Advertisement
E-Paper

বাগড়ির আঁচে ঘরছাড়া ওঁরাও

বাগড়ি মার্কেটের আগুনে তাঁদের তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি ঠিকই। কিন্তু, সেই বিধ্বংসী আগুন পাল্টে দিয়েছে তাঁদের গত এক সপ্তাহের রোজনামচা। বাগড়ির আগুনের আঁচে তাঁরাও এখন কার্যত ঘরছাড়া।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
বাগড়ি মার্কেট। ফাইল চিত্র

বাগড়ি মার্কেট। ফাইল চিত্র

বাগড়ি মার্কেটের আগুনে তাঁদের তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি ঠিকই। কিন্তু, সেই বিধ্বংসী আগুন পাল্টে দিয়েছে তাঁদের গত এক সপ্তাহের রোজনামচা। বাগড়ির আগুনের আঁচে তাঁরাও এখন কার্যত ঘরছাড়া।

বাগড়ি মার্কেটের ঠিক পাশেই পাঁচতলা এক বাড়ি। সেখানেই থাকেন তাঁরা। কারও দোকান রয়েছে বহুতলের নীচে। ওই বহুতলের দোতলা-তিনতলায় কারও ফ্ল্যাট, দোকান বা গুদাম। বাজারে আগুন লাগার পরের দিন ভোরে সেই বহুতলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় সিইএসসি। তার পর থেকে গত সাত দিন থেকে গোটা বাড়ি অন্ধকার।

ওই বহুতলের তিনতলায় স্ত্রী ও মাকে নিয়ে থাকেন বছর তেত্রিশের কেতন পারেখ। তিনি বলছিলেন, ‘‘সাত দিন ধরে আলো নেই, নেই পানীয় জল। বিদ্যুৎ না থাকায় পাম্প চালানো যাচ্ছে না। ফলে শৌচাগারও ব্যবহার করতে পারছি না। এ ভাবে কি থাকা যায়?” আপাতত এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে রাতে থাকছেন কেতনেরা। তিনি বলেন, “দিনের বেলায় বাড়িতে থাকি। কিন্তু রাতে এই গরমে কী ভাবে থাকব? আমার মা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।’’

ওই বহুতলেরই চারতলার বাসিন্দা কিঞ্জল দেবী জানান, তাঁরাও পরিবার নিয়ে উঠে গিয়েছেন বড়বাজারে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। কিঞ্জল বলেন, “বাবা ও জেঠু, দু’জনেরই বয়স সত্তরের কাছাকাছি। অন্ধকার আর গরমে ওঁরা অসুস্থ হয়ে পড়বেন, এই আশঙ্কায় আত্মীয়ের বাড়ি গিয়ে থাকছি। কত দিন এ ভাবে থাকতে হবে জানি না। এখনও বাড়ি অন্ধকার।’’

বাগড়ি মার্কেটের ‘বি’ ব্লকের একেবারে ধার ঘেঁষে এই বহুতল। কয়েকশো মানুষ থাকেন এখানে। দু’টি বাড়িকে আলাদা করেছে

সরু এক গলি। বাজারের আগুন নেভাতে এই বহুতলে উঠেও জল দিতে হয়েছে দমকলকর্মীদের। কেতনদের এক প্রতিবেশী জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে প্রথম দিন থেকেই তাঁরা দাঁড়িয়েছেন। পানীয় জল থেকে শুরু করে ঘরে রাখা শুকনো ফল-মিষ্টি পরিচিত দোকানদারদের খেতে দিয়েছেন। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বাড়িতে রাখা ওষুধ দিয়ে সাহায্যও করেছেন। কিন্তু, এই

মুহূর্তে তাঁদেরই এখন অসুস্থ হয়ে পড়ার উপক্রম।

ওই বহুতলের আর এক বাসিন্দা নিশা রাঠৌর বলেন, ‘‘প্রথম দু’দিন আমরা খিচুড়ি রান্না করে বহু ব্যবসায়ীকে খাইয়েছি। এখন তো আমাদের ঘরেই গ্যাস জ্বলছে না। জল কিনে খেতে হচ্ছে। গত সাত দিন ধরে শৌচাগার পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারছি না। এমনই অসহায় অবস্থা।’’ ওই বহুতলের নীচে থাকা দোকানও এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ।

বহুতলটির বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাগড়ির ঠিক উল্টো দিকে মেহতা বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন ফেজে বিদ্যুৎ সংযোগ চলে এসেছে। তা হলে তাঁদের কেন আসছে না? এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘মেহেতা বিল্ডিংয়ে তো অনেক ব্যবসায়ী আছেন। ওঁদের আলো চলে এসেছে। কিন্তু আমাদের আসেনি। এখানে কত লোক থাকেন। তাঁদের মধ্যে অনেক বয়স্ক মানুষ আছেন। কত বাচ্চা রয়েছে। তাদের স্কুল যাওয়া থেকে শুরু করে খেলাধুলো, সবই প্রায় বন্ধ।’’ সিইএসসি অবশ্য আশ্বাস দিয়েছে, দ্রুত ওই বহুতলের বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করে দেওয়া হবে।

Bagri Market Fire Kolkata Fire Homeless
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy