শহরের যানজট কমানো এবং বাড়তে থাকা জনঘনত্বের চাপ সামলাতে এ বার কলকাতা পুরসভা বড়সড় সড়ক উন্নয়ন পরিকল্পনায় সিলমোহর দিল। সম্প্রতি পুরসভার মেয়র পারিষদদের বৈঠকে এই বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে খবর। সমীক্ষা বিভাগের রিপোর্টের ভিত্তিতেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক নতুন রাস্তা তৈরির উদ্যোগী হচ্ছে পুরসভা। সংশ্লিষ্ট রিপোর্ট ইতিমধ্যেই শীর্ষ আধিকারিকদের হাতে পৌঁছেছে এবং মেয়র পরিষদের বৈঠকেও তা অনুমোদন পেয়েছে। এখন ধাপে ধাপে নির্মাণের কাজ শুরু করবে পুরসভা।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলির মধ্যে রয়েছে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের ধারে চায়না টাউনের ভিতরে একটি ৮০ ফুট চওড়া নতুন রাস্তা নির্মাণ। ওই এলাকায় আগামী দিনে আবাসন প্রকল্পের বিস্তার এবং নাগরিক যাতায়াতের চাপ বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পুরসভা জানিয়েছে, চায়না টাউনের ঐতিহ্যবাহী গেট ভাঙা হবে না, রাস্তার নকশা গেট অক্ষত রেখেই তৈরি করা হবে। দক্ষিণ কলকাতায় রাসবিহারীর পণ্ডিতিয়া রোডের একটি বাই লেন ৩০ ফুট চওড়া করা হবে। পাশাপাশি, মিলন মেলা প্রাঙ্গণের পশ্চিম দিকে নতুন ৩০ ফুট চওড়া রাস্তা তৈরির অনুমোদন মিলেছে। এই রাস্তা সায়েন্স সিটি হয়ে পার্ক সার্কাস কানেক্টরে গিয়ে মিলবে, যা ভবিষ্যতে বড় আকারের রিং রোডের মতো কাজ করতে পারে বলে মনে করছেন পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারেরা।
আরও পড়ুন:
বাইপাসেরই মঠেশ্বরতলায় বেশ কয়েকটি নামী আবাসন সংস্থা নতুন প্রকল্প শুরু করায় সেখানে উপযুক্ত সংযোগ-রাস্তাও তৈরি করা হবে। অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের চকগড়িয়া এলাকায়। একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে একটি বহুতল আবাসিক কমপ্লেক্স পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২০ ফুট চওড়া রাস্তা নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে ওই এলাকা মাঠে ঢাকা, ফলে নির্মাণের বিশেষ বাধা নেই বলেই পুরসভার ধারণা। জীবনানন্দ সেতুর নীচে সেলিমপুর রোডের সঙ্গে যুক্ত করার জন্যও একটি নতুন ৩০ ফুট চওড়া রাস্তা তৈরি হবে। উত্তর-পূর্ব কলকাতায় বেলেঘাটা অঞ্চলের যানচাপ কমাতে ক্যানাল সাউথ রোডকে চিংড়িঘাটা থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত ৫০ ফুট চওড়া করার পরিকল্পনা রয়েছে। চাউলপট্টি রোডও ৩০ থেকে ৪০ ফুট চওড়া করার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
কসবার নোনাডাঙা অঞ্চলে ইএম বাইপাসের উপর একটি বেসরকারি স্কুলের সামনে থেকে অন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে খালপাড় বরাবর যে রাস্তা রয়েছে, সেই দুই কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাটিকে ৮০ ফুট চওড়া করা হবে। বর্তমানে এই রাস্তা সরু, ফলে বাইপাস-সংলগ্ন এই গুরুত্বপূর্ণ করিডরে যানজট নিত্যদিনের সমস্যা। এই পরিকল্পনা প্রসঙ্গে পুরসভার রাস্তা বিভাগের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, “শহরে জনবসতি ও যানবাহনের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু রাস্তার সংখ্যা বা চওড়ায় তেমন বৃদ্ধি হয়নি। যেখানে সড়ক উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে, সেখানে পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষার ভিত্তিতে নতুন রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” পুরসভার আশা, প্রকল্পগুলি সম্পূর্ণ হলে শহরের যানবাহন চলাচল আরও দ্রুত ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে।