Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
BJP

শোভন-বৈশাখীকে মহেশতলায় কালো পতাকা-ঝাঁটা-জুতো দেখাল তৃণমূল

খানিকটা খেদের সুরেই শোভন বলেন, ‘‘মহেশতলায় যাদের সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেস গড়েছিলাম, তাদের হাতেই এখন কালো পতাকা!’’

মহেশতলায় শোভন-বৈশাখী।

মহেশতলায় শোভন-বৈশাখী। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৮:০২
Share: Save:

বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে মহেশতলায় রোড-শো করতে গিয়ে ‘বিড়ম্বনা’য় মুখে পড়লেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। শনিবার মহেশতলায় শোভন-বৈশাখীকে সামনে রেখে রোড-শো করে বিজেপি। সেই রাস্তার পাশেই সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে তৃণমূল তাঁদের কালো পতাকা, ঝাঁটা, জুতো দেখায় তাঁদের। শুধু তা-ই নয়, ‘ছি! শোভন-বৈশাখী, তোমাদের আগমনে মহেশতলাবাসী লজ্জিত, তোমাদের ধিক্কার’ লেখা ব্যানারও দেখা যায় রাস্তার পাশে। তবে সেটা তৃণমূলের নামে নয়। লেখা ছিল— ‘মহেশতলাবাসী’।

রোড শো-র পরে জনসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে শোভন খানিকটা খেদের সুরেই বলেন, ‘‘মহেশতলায় যাদের সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেস গড়েছিলাম, তাদের হাতেই এখন কালো পতাকা!’’ মহেশতলার বিধায়ক দুলাল দাস ঘটনাচক্রে শোভনের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের বাবা। অর্থাৎ, শোভনের শ্বশুরমশাই। তাঁকেও আক্রমণ করেছেন শোভন। শনিবার মহেশতলার জিঞ্জিরাবাজার থেকে মোল্লার গেট মোড় পর্যন্ত বিজেপি-র রোড শো হয়। তাতে বিজেপি সমর্থকদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য হলেও তাকে ছাপিয়ে যায় তৃণমূলের কালো পতাকা হাতে বিক্ষোভ এবং স্লোগান। মহিলারা শোভন-বৈশাখীকে ঝাঁটা আর জুতো উঁচিয়ে দেখান। পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁদের মিছিল আটকে দেওয়ার অভিযোগ করেন শোভন।

রত্নার সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেও তাঁর সঙ্গে শোভনের বিবাহবিচ্ছেদ এখনও হয়নি। সেই মামলা আদালতে চলছে। ফলে মহেশতলাকে এখনও শোভনের শ্বশুরবাড়ির এলাকা বলা যায়। সেখানকারই তৃণমূল বিধায়ক দুলাল। তিনি মহেশতলা পুরসভার প্রশাসকও বটে। শোভনের শাশুড়ি অধুনা প্রয়াত কস্তুরী দাস আগে মহেশতলা বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলেরই বিধায়ক ছিলেন। শনিবার বান্ধবীকে নিয়ে সেখানে প্রচারে গিয়ে খানিক অস্বস্তির মুখে পড়তে হয়েছে শোভনকে। এর পিছনে শ্বশুরমশাই দুলালের ‘হাত’ রয়েছে বলেই মনে করছেন শোভন। নাম করে তিনি ওই কারণে আক্রমণও করেন দুলালকে। প্রসঙ্গত, শনিবার বাজেট অধিবেশনে যোগ দিতে সকালে বিধানসভায় এলেও কিছুক্ষণ থেকেই চলে গিয়েছিলেন দুলাল। ঘনিষ্ঠদের নাকি এমনও বলে যান যে, ‘‘আজ মহেশতলায় জবাব দিতে হবে।’’ এর কোনও আনুষ্ঠানিক সমর্থন মেলেনি ঠিকই। তবে শোভন-বৈশাখীর রোড শো চলাকালীন যে বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে, তা ‘সংগঠিত’ বলেই মনে করছে বিজেপি। সেই বিক্ষওভ সংগঠনের পিছনে এলাকার বিধায়ক দুলালের ‘হাত’ থাকাই স্বাভাবিক বলে অভিমত তাদের।

শোভন-বৈশাখীর বিরুদ্ধে পোস্টার মহেশতলায়।

শোভন-বৈশাখীর বিরুদ্ধে পোস্টার মহেশতলায়।

বিক্ষোভ এবং কালো পতাকার মধ্যেই রোড-শো শেষ করার পরে মহেশতলার পুরনো ডাকঘর এলাকায় সবুজ সঙ্ঘের মাঠে জনসভা করেন শোভন। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘কোনও কোম্পানি উঠে যাওয়ার সময়ে ‘লালবাতি জ্বলে গিয়েছে’ বলা হয়। তখন নতুন নামে কোম্পানি খুলতে হয়। তৃণমূলের লালবাতি জ্বলে গিয়েছে। যাদের সামনে রেখে তৃণমূল গড়েছিলাম, এখন তাদের হাতেই কালো পতাকা।’’

শুধু সভা মঞ্চ থেকেই নয়, রোড-শো চলার সময়েও দুলাল সম্পর্কে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেন শোভন। টেনে আনেন পারিবারিক গোলমালের বিষয়ও। শোভন বলেন, ‘‘দুলাল দাসের অনেক দ্বিচারিতা রয়েছে। এখানে ওঁর অনেক গুদামঘর রয়েছে। সেই সব গুদামঘরের একাংশের জমির মালিকানা আমার। আমার প্রাপ্য টাকার হিসেব করা হলেও তিনি এখনও তা দেননি। উনি বলেন, মেয়ের ভরণপোষণ করবেন। তাই ওঁর টাকা দরকার। কিন্তু ওঁর মেয়ে সংসার করার মেয়ে নন। ওঁর সেই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্যই আমি ছেড়ে চলে গিয়েছি। তখন তো উনি বলেছিলেন, মেয়েকে বসিয়ে খাওয়াবেন। তা হলে আমার অর্থ কেন আটকে দিয়েছেন?’’ শোভন আরও বলেন, ‘‘ রত্নাদেবী দিনে একবার আমায় টেলিফোন করতেন। আর একশোবার কাকে ফোন করতেন, তার খোঁজ নিয়ে দিন দুলাল দাস।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE