E-Paper

আর জি করের বন্ধ ঘরেই কি রহস্যের চাবি? উত্তর অজানাই

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আটতলায় অস্থি বিভাগের অপারেশন থিয়েটার সংলগ্ন ওই ঘর নিয়ে তীব্র আতান্তরে পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৫ ০৬:২১
আর জি করের বন্ধ ঘর এখনও রহস্য।

আর জি করের বন্ধ ঘর এখনও রহস্য। —প্রতীকী চিত্র।

সিবিআইয়ের দাবি, তাদের তদন্তের আওতায় অস্থি বিভাগের অপারেশন থিয়েটার সংলগ্ন ঘরটি নেই। তাই সেটি খোলার বিষয়ে তারা কোনও লিখিত নির্দেশ দিতে পারে না। অন্য দিকে, প্রায় দশ মাস ধরে বন্ধ থাকা ওই ঘর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খোলার চেষ্টা করলে তাতে বাধা দিচ্ছেন প্রতিবাদী চিকিৎসকেরা।

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আটতলায় অস্থি বিভাগের অপারেশন থিয়েটার সংলগ্ন ওই ঘর নিয়ে তীব্র আতান্তরে পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উপাধ্যক্ষ সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘বেশ কয়েক বার সিবিআইকে এই বিষয়ে চিঠি দিলেও কোনও উত্তর মেলেনি। কিন্তু ওই ঘরে সন্দেহজনক কিছু জিনিস মিলেছিল বলেই ঘরটি সিল করা হয়েছিল।’’ তিনি জানাচ্ছেন, অপারেশন থিয়েটার সংলগ্ন ওই ঘরে আর্থ্রোস্কোপি যন্ত্র-সহ আরও কিছু জিনিস রয়েছে। গত সেপ্টেম্বরের একেবারে গোড়ায় হাসপাতালের কর্মীরা সেখানে ঢুকে দেখেন, ঘরের এক কোণে রক্তের মতো লালচে ছোপ লাগা গ্লাভস, অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত ছুরি পড়ে রয়েছে। দেওয়ালেও রক্তের ছিটে রয়েছে। এর পরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সিআইএসএফ ও বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষীরা গিয়ে ঘরটি দেখেন। সূত্রের খবর,হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সিবিআইকে জানালে তারা মৌখিক ভাবে ওই ঘরটি সিল করে রাখতে বলে এবং পরে সেটি পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে জানায়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এক বারের জন্যও ওই ঘর খুলে দেখেনি বলেই অভিযোগ।

সপ্তর্ষি বলেন, ‘‘সিবিআই বলছে, তাদের তদন্তের আওতায় ওই ঘরটি নেই। বন্ধ করার কোনও লিখিত নির্দেশও তারা দেয়নি। তাই ঘর খোলার নির্দেশও দিতে পারবে না।’’ আর জি করে চিকিৎসক-পড়ুয়াকে খুন ও ধর্ষণের ঘটনাস্থল তাঁর পরিবারের আইনজীবীদের পরিদর্শন করতে দেওয়ার যে আর্জি জানানো হয়েছিল, বুধবার তা খারিজ করে দিয়েছে শিয়ালদহ আদালত। কিন্তু আর জি করের জরুরি বিভাগের আটতলায় অস্থি বিভাগের অপারেশন থিয়েটার সংলগ্ন সন্দেহজনক ওই বন্ধ ঘরের রহস্য সিবিআইয়ের খতিয়ে না দেখা আশ্চর্যের বলেই দাবি আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের।

জুনিয়র চিকিৎসক ফ্রন্টের তরফে চিকিৎসক অনিকেত মাহাতোর দাবি, কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির (সিএফএসএল) রিপোর্টে স্পষ্ট জানানো হয়েছিল, জরুরি বিভাগের চারতলায় বক্ষরোগ বিভাগের সেমিনার কক্ষ ও সংলগ্ন এলাকায় কোনও রকমধস্তাধস্তির চিহ্ন মেলেনি। অনিকেত বলেন, ‘‘সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে গ্লাভস, ছুরি ও দেওয়ালে রক্তের ছোপ লেগে থাকা সন্দেহজনক ঘরটি সিবিআইয়ের পরীক্ষা করে দেখা উচিত ছিল। কিন্তু কেন তা হয়নি, সেটাই আশ্চর্যের।’’ বক্ষরোগ বিভাগের সেমিনার কক্ষই তরুণী চিকিৎসকের খুনও ধর্ষণের ঘটনাস্থল কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক আগে থেকেই রয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বন্ধ ঘরের রহস্য উন্মোচন জরুরি ছিল বলেই দাবি আন্দোলনকারীদের।

তাঁদের দাবি, চারতলার বক্ষরোগ বিভাগের নার্সিং স্টেশনের পিছনে যে ছোট লিফট রয়েছে, সেটির সাহায্যে আটতলাতেও যাওয়া যায়। তাই সন্দেহজনক জিনিস পড়ে থাকা ঘরের পরীক্ষা জরুরি ছিল। আর জি করের চিকিৎসক তাপস প্রামাণিকের দাবি, শিয়ালদহ আদালতে নির্যাতিতার বাবা-মায়ের সামনেই তিনি সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিককে ওই ঘরটির ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য বলেছিলেন। তাপস বলেন, ‘‘আধিকারিক জানিয়েছিলেন, ওই ঘরে তেমন কিছু নেই। কিন্তু সিএফএসএলের রিপোর্টে যেখানে সেমিনার কক্ষে ধস্তাধস্তির চিহ্ন নেই, সেখানে সন্দেহজনক জিনিস মেলা ঘরটির পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে বলি।’’ ওই চিকিৎসকের আরও দাবি, ‘‘তাতে তদন্তকারী আধিকারিক বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত কিছু হয়নি।’’ বিষয়টি নিয়ে অবশ্য সিবিআই সূত্রে কিছু জানানো হয়নি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

RG Kar Rape and Murder Case RG Kar Medical College and Hospital Incident

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy