Advertisement
E-Paper

পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটে যমজ ছেলে সহ মহিলা খুন, স্বামী হাসপাতালে

শনিবার সকাল আটটার কিছু পরে গাড়িচালকের ডাকাডাকি কানে আসায় মা ঘুম থেকে উঠে ছেলের ঘরের কড়া নেড়েছিলেন। ছেলে দরজা খুলতেই মা চিৎকার জুড়ে দেন। দেখেন, ছেলের গলা থেকে অঝোরে রক্ত ঝরছে। তখন তিনিই ফোন করে দাদাকে ডেকে আনেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:৫৩
দুই ছেলে এবং মেয়ের সঙ্গে সস্ত্রীক নিল ফনসেকা। পারিবারিক অ্যালবাম থেকে পাওয়া ছবি।

দুই ছেলে এবং মেয়ের সঙ্গে সস্ত্রীক নিল ফনসেকা। পারিবারিক অ্যালবাম থেকে পাওয়া ছবি।

শনিবার সকাল আটটার কিছু পরে গাড়িচালকের ডাকাডাকি কানে আসায় মা ঘুম থেকে উঠে ছেলের ঘরের কড়া নেড়েছিলেন। ছেলে দরজা খুলতেই মা চিৎকার জুড়ে দেন। দেখেন, ছেলের গলা থেকে অঝোরে রক্ত ঝরছে। তখন তিনিই ফোন করে দাদাকে ডেকে আনেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ আসে। পুলিশ দেখে, ঘরের ভিতরে তিনটে রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। একটি মহিলার, অন্য দু’টি কিশোরের। মৃতদেহ সরানোর আগে পুলিশই জখম ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করে। শুরু হয় তদন্ত।

পুলিশ জানায়, বছর পঞ্চাশের আহত ওই ব্যক্তির নাম নীল ফনসেকা। ঘরে পড়ে ছিল তাঁরই স্ত্রী জেসিকা (৪৩) এবং ১৬ বছরের দুই যমজ ছেলে জোশুয়া ও ড্যারেনের দেহ। গলায় আঘাত থাকায় কথা বলতে পারেননি নীল। হাসপাতালে শুয়ে হাতে লিখে তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে এক মহিলার ঘনিষ্ঠতা ছিল। এখন সে সব নেই। কিন্তু এ নিয়ে সংসারে একাধিক বার ঝামেলা হয়েছিল। শনিবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ ঘুম থেকে উঠে তাঁর স্ত্রী ফের অশান্তি শুরু করেন। তখনই জেসিকা দুই ছেলেকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। তাতেই ওদের মৃত্যু হয়। সেই দেখেই মাথা গরম হয়ে গেলে আগুপিছু না ভেবে তিনি স্ত্রীর মাথায় ডাম্বেল দিয়ে আঘাত করেন। সেখানেই জেসিকা লুটিয়ে পড়েন। পুলিশের প্রশ্নে নীল জানিয়েছেন, মৃত্যুর আগে জেসিকাই তাঁর গলায় ছুরি বসিয়ে দিয়েছিলেন। হাতের শিরাও কেটে যায়। আর তাতেই রক্তপাত।


জোশুয়া ফনসেকা, জেসিকা ফনসেকা এবং ড্যারেন ফনসেকা

তদন্তে নেমে পুলিশ বুঝতে চাইছে, সে রাতের ঘটনার সঙ্গে নীলের বয়ানের কোনও অসঙ্গতি আছে কি না। কারণ, নীলের কথামতো ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ খুনোখুনি হয়। আর তাঁর মা শার্লি ফনসেকা ছেলের ঘরের কড়া নাড়েন সকাল সওয়া ৮টা নাগাদ। তা হলে এই সাড়ে তিন ঘণ্টা কেন রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরে বসে ছিলেন তিনি? রক্তের পরিমাণ দেখে অবশ্য পুলিশের প্রাথমিক মত, তিন ঘণ্টায় যে পরিমাণ রক্ত বেরোনোর কথা, ততটা ছিল না। তা হলে কি মায়ের কড়া নাড়ার শব্দ শুনেই নিজের গলায় ছুরির মেরে দরজা খোলেন নীল?

আরও কিছু প্রশ্ন ভাবাচ্ছে পুলিশকে। যেমন, যে ঘরে স্ত্রী ও ছেলেদের তিন-তিনটে মৃতদেহ পড়ে রয়েছে, সেখানে কেন এত ক্ষণ নিজেকে আটকে রেখেছিলেন নীল? তবে কি বাস্তবের সঙ্গে নীলের বয়ানের অমিল রয়েছে? পুলিশ বলছে, নীলের বয়ানের সঙ্গে পরিবারের অন্যদের বক্তব্যও মিলিয়ে দেখা হবে।


খবর ছড়িয়ে পড়তেই ফনসেকা পরিবারের বাড়ির সামনে ভিড়। শনিবার। — নিজস্ব চিত্র

বছর পঞ্চাশের নীল পেশায় ইন্টেরিয়র ডেকরেটর। শেক্সপিয়র সরণিতে তাঁর অফিস রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়ির সকলকে নিয়ে নীল গিয়েছিলেন পার্ক সার্কাসের কাছে এক অভিজাত ক্লাবে। সেখান থেকে তাঁরা গভীর রাতে ফেরেন। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, ক্লাবে থাকাকালীনই নীলের কাছে একটি ফোন আসে। সেই ফোনটি ছাড়ার পর থেকে ক্লাবেই তাঁর সঙ্গে জেসিকার ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বাড়ির লোক দু’জনকে নিয়ে ফিরে আসেন। কিন্তু সেই ঝগড়ার রেশ থেকেই যায়।

ঘটনার সময়ে ক়ড়েয়ার ৭৩/১সি পাম অ্যাভিনিউয়ের ওই তিনতলা বাড়িতে কে কে ছিলেন? পুলিশ জানিয়েছে, দিন কয়েক ধরে মুম্বই থেকে এসে ছেলের কাছে রয়েছেন মা শার্লি। বড়দিন উপলক্ষে এসেছেন নীলের মেয়ে সামান্থাও। তিনি পড়াশোনার জন্য আমেরিকায় থাকেন। দুই যমজ ছেলে ড্যারেন ও জোশুয়া ছিল নবম শ্রেণির ছাত্র। প্রথম জন পড়ত সেন্ট জেভিয়ার্সে, অন্য জন ছিল অ্যাসেম্বলি অব গড চার্চে। আর ছিলেন নীলের এক শ্যালিকা, শাবানা আনসার। তিনি বরাবর দিদির কাছেই থাকেন। পুলিশ জেনেছে, বাড়ি ফিরে শার্লি নাতনি সামান্থাকে নিয়ে শুতে চলে যান। শাবানা ঢুকে পড়েন নিজের ঘরে। আর নীল স্ত্রী ও ছেলেদের নিয়ে অন্য ঘরে চলে যান। পুলিশকে বাড়ির সকলেই বলেছেন, শনিবার ভোরে জেসিকা ও নীলের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হলেও তাঁরা কিছুই টের পাননি। পুলিশ তাঁদের বক্তব্য খতিয়ে দেখছে।

পুলিশ জানিয়েছে, জোশুয়া ও ড্যারেনের মাথার পিছনে ভারী বস্তু ও ধারালো অস্ত্র দুইয়েরই আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। জেসিকার মাথার পিছনে রয়েছে ভারী বস্তু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন। সঙ্গে ধারালো অস্ত্রের আঘাতও। পুলিশ জানতে চাইছে, নীলের বয়ান অনুযায়ী, যদি মায়ের ছুরির আঘাতে ছেলেদের মৃত্যু হয়ে থাকে, তা হলে তাদের মাথায় ভারী বস্তুর আঘাতের চিহ্ন এল কী করে? পুলিশ ওই ঘর থেকেই একটি ২৫ পাউন্ডের ডাম্বেল উদ্ধার করেছে। পুলিশের অনুমান, ওই ডাম্বেল দিয়েই তিন জনের মাথায় আঘাত করা হয়েছে। পাওয়া গিয়েছে তিনটি রক্তমাখা ছুরিও। একটি মিলেছে শোয়ার ঘর থেকে, দু’টি বাথরুম থেকে। খুনে ওই ছুরি ও ডাম্বেল ব্যবহৃত হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে সেগুলি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ।

দু’দিন আগেই ঘটা করে বিবাহবার্ষিকী পালন করেছিলেন ফনসেকা দম্পতি। ৪৮ ঘণ্টার তফাতে পুরো ছবিটাই বদলে গিয়েছে। নীলের প্রতিবেশীরা জানান, ওই সিংহলী পরিবারটি পাড়ার কারও সঙ্গে বিশেষ মিশত না। কোনও উৎসবেও দেখা মিলত না তাঁদের। বছর দশেক আগে ওই পাড়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে এসেছিলেন তাঁরা। ওই বাড়ির মালিক রবি শেঠ বলেন, ‘‘নীলের পরিবারের সঙ্গে আমার খুবই ভাল সম্পর্ক ছিল। তবে ন’মাস ধরে ভাড়া দেননি নীল। কিন্তু অনেক দিনের ভাড়াটে হওয়ায় কোনও চাপ দিইনি।’’

kolkata news murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy