্টর বিভাগ। প্রশ্ন উঠেছে, মেয়রের নির্দেশের পরেও কেনসেই তালিকা সংশোধন করা হল না? কেনই বা পুর স্কুলগুলি দুয়ারেসরকার শিবিরের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হল না?

বাম পুরপ্রতিনিধি মধুছন্দা দেব এ বিষয়ে বলেন, ‘‘বেআইনি নির্মাণ ঠেকাতে ব্যর্থ পুর ইঞ্জিনিয়ারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বার বার নির্দেশ দেওয়া হলেও এখনও তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় খোদ মেয়রকেই ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে পুর আধিকারিকদের একহাত নিতে দেখা গিয়েছে। এর অর্থ, মেয়রের নির্দেশে আমল দেওয়া হচ্ছে না। আবার পুর স্কুলে দুয়ারে সরকার শিবির করা যাবে না বলে দিনকয়েক আগে মেয়র নির্দেশ দিলেও আদতে তার উল্টোটা হচ্ছে। মেয়রের গুরুত্ব কি তা হলে কমছে?’’

মেয়র পারিষদ (সোশ্যাল সেক্টর) মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্যদাবি, ‘‘পুর কমিশনারের নির্দেশে আগে থেকেই পুরসভার বিদ্যালয়গুলিতে দুয়ারে সরকার শিবিরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে সমস্ত পুর বিদ্যালয়ে দুয়ারে সরকার শিবির চলছে, সেখানে পঠনপাঠন বিঘ্নিত হচ্ছে না। বিদ্যালয়ের ফাঁকা জায়গায় দুয়ারে সরকার শিবির করা হচ্ছে। আবার ক্লাসও চলছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

educational system in west bengal Education system Duare sarkar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy