Advertisement
E-Paper

বনেদিবাড়ির পুজোয় আজও মেলে আভিজাত্যের সৌরভ

কোথাও বৈচিত্র মূর্তিতে, কোথাও বা পুজো পদ্ধতিতে। ঐতিহ্য নিয়েই টিকে আছে মহানগরের বনেদি বাড়ির পুজোও। তাদের কারও বয়স দে়ড়শো, কারও বা তিনশো ছুঁইছুঁই!শহর কলকাতার বৃহত্তর মানচিত্রে দুর্গাপুজো আগমন এই পরিবারের হাত ধরে। বড়িশায় পুজো শুরু ১৬১০-এ। এখন এই পরিবাবের আটটি পুজো হয়। যার মধ্যে ছ’টি বড়িশায়। প্রাচীনতম পুজোটি হয় আটচালায়।

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০২
গিরিশ ভবন-এর প্রতিমা।

গিরিশ ভবন-এর প্রতিমা।

শহর কলকাতার বৃহত্তর মানচিত্রে দুর্গাপুজো আগমন এই পরিবারের হাত ধরে। বড়িশায় পুজো শুরু ১৬১০-এ। এখন এই পরিবাবের আটটি পুজো হয়। যার মধ্যে ছ’টি বড়িশায়। প্রাচীনতম পুজোটি হয় আটচালায়। অন্যগুলি হল ‘আটচালাবাড়ি’, ‘বড়বাড়ি’, ‘মেজবাড়ি’, ‘মাঝের বাড়ি’, ‘বেনাকিবাড়ি’ ও ‘কালীকিঙ্করভবন’। এ ছাড়াও সার্বণ পরিবারের পুজো হয় ‘বিরাটি বাড়ি’ ও ‘নিমতা (পাঠানপুর) বাড়ি’তে। পুজো হয় দুর্গাভক্তিতরঙ্গিনী মতে। আটটি পরিবারেই প্রতিমা মঠচৌড়ি শৈলীর।

গোস্বামী ধাম (হাজরা রোড): পুজো শুরু হয়েছিল ঢাকায়। ১৯৫১ থেকে হাজরা রোডের বাড়িতে পুজো হচ্ছে। প্রতিমায় গৌড়ীয় দারুশিল্পের প্রভাব। কপালে আঁকা থাকে রসকলি (তিলক)। সিংহ ঘোটক আকৃতির। বৈষ্ণব মতে পুজো হয় তাই নিরামিষ ভোগ নিবেদন করা হয়। চালচিত্রের মাঝখানে থাকে শিব, তার দু’পাশে দশাবতারের পট।

গিরিশ ভবন (গিরিশ মুখার্জি রোড, ভবানীপুর): হুগলি জেলার ধামুয়া থেকে এই পরিবারের আদি পুরুষ হরচন্দ্র মুখোপাধ্যায় কলকাতায় এসেছিলেন। আনুমানিক ১৮২৩-এ পুজোর সূচনা হয়। প্রতিমাকে পরানো হয় সোনা-রুপোর গয়না, বেনারসি শাড়ি। পুজোয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এই পরিবারের ঐতিহ্য। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় হয় সঙ্গীতানুষ্ঠান। পরিবার সূত্রে জানা গেল, আগে প্রতি বছর উত্তমকুমার এখানে পুষ্পাঞ্জলি দিতে আসতেন।

মিত্রবাড়ি (পদ্মপুকুর রোড, ভবানীপুর): ১৮৯২-এ পুজো শুরু করেন অ্যাটর্নি সুবোধচন্দ্র মিত্র। এর আগে নীলগোপাল মিত্র লেনে মিত্র পরিবারের আদি বাড়িতে পুজোর সূচনা হয়েছিল। আপাতদৃষ্টিতে দেবী দ্বিভুজা। সামনের দু’টি বড় হাত দেখা যায়। বাকি আটটি হাত দেবীর চুলে ঢাকা থাকে। সিংহ, পৌরাণিক ঘোটক আকৃতির।

শিবকৃষ্ণ দাঁ-এর বাড়ির প্রতিমা। — নিজস্ব চিত্র

রানি রাসমণি বাড়ি (জানবাজার): রানি রাসমণির পুজো বলে পরিচিত হলেও পুজো শুরু করেছিলেন তাঁর শ্বশুর প্রীতরাম মাড় (দাস)। পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে শ্রীরামকৃষ্ণের নানা স্মৃতি। বংশ পরম্পরায় আহমেদপুর থেকে আসেন প্রতিমাশিল্পী। শোলার সাজ আসে বর্ধমান থেকে। প্রতিমার মুখ হাতে গড়া। পুরনো রীতি মেনে ঠাকুরদালানে বাড়ির মহিলারা প্রতিমার বাঁদিকে এবং পুরুষরা ডান দিকে দাঁড়ান। পুজোর বোধন হয় শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে। তিন দিন কুমারী পুজো হয়।

শিবকৃষ্ণ দাঁয়ের বাড়ি (বিবেকানন্দ রোড): পুজো শুরু হয় ১৮৪০ সালে। শোনা যায়, সে কালে শিবকৃষ্ণ দাঁ প্যারিস এবং জার্মানি থেকে প্রতিমার জন্য বহুমূল্য ফরমায়েশি গয়না আনাতেন। রুপোর ছাতা ধরে নবপত্রিকার গঙ্গাস্নান হয়। বাড়ির ভিতরটি ইউরোপীয় অপেরা হাউজের ব্যালকনির মতো। ডাকের সাজের পাশাপাশি দেবীকে সোনা-রুপোর গয়না পরানো হয়।

চোরবাগান চট্টোপাধ্যায় বাড়ি (মুক্তারামবাবু স্ট্রিট): আদি পুরুষ রামচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরেই পরিবারের সমৃদ্ধির সূচনা। ১৮৬০ নাগাদ তিনি পুজো শুরু করেন। প্রতিমাকে পরানো হয় বেনারসি শাড়ি আর সোনার অলঙ্কার। অস্ত্র রুপোর। পুজোর ভোগ রাঁধেন বাড়ির ছেলেরা। ভোগে থাকে নানা ধরনের পদ।

বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ি (বালি): ফোর্ট উইলিয়াম কোর্ট অ্যান্ড জুডিকেচারের আইনজীবী জগৎচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় এই পুজো শুরু করেন। পুজোর ভার এখন জগৎবাবুর নাতি, অকৃতদার দুই ভাই আইনজীবী অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর ভাই দেবমাল্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাঁধে। বাড়ির পাশেই গঙ্গা। তবু সপ্তমীতে কলা-বউকে স্নান করানো হয় ঠাকুরদালানেই বাড়িতে সংগ্রহ করে রাখা বিভিন্ন নদীর জলে। প্রতিমার সাজ সোনার। ভোগ নিরামিষ। কাঁধে চেপে বিসর্জনে যান দুর্গা। সপ্তমী থেকে নবমী হয় পংক্তিভোজন। শুরুতে ভোগ এবং শেষে মিষ্টি পরিবেশন করেন বাড়ির মহিলারাই। এ বছর ১৫০ বছর পূর্তিতে থাকছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতাপাঠ, যাত্রার আয়োজন।

মুখোপাধ্যায় বাড়ি (রাজাবাজার): ১৭২২ সালে হরিনাথ মুখোপাধ্যায়ের হাতে শুরু। এখন দায়িত্বে ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায়। চণ্ডীমণ্ডপেই প্রতিমা গড়া হয়। প্রতিপদে শুরু পুজোর। ষষ্ঠী পর্যন্ত নিরামিষ, সপ্তমী থেকে নবমী আমিষ এবং দশমীতে পান্তাভাতের ভোগ। আমিষ পদে ইলিশ, চিংড়ি—দুইই থাকে। এ ছাড়াও থাকে শুক্তো, ডাল, খিচুড়ি, পোলাও। এই পরিবারের প্রতিমার রং দুধে-আলতা।

চোরবাগান শীল বাড়ি: ১৮৫৬ সালে রামচাঁদ শীলের হাতে শুরু। বৈষ্ণব মতে পুজো হয়। ভোগে থাকে লুচি, ফল, মিষ্টি। অষ্টমীর সকালে ধুনো পোড়ান বাড়ির মহিলারা। অষ্টমীর দুপুরে হয় গাভী পুজো। নবমীতে কুমারী পুজোর পাশাপাশি সধবা পুজোও হয়। সন্ধিপুজোয় বলির বদলে ধ্যান করেন পরিবারের সদস্যরা। ষষ্ঠী থেকে নবমী নিরামিষ। শুক্তোয় পাটপাতা দেওয়া হয়, থাকে পানিফল ও পাঁপড়ের ডালনা। আগে কাঁধে চেপে বিসর্জন হলেও এখন ট্রলিতে নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিমা।

চক্রবর্তী বাড়ি (রহড়া): ঢাকার বিক্রমপুর কুকুটিয়া গ্রামের বাড়িতে পুজো শুরু করেছিলেন কমলাকান্ত চক্রবর্তী। দেশভাগের পরে পরিবার এ পারে চলে এসে পুজো শুরু করে। রীতি মেনে বাড়ির চণ্ডীমণ্ডপেই প্রতিমা গড়া হয়। অষ্টমীর দিনে কুমারীপুজো এবং রাতে কালীপুজো হয়। দশমীতে জমাটি ধুনুচি নাচের পরে বিসর্জন হয় বাড়ির পুকুরেই।

Durga puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy