Advertisement
০৬ মে ২০২৪

জঞ্জাল ফেলেন যাঁরা, তাঁরাই ডেঙ্গির অভিযোগকারী

প্রতি বছরই ফাঁকা জমিতে ফেলা জঞ্জালের বিষয় ঘুরে ফিরে আসে পুর আলোচনায়। চলতি বছরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বারবার বলার পরেও ফাঁকা জমিতে বাসিন্দাদের জঞ্জাল ফেলার অভ্যাস নিয়ে কাউন্সিলরদের একাংশ তিতিবিরক্ত।

সমস্যা: কেষ্টপুরের একটি স্কুলের সামনের মাঠে জমে রয়েছে জল। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

সমস্যা: কেষ্টপুরের একটি স্কুলের সামনের মাঠে জমে রয়েছে জল। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৩২
Share: Save:

গুটখা, পানের পিক যেখানে সেখানে ফেলা, নিয়মবিধি বিসর্জন দিয়ে বাজি ফাটানো, নিষেধ সত্ত্বেও যত্রতত্র মূত্রত্যাগ—এই সব সচেতনতার মাপকাঠিতে কলকাতা বেশি নম্বর পায় না কোনও সময়েই। এর সঙ্গে যদি যোগ করা যায় ফাঁকা জমি দেখলেই জঞ্জাল ফেলার রোগ, তা হলে বিষয়টা আরও জটিল হয়ে যায়। বিশেষ করে ডেঙ্গি মরসুমে। কারণ, ফাঁকা জমিতে বাসিন্দাদের জঞ্জাল ফেলা নিয়েই এখন ব্যতিব্যস্ত হতে হচ্ছে কলকাতা পুর প্রশাসনকে।

প্রতি বছরই ফাঁকা জমিতে ফেলা জঞ্জালের বিষয় ঘুরে ফিরে আসে পুর আলোচনায়। চলতি বছরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বারবার বলার পরেও ফাঁকা জমিতে বাসিন্দাদের জঞ্জাল ফেলার অভ্যাস নিয়ে কাউন্সিলরদের একাংশ তিতিবিরক্ত। কী ভাবে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে তা নিয়ে সন্দিহান তাঁরাও। কারণ, একক ভাবে কোথাও জঞ্জাল বা জল জমিয়ে রাখলে জরিমানা করার ব্যবস্থা পুর আইনে রয়েছে। কিন্তু যেখানে কোনও এলাকার বাসিন্দারা সমবেত ভাবে জঞ্জাল ফেলছেন, সে ক্ষেত্রে কী করণীয়, তা নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় পুরকর্তারা।

দু’নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সাধন সাহা বলছেন, ‘‘যাঁরা ফাঁকা জমিতে জঞ্জাল ফেলেন, তাঁরাই পুরসভায় এসে ওখান থেকে ডেঙ্গি হতে পারে বলে অভিযোগ করেন। বারবার বলেও এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা যাচ্ছে না।’’ তবে ফাঁকা জমির মালিককে পুর কর্তৃপক্ষের তরফে জমি পরিষ্কার করার নোটিস ধরানোর ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। ১২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সংহিতা দাস বলেন, ‘‘জঞ্জালে বোঝাই ফাঁকা জমির মালিককে অনেক সময়ই খুঁজে পাওয়া যায় না। এ নিয়ে প্রতি বছর ভুগতে হয়।’’

কাউন্সিলরদের একাংশ এ-ও বলছেন, জঞ্জাল বা জল জমিয়ে রাখার জন্য না হয় জরিমানা করা গেল। কিন্তু ফাঁকা জমিতে জঞ্জাল ফেলা বন্ধে কেন সেখানে নাগরিকদের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না? ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা সাত নম্বর বরোর চেয়ারম্যান জীবন সাহা বলেন, ‘‘আইন রয়েছে ঠিকই। কিন্তু সব জায়গাতেই তো আইনের প্রয়োগ সম্ভব হয় না। ফাঁকা জমিতে জঞ্জাল ফেললে যে আদতে তাঁদেরই ক্ষতি এটা তো আগে বুঝতে হবে।’’ আরও এক বরো চেয়ারম্যান বলছেন, ‘‘পুরসভার তরফে যদি জঞ্জাল পরিষ্কার করা না হয়, তা হলে অবশ্যই অভিযোগ করা যাবে। কিন্তু নাগরিকদের হাতে যে দায়িত্ব রয়েছে, সেটাও তো পালন করতে দেখি না।’’

পুরকর্তারা বলছেন, ডেঙ্গি লড়াই অনেকটাই সহজ হয়ে যেত যদি মানুষ সচেতন হতেন। কিন্তু সাধারণ নিয়ম মানার অনীহাই ডেঙ্গি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘পাশের জমিতে জঞ্জাল ফেললে সেটা মশার আঁতুড়ঘর হতে পারে। এত প্রচারের পরে এটা তো কারও অজানা থাকার কথা নয়।

কিন্তু তবু আবর্জনা ফেলা হয়। এই অভ্যাসও বদলের প্রয়োজন।’’ ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুস্মিতা ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘কাউন্সিলরেরা নিজেদের মতো প্রচার করেন, কিন্তু জনগণকেও সচেতন হতে হবে।’’ ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজেশ খান্না আবার বলছেন, ‘‘পুরসভার তরফে বছরভর ডেঙ্গি লড়াই চালানো হয়। কিন্তু এটা একা পুরসভার পক্ষে সম্ভব নয়। বাসিন্দাদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।’’

শেষ পর্যন্ত সেই সহযোগিতা পাওয়া যাবে কি? চলতি বছরে এখনও তেমন ইঙ্গিত নেই, জানাচ্ছে পুর প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Dengue Litter KMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE