Advertisement
১০ জুন ২০২৪

জলাধারে পড়ে দুই শিশুর মৃত্যু, ধৃত বাড়ির মালিক

দুই খুদে বন্ধু। শনিবার সকালেও বাড়ির কাছে খেলছিল ওরা। আর খেলতে গিয়েই বাঁশদ্রোণীতে বাড়ির কাছে একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির পিছনে জলাধারে ডুবে মৃত্যু হল দুই শিশুর।

দুর্ঘটনার পরে সেই জলাধারের মুখ ঢেকে দিচ্ছে পুলিশ। শনিবার, বাঁশদ্রোণীতে। — নিজস্ব চিত্র

দুর্ঘটনার পরে সেই জলাধারের মুখ ঢেকে দিচ্ছে পুলিশ। শনিবার, বাঁশদ্রোণীতে। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৫৩
Share: Save:

দুই খুদে বন্ধু। শনিবার সকালেও বাড়ির কাছে খেলছিল ওরা। আর খেলতে গিয়েই বাঁশদ্রোণীতে বাড়ির কাছে একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির পিছনে জলাধারে ডুবে মৃত্যু হল দুই শিশুর।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম অঙ্কিত ঘোষ (৭) এবং শুভ দুয়ারি (৫)। বাঁশদ্রোণীর ঘোষপাড়ার অঙ্কিত স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণি এবং শুভ নার্সারির ছাত্র।

যে নির্মীয়মাণ বাড়িটির জলাধারে ডুবে এই দুর্ঘটনা, তার মালিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতের নাম অভিজিৎ পাত্র বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পেশায় পরিচারিকা দেবিকা দুয়ারি শনিবার বেলা পৌনে একটা নাগাদ কাজ থেকে বাড়ি ফিরে ছেলে শুভকে দেখতে না পেয়ে পাড়ায় খোঁজাখুঁজি শুরু করে দেন। শুভর খোঁজে অন্য প্রতিবেশীরাও এগিয়ে আসেন। শুভদের বাড়ির কাছে ওই নির্মীয়মাণ দোতলা বাড়ির সামনে বাচ্চাদের খেলার সাইকেল দেখতে পেয়ে বুক কেঁপে ওঠে প্রতিবেশীদের।

প্রতিবেশী অমিতাভ বিজলি এ দিন জানান, বাচ্চাদের সাইকেল দেখতে পেয়ে সন্দেহ হয়। খোঁজাখুঁজি শুরু করার পরে নির্মীয়মাণ বাড়ির পিছনের জলাধারে এক বাচ্চার দেহ ভেসে থাকতে দেখা যায়। সঙ্গে ভাসছিল দু’জোড়া ছোট চপ্পলও। অমিতাভবাবুর চিৎকারে জলাধারের কাছে ছুটে আসেন অন্যেরাও। ৮০ বর্গফুট জুড়ে ওই জলাধারটির গভীরতা প্রায় ৬ ফুট। অমিতাভবাবু ছাড়াও আরও দুই প্রতিবেশী বিশ্বজিৎ বাগ এবং সোমনাথ ঘোষ ওই জলাধারে নেমে পড়েন। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে সোমনাথবাবু এ দিন বলেন, ‘‘প্রথমে অঙ্কিতকে জলে ভেসে থাকতে দেখা যায়। পরে জলাধারে নামার পর নীচ থেকে শুভ উদ্ধারা হয়।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা দুই শিশুকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শুভ দুয়ারি ও অঙ্কিত ঘোষ

শনিবারের ঘটনার পরে নির্মীয়মাণ বাড়ির মালিকের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বাঁশদ্রোণীর ঘোষপাড়ার বাসিন্দারা। বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন অঙ্কিতের মা কৃষ্ণা ঘোষ ও শুভর মা দেবিকা দুয়ারি। দেবিকাদেবীর কথায়, ‘‘এই এলাকায় দীর্ঘদিন রয়েছি। নির্মীয়মাণ বাড়ির পিছনে এ রকম বড় জলাধার রয়েছে, তা জানতামই না। মালিকের কাণ্ডজ্ঞানহীনতার জন্য এটা ঘটল।’’

‘‘সকাল এগারোটা পর্যন্ত ভাইয়ের সঙ্গে খেলছিলাম। তারপর ও বলল, পাশের বাড়িতে অঙ্কিতের কাছে যাবে। বারণ করেছিলাম, শুনল না।’’ বলেই অঝোরে কেঁদে ফেলে শুভর দিদি সাত বছরের বকুল। বছর দুয়েক আগে বাঁশদ্রোণীর ঘোষপাড়ায় ভাড়া বাড়িতে উঠে এসেছেন দেবিকাদেবী। স্বামী ছেড়ে চলে গিয়েছেন। পরিচারিকার কাজ করে মেয়ে বকুলকে ঠাকুরপুকুরের একটি স্কুলের হস্টেলে রেখে পড়াশোনার খরচ চালান। শনিবার বিকেলে দেবিকাদেবী বলেন, ‘‘ওকে আমি বারবার বলতাম, বাড়ির বাইরে যাস না। বাইরে যাওয়ার জন্যই এই হাল হল!’’

শুভদের পাশেই অঙ্কিতদের বাড়ি। অঙ্কিতের বাবা অজিতবাবুর গাড়ির ব্যবসা রয়েছে। শোকস্তব্ধ এই পরিবারের সঙ্গে এ দিন কথা বলা সম্ভব হয়নি। বিশাল জলাধারটি কেন এ ভাবে খোলা ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘জলাধারের ঢাকনা থাকলে বিপদ এড়ানো যেত।’’ স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত দু’বছর ধরে বাড়িটি তৈরি হচ্ছে। বাড়ির মালিক হাওড়ার রামরাজাতলার বাসিন্দা।

স্থানীয় সিপিএম কাউন্সিলর চয়ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মশা ঠেকাতে আগেই পুরসভার তরফে নির্মীয়মাণ বাড়ি লাগোয়া জলাধার নির্মাণে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছিল। সে কথা তো শোনা হয়ইনি, এখন এত বড় দুর্ঘটনা।’’

ডিসি (এসএসডি) বাদনা বরুণ চন্দ্র ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত চলছে। নির্মীয়মাণ বাড়ির মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হচ্ছে।’’ এ দিন সন্ধ্যায় মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও মৃত দুই শিশুর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death children
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE