Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Madrassa

পড়ুয়াদের অবসাদ কাটাতে কাউন্সেলিংয়ে মাদ্রাসা শিক্ষকেরা

স্কুল মানে তো শুধু পড়াশোনা নয়, সেখানে বন্ধুত্বও হয় অনেকের সঙ্গে। সেই বন্ধুদের সঙ্গে দেখা না হওয়াও মন খারাপের আর একটি বড় কারণ।

প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২১ ০৬:৪৬
Share: Save:

দীর্ঘ দিন ধরে ক্লাসে গিয়ে পড়াশোনা বন্ধ থাকায় মাদ্রাসার পড়ুয়াদের মধ্যে অনেকেরই দেখা দিচ্ছে মানসিক অবসাদ। এ বার ওই পড়ুয়াদের মানসিক ভাবে চাঙ্গা করতে মাদ্রাসা বোর্ডের শিক্ষকেরাই তাদের কাউন্সেলিং করবেন।

করোনা সংক্রমণের লেখচিত্র খানিকটা নামায় ফেব্রুয়ারি মাসে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য খুলেছিল স্কুল। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় ফের বন্ধ হয়ে গিয়েছে স্কুলের দরজা। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে স্কুলে যেতে না-পেরে পড়ুয়াদের অনেকেই মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। পড়ুয়াদের মনোবল বাড়াতে এ বার ঠিক হয়েছে, মাদ্রাসার শিক্ষকেরাই তাদের সঙ্গে কথা বলবেন। শুনবেন তাদের মনের কথা। অবসাদ কাটাতে কী কী করা উচিত, সে ব্যাপারেও পরামর্শ দেবেন তাঁরা। এমনটাই জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি আবু তাহের কামরুদ্দিন। তিনি বলেন, “আমাদের প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষক আছেন। তাঁদের সবাইকে অনলাইনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সেই প্রশিক্ষণ দেবেন পেশাদার মনোবিদেরা। প্রশিক্ষণ পাওয়ার পরে ওই শিক্ষকেরাই নিজেদের জেলার মাদ্রাসা পড়ুয়াদের সঙ্গে গল্পের ছলে কথা বলা শুরু করবেন। শুনবেন লকডাউন ও স্কুল বন্ধের কারণে তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা। তার পরে সম্ভাব্য সমাধানের পথও দেখানোর চেষ্টা করবেন ওই শিক্ষকেরা।”

আবু তাহের জানান, শহরের পাশাপাশি গ্রামের দিকেও দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক পড়ুয়া নানা সমস্যার মধ্যে রয়েছে। আর্থিক অনটনের কারণে অনেকে কাজেও যোগ দিয়ে ফেলেছে। নাবালিকা পড়ুয়াদের অনেকেরই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। পড়ুয়াদের অনেকেরই মনে প্রশ্ন, স্কুলে আবার কবে ফিরতে পারবে তারা? এই নিয়ে অনিশ্চয়তায় মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে অনেকেরই।

স্কুল মানে তো শুধু পড়াশোনা নয়, সেখানে বন্ধুত্বও হয় অনেকের সঙ্গে। সেই বন্ধুদের সঙ্গে দেখা না হওয়াও মন খারাপের আর একটি বড় কারণ। আবু তাহের জানালেন, পড়ুয়াদের অনেকের পরিবারেই সঙ্কটজনক করোনা রোগী আছেন। কেউ কেউ হয়তো মারাও গিয়েছেন। সেই পরিস্থিতিও অনেকের মনে আতঙ্ক তৈরি করছে। পড়ুয়াদের মনের সেই সব কথাই শুনবেন শিক্ষকেরা।

আবু তাহের জানান, প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি জেলার পাঁচ জন করে শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। করোনার কারণে যে হেতু সামনাসামনি দেখা করা সম্ভব নয়, তাই তাঁরা পড়ুয়াদের সঙ্গে ফোনে বা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কথা বলবেন। আবু তাহের বলেন, “করোনার এই সময়ে শুধু শিক্ষাদান করেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করবেন না মাদ্রাসার শিক্ষকেরা। পড়ুয়াদের দিকে বাড়িয়ে দেবেন বন্ধুত্বের হাতও।”

কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ মিড-ডে মিলের সঙ্গে পড়ুয়াদের জন্য ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ বা ‘অ্যাক্টিভিটি টাস্ক’ দেওয়াও শুরু করছে। মিড-ডে মিলের সামগ্রীর সঙ্গে কোন ক্লাসের পড়ুয়াদের কবে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে, তার সূচিও তৈরি হয়ে গিয়েছে বলে জানান আবু তাহের। ওই সমস্ত প্রশ্নপত্রে ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নের সঙ্গে থাকবে ছোট প্রশ্নও। মিড-ডে মিলের সামগ্রী বিতরণের সময়, অর্থাৎ ৭ থেকে ২৪ জুনের মধ্যে সমস্ত অ্যাসাইনমেন্ট অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। অভিভাবকেরা আবার সেই ‘অ্যাক্টিভিটি টাস্ক’ তাঁদের ছেলেমেয়েদের দিয়ে করিয়ে শিক্ষকদের কাছে জমা দেবেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।

আবু তাহের বলেন, “মাদ্রাসা খোলার আগে পর্যন্ত এ ভাবেই পড়ুয়াদের মূল্যায়ন চলবে। গত বছরও লকডাউনের সময়ে এ ভাবে মূল্যায়ন করে আমরা খুব ভাল ফল পেয়েছিলাম।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madrassa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE