E-Paper

লাল চোখের বিপদ বাড়াচ্ছে যেমন খুশি ওষুধ প্রয়োগ

চক্ষু চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্ত জানাচ্ছেন, গত দেড় মাসে চোখের এই সমস্যা বেড়েছে। যা দেখে মনে হচ্ছে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ঘরে ঘরে হওয়া ‘জয়বাংলা’, যা ব্যাক্টিরিয়াঘটিত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৩ ০৭:২০
An image of red eye

—প্রতীকী চিত্র।

চোখ লাল। প্রচণ্ড করকর করছে। ফুলেও রয়েছে বেশ। কিছু ক্ষেত্রে আবার পিচুটিতে চোখ ঢেকে থাকছে! এমন পরিস্থিতি হলেই ওষুধের দোকানে ভিড় করছেন অনেকে। নিজেরাই দাবি করছেন, ‘জয়বাংলা’ হয়েছে। এর পরেই দোকানদারের থেকে চেয়ে নিচ্ছেন চোখের ড্রপ। প্রেসক্রিপশন লাগবে জানিয়ে কিছু দোকান ফিরিয়ে দিচ্ছে। কিছু দোকান আবার নিজেদের জ্ঞানেই দিয়ে দিচ্ছে ড্রপ।

এ ভাবে নেওয়া ড্রপই এই মুহূর্তে চোখের বড় ক্ষতি করতে পারে বলে সতর্ক করছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, চোখে কী হয়েছে, ব্যাক্টিরিয়াঘটিত না কি ভাইরাসঘটিত, সে সব না বুঝে আন্দাজে ড্রপ দিলে তা সরাসরি কর্নিয়ার ক্ষতির কারণ হতে পারে। কর্নিয়া ঝাপসা হয়ে কমতে পারে দৃষ্টিশক্তি। এই পরিস্থিতি থেকে ভাল হতেও অনেকটাই সময় লাগে বলে চিকিৎসকদের মত।

চক্ষু চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্ত যেমন জানাচ্ছেন, গত দেড় মাসে চোখের এই সমস্যা বেড়েছে। যা দেখে মনে হচ্ছে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ঘরে ঘরে হওয়া ‘জয়বাংলা’, যা ব্যাক্টিরিয়াঘটিত। এতে পিচুটি কাটে খুব বেশি। চোখ ফুলেও থাকে। কর্নিয়ার ক্ষতি হয় না। কয়েক বছরে এই জয়বাংলাকে পিছনেফেলে এগিয়ে গিয়েছিল তুলনামূলক ভাবে বেশি ক্ষতিকর কনজাংটিভাইটিস। এটি মূলত ভাইরাসঘটিত রোগ। এতে পিচুটি কাটে না। চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়ায়। কনজাংটিভাইটিস কর্নিয়ার ক্ষতি করে। দৃষ্টিশক্তিও কমে যেতে পারে। এই মুহূর্তে দুই ধরনের সমস্যাই সমান ভাবে দেখা যাচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত কর্নিয়ার ক্ষতির উদাহরণ সে ভাবে চোখে পড়ছে না। তাঁর কথায়, ‘‘যেমন খুশি ওষুধ পড়লে কিন্তু এই ভাল পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। ওষুধের দোকান থেকে সহজ সমাধান খুঁজতে গেলে বহু সময়েই স্টেরয়েড জাতীয় ড্রপ দেওয়া হচ্ছে। তাতে কর্নিয়ার ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। এর ফলে কমতে পারে দৃষ্টিশক্তি।’’

চক্ষু চিকিৎসকদের কথায়, ‘‘চোখের এই সমস্যা আরও মাসখানেক থাকতে পারে। তাই সতর্ক না হলে খুব মুশকিল।’’ আর এক চিকিৎসক শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, শুরুর দিকে এই সমস্যা ছোটদের দেখা গেলেও এখন সব বয়সিরাই আক্রান্ত হচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতি বছর এর ধরন বদলায়। সাধারণত অ্যাডিনোভাইরাস ক্রমাগত তার শক্তি বদলে কনজাংটিভাইটিস নামে হানা দেয়। তবে দু’বছর অন্তর দেখছি, জয়বাংলার মতো উপসর্গ সামনে আসছে। আবার এক বছর কনজাংটিভাইটিস বাড়ছে। এ বার এমন ভাবে দুটো মিশে রয়েছে যে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও পদক্ষেপ ক্ষতিকর হতে পারে।’’

চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি ছোঁয়াচ বাঁচাতে বলছেন চিকিৎসকেরা। আক্রান্তের বালিশ, বিছানা, পোশাক, রুমাল, তোয়ালে আলাদা করে কাচার কথা বলছেন। বাচ্চাদের হলে স্কুলে না পাঠানো ভাল, জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। বার বার চোখে হাত দেওয়া বন্ধ করতে বলা হচ্ছে। প্রয়োজনে তুলো গরম জলে ধুয়ে শুকিয়ে আলাদা করে রাখতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তি প্রয়োজনে ব্যবহার করবেন শুধু সেই তুলো। এই সময় আলোর প্রতি ভয় তৈরি হয়। তাই চশমা ব্যবহার করা ভাল, জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। আগাম অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার বিরুদ্ধেও তাঁরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, এতে এমন একটা পরিস্থিতি হবে, যখন পরে প্রয়োজন মতো অ্যান্টিবায়োটিক দিলেও কাজ হবে না!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Red Eye Eye Infection Conjunctivitis

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy